কয়েক দিন পরই ঈদুল ফিতর। এ সময়ে আগে দম ফেলানোর ফুরসত থাকত না কারখানা মালিক ও কারিগরদের। হাজারো শ্রমিক, ক্রেতা ও বিক্রেতায় মুখর বড়াল পারের এ পল্লিতে এখন সুনসান নীরবতা। প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবতে বসেছে চারঘাটের ঐতিহ্যবাহী কালুহাটি পাদুকাপল্লি। 
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত পাদুকাপল্লিতে পর্যায়ক্রমে ৮২টি কারখানা গড়ে ওঠে। বর্তমানে চালু আছে মাত্র ১১টি কারখানা। ১০ হাজার শ্রমিক যুক্ত ছিলেন এ পেশায়। যার মধ্যে ২ হাজার নারী। ঈদের মৌসুমে ৬০-৬৫ কোটি টাকার জুতা-স্যান্ডেল বিক্রি হতো। বিভিন্ন জেলা থেকে এসে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যেতেন। কালুহাটি পল্লির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল দেশজুড়ে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর পাদুকাপল্লির আলো ফিকে হতে শুরু করে। বিভিন্ন কোম্পানির মেশিনে তৈরি জুতা-স্যান্ডেল বাজারে নিয়ে আসেন। এতে কালুহাটির হাতে তৈরি জুতা-স্যান্ডেলের চাহিদা কমতে থাকে। প্রতিযোগিতায় টিকতে মালিকরা ছোটখাটো মেশিন কিনতে ঋণের আবেদন করেন। এ সুযোগে প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন ইউপি সদস্য জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন ও তাঁর ভাগিনা সোহেল রানা কোনো কারখানার না থাকলেও পাদুকা সমবায় সমিতি গঠন করেন।
প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে কারখানা মালিকদের নামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তাতে দুই মামা-ভাগিনার পকেট ভারী হলেও মালিকদের কোনো উপকারে আসেনি। করোনাকালে সমিতির নামে বিভিন্ন সুবিধা এনে নিজেরা ভোগ করেছেন। করোনাকালে ৬০-৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা নেমে আসে ১৫-২০ কোটিতে।
পাদুকাশিল্প বাঁচাতে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০২৩ সালে ৬৩ লাখ টাকায় ১৩টি অত্যাধুনিক মেশিনসহ দেশের প্রথম পাদুকা কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) স্থাপন করে। প্রকৃত কারখানা মালিকদের না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও তাঁর ভাগিনাকে সিএফসি স্থাপনের জমি নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়। কামাল হোসেন কালুহাটি বাজারে বিএনপির সমর্থক মফিজ উদ্দিনের জমি দখল করে সিএফসি স্থাপনে এসএমই ফাউন্ডেশনকে চুক্তিবদ্ধ করে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার দাপটে সেখানে সিএফসি স্থাপন করা হয়। সিএফসিকে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার শুরু করেন কামাল হোসেন।
এদিকে ভুয়া কারখানা দেখিয়ে কামাল হোসেন ও সোহেল রানা নামে-বেনামে এসএমই ফাউন্ডেশন ও সমবায় থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেনি। তাদের কারণে প্রকৃত কারখানা মালিকরা সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করেও পাঁচ বছরে ঋণ সহায়তা পাননি। পুঁজির অভাবে কারখানা বন্ধের উপক্রম হয়। গত জুন মাসে বিসিক কর্তৃপক্ষ পাদুকাপল্লি পরিদর্শন করে প্রতিটি কারখানাকে পাঁচ লাখ টাকা হারে ঋণের অনুমোদন দেয়। আগস্ট মাসে সেই ঋণ ছাড় করার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ আগস্টের সেই ঋণও বন্ধ হয়ে যায়। শাহরিয়ার আলম, যুবলীগ নেতা কামাল হোসেন ও সোহেল রানা আত্মগোপনে চলে যান। সিএফসি দখলে নেন মফিজ উদ্দিন ও তাঁর ছেলে শাহ আলম। বিএনপি সমর্থকরা সিএফসির সেন্টারের ভেতরেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বর্তমানে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। 
মণ্ডল শুজ কারখানার মালিক জাকারিয়া হোসেন বলেন, ছয় মাস বন্ধ রাখার পর ঈদকে কেন্দ্র করে কারখানা চালু করেছি। আগে রোজার এক মাসে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসা করতাম। কিন্তু এ বছর পাঁচ লাখ টাকার ব্যবসাও হবে না। বাইরের জেলার ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
স্মার্ট শুজ কারখানার মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা পরিশোধ করেও নতুন ঋণ পাচ্ছি না। সিএফসিও বন্ধ রয়েছে। হাত দিয়ে আধুনিক জুতা তৈরি সম্ভব নয়। তাই কারখানাও বন্ধ রেখেছি। আমার মতো অনেকেই কারখানা চালু করতে পারেননি। 
পাদুকা কারিগর আবদুল মতিন বলেন, কাজ নেই। বাধ্য হয়ে সকালে দিনমজুর হিসেবে ও বিকেলে কারখানায় টুকটাক কাজ করছি। বেকারমুক্ত গ্রামটিতে এখন অসখ্য বেকার।
জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন বলেন, নিজের জমিতে সিএফসি স্থাপন করেছি। অন্যের জমি দখলের অভিযোগ মিথ্যা। অন্যান্য বিষয় সমাধানের জন্য একাধিকবার বসতে চেয়েছি, কোনো পক্ষই রাজি হয়নি।
কালুহাটি পাদুকাশিল্প সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, আমি কোনো অনিয়ম করিনি। বরং সরকার পতনের পর আমার কারখানার মালপত্র লুট হয়েছে। সিএফসি স্থাপনের সময় ব্যক্তিগত যে টাকা খরচ করেছি, সে টাকাও সমিতি এখনও ফেরত দেয়নি। এলাকায়ও যেতে পারছি না।
এসএমই ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ক্লাস্টার উন্নয়ন) আবু মঞ্জুর সাঈফ বলেন, সমিতির সভাপতি-সম্পাদক কারোরই কারখানা ছিল না। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে সমিতি গঠন করেছিলেন। এ জন্য সিএফসিকে তারা কখনোই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ব যবস বন ধ র য বল গ সমব য় স এফস

এছাড়াও পড়ুন:

পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (২৬ থেকে ৩০ অক্টোবর) সূচকের পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশ কমেছে  ১১ হাজার ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা।

শনিবার (১ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৭.৬৭ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১২২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ১০.৩৪ পয়েন্ট বা ০.৫২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৮৭ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫.৯২ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮২ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ৩৩.৭২ পয়েন্ট বা ৩.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৯৭৬ পয়েন্টে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি ৩ লাখ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ৭৯৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৩৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ১৪৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৯২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭৭টির, দর কমেছে ১৭৯টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। তবে লেনদেন হয়নি ২১টির।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৭.৩৩ পয়েন্ট বা ০.৮৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ০.৫৯ শতাংশ কমে ১২ হাজার ৬৫১ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ০.৭৭ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৮১৩ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ০.৯৮ শতাংশ কমে ৮৯৮ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ২.৮০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৯৪৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৩ হাজার ৯১৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৫ হাজার ২১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন বেড়েছে ৩০ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩০৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টির, দর কমেছে ১৭০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির শেয়ার ও ইউনিট দর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ১১ হাজার ১০ কোটি টাকা