সুন্দরবনে নৌকায় ৫০ কেজি হরিণের মাংস ফেলে পালালেন শিকারিরা
Published: 27th, March 2025 GMT
সুন্দরবন থেকে হরিণ শিকার করে মাংস কেটে নৌকার পাটাতনে বিছিয়ে রেখেছিল শিকারির দল। জেলের ছদ্মবেশে নৌকা নিয়ে ফিরছিলেন লোকালয়ে। এ সময় বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা হাজির হলে নৌকায় মাংস ফেলে খালের মধ্যে লাফিয়ে সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান শিকারিরা।
পরে নৌকার পাটাতনের নিচ থেকে ৫০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করেন বনরক্ষীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সুন্দরবনের মায়ের খাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
দুপুরে সুন্দরবন-সংলগ্ন কয়রা উপজেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গিয়ে দেখা যায়, জব্দ করা হরিণের মাংস আদালতে আনা হয়েছে। আদালত ভবনের কাছাকাছি গর্ত খুঁড়ছেন এক ব্যক্তি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন বনকর্মী। তাঁরা জানান, আদালতের নির্দেশে হরিণের মাংস মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে।
বন বিভাগের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ সকালে তিনি কয়েকজন বনরক্ষী নিয়ে টহল দিতে ট্রলার নিয়ে বনে যান। আড়পাঙ্গাসিয়া নদী পেরিয়ে মায়ের খাল ধরে একটু আগাতেই একটি জেলেনৌকা দেখতে পান। দুজন নৌকায় বইঠা বাইছিলেন। তাঁদের নৌকার কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই তাঁরা নৌকা ফেলে খাল সাঁতরে গহিন বনে পালিয়ে যান। ঘন জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় পিছু নিয়েও কাউকে আটক করা যায়নি।
আনোয়ার হোসেন বলেন, পালিয়ে যাওয়া শিকারিদের শনাক্ত করা গেছে। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোরা গ্রামে। পরিত্যক্ত নৌকা তল্লাশি করে ৫০ কেজি হরিণের মাংস এবং মাছ ধরতে আসা জেলে হিসেবে বন বিভাগের অনুমতিপত্র পেয়েছেন।
সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে যাঁরা হরিণ শিকার করেন, তাঁরা ফাঁদ বহন করেন না। জেলের ছদ্মবেশে মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে যান। বনের ভেতর বসে সেই দড়ি দিয়ে হরিণ ধরার ফাঁদ তৈরি করেন। তারপর হরিণের যাতায়াতের পথে ফাঁদ পেতে রাখেন। চলাচলের সময় প্রাণীগুলো সেই ফাঁদে আটকা পড়ে। পরে বনের ভেতরে মাংস কেটে লোকালয়ে এনে বিক্রি করা হয়। শিকার শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ফাঁদগুলো বস্তায় ভরে জঙ্গলের ভেতর মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখা হয়। সময়-সুযোগ পেলেই তাঁরা আবার শিকারে আসেন।
বন বিভাগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরিণ শিকারের জন্য সুন্দরবন অঞ্চলের ৩০টির মতো ছোট-বড় চক্র আছে। হরিণের মাংস, চামড়া ও শিং পাচারকারী এসব চক্রে জড়িত শতাধিক ব্যক্তি। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ৭৫৭ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ৩৬টি। আসামি করা হয়েছে ৮৪ জনকে। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫১৪ কেজি ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫২৩ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করা হয়েছিল।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। সুন্দরবনে আগের তুলনায় বন্য প্রাণী শিকার কমে এসেছে। হরিণের মাংস জব্দের ঘটনা আজ কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হবে। হরিণ নিধনে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল