সুন্দরবনে আগুনের প্রকোপ কমছে, ভোগাচ্ছে পানির সংকট
Published: 24th, March 2025 GMT
নতুন করে সুন্দরবনের ধানসাগর এলাকায় লাগা আগুন কিছুটা কমেছে। গতকাল রোববার রাত থেকে মরা ভোলা নদী থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অগ্নিকাণ্ডের ওই এলাকায় পানি ছিটানো শুরু করে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যাওয়া পানি দেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হচ্ছে।
গতকাল সকালে ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন শনাক্ত করে বন বিভাগ। এর পর থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ভিটিআরটি, সিপিজি, টাইগার টিমের লোকদের নিয়ে সেখানে ফায়ারলাইন তৈরির কাজ শুরু করে বন বিভাগ। তবে দুর্গম ওই এলাকায় আগুনের অত্যধিক তাপ, বাতাস, ধোঁয়া ও দ্রুত ছড়ানোর কারণে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
বিকেলের আগে ফায়ার সার্ভিসও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। সন্ধ্যার আগে মরা ভোলা নদীতে পাম্প বসিয়ে পানির পাইপ টানতে শুরু করেন বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাত সাড়ে ৮টার পর সেখানে পানি দেওয়া শুরু হলেও ভাটার কারণে ব্যাহত হয়। পরে মধ্যরাত থেকে জোয়ারে আবার পানি দেওয়া শুরু হয়।
বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুর্গম ওই বনে টর্চের আলো জ্বেলে রাতে কাজ করেছেন। পানি দেওয়ার পাশাপাশি লাঠি ও মাটি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। আজ সোমবার সকালেও বিক্ষিপ্তভাবে ওই এলাকায় আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু বক্কর জামান বলেন, ‘আগের থেকে আগুনের প্রকোপ এখন কম। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, তবে পানি সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না। রাতের বেলায় এই দুর্গম বনে কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং। আবার ভাটার সময় নদীতে পানি থাকে না। তাই সব সময় পানি দেওয়া যাচ্ছে না। সকালে এখন জোয়ার থাকায় পানি ছিটানো হচ্ছে। রাতে জোয়ার যতক্ষণ ছিল, আমরা পানি দিতে পেরেছি। পানি দেওয়ার ফলেই আগুনের প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। এখানে মাটির ওপর শুকনা পাতা, মরা ডালপালার একটি স্তর। একটা সময় যখন ভাটা হয়ে যায়, তখন পানি দিতে পারি না, তখনই দেখা যাচ্ছে আর কোথাও থেকে ধোঁয়া, আগুন বের হচ্ছে। এ জন্য এখনই বলা যাচ্ছে না কতক্ষণে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, ‘রাত থেকেই আগুন লাগা এলাকায় পানি দেওয়া শুরু হয়েছে। বন বিভাগ গতকালও সারা রাত কাজ করে আগের স্থানের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গত রাতে বন বিভাগ ছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ছিল। এখানে আগের চেয়ে পানি পেতে বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। ভাটার সময় নদী শুকিয়ে যায়। ফলে পানি দেওয়াও বেশ চ্যালেঞ্জিং। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
এর আগে গত শনিবার ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী এলাকার টেপর বিল এলাকায় আগুন লাগে। গতকাল সকালে সেখানকার আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আসে। শনিবার রাতে নিরাপত্তাঝুঁকির কারণে ফায়ার সার্ভিস না থাকলেও দুর্গম বনে পাইপ টেনে সরাসরি পানি ছিটায় বন বিভাগ। গতকাল দুপুরে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস আনুষ্ঠানিকভাবে ওই এলাকার আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে বলে জানায়।
বনসংলগ্ন, সোনাতলা, ধানসাগর, গুলিশাখালী গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, আসছে বর্ষায় মাছ ধরার জন্য বন পরিষ্কার করতে সুন্দরবনের ওই বিল এলাকাগুলোয় আগুন লাগানো হচ্ছে। বনের ওই এলাকাগুলো কিছুটা উঁচু। বর্ষা ছাড়া জোয়ারে পানি ওঠে না। শুকিয়ে যাওয়া ভোলা নদী ও আগের খননের কারণে পাড় উঁচু হয়ে থাকায় বর্ষায় ওই এলাকাগুলোতে বেশ পানি জমা হয়। এ সময় সেখানে অবৈধভাবে মাছ শিকার করে স্থানীয় কিছু চক্র। কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরতেই প্রতিবছর বনে আগুন দেয় তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন বন ব ভ গ দ র গম ক জ কর গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী
অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়। ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়।
আরো পড়ুন:
কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির
অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প
বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।
বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ