‘বিশ্বশান্তির জন্য’ গ্রিনল্যান্ড দখল করা প্রয়োজন, বললেন ট্রাম্প
Published: 29th, March 2025 GMT
গ্রিনল্যান্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ্যে আনলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেছেন, ‘বিশ্বশান্তির’ জন্য গ্রিনল্যান্ড দখল করা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ‘এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের শান্তির বিষয় নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তার প্রশ্ন।’ খবর আলজাজিরার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা শুধু নিজেদের কথা ভাবছি না, আমরা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার কথা বলছি। যদি যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব না নেয়, তবে চীন ও রাশিয়া সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। তাই গ্রিনল্যান্ডের মতো কৌশলগত অঞ্চল আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রয়োজন।’
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, তার স্ত্রী এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একদিনের সফরে গ্রিনল্যান্ডের মার্কিন সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেন। সেখানে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করেন।
ভ্যান্স বলেন, ‘আমি আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমাদের নেতৃত্ব না থাকলে চীন ও রাশিয়া সেই শূন্যস্থান পূরণ করবে।’
ভ্যান্স আরও বলেন, ‘আমরা গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সমালোচনা করছি না। তারা অসাধারণ মানুষ এবং তাদের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, ডেনমার্কের নেতৃত্ব গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেনি। এটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নীতি হলো, এই পরিবর্তন নিশ্চিত করা।’
এই সফরে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ, জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস রাইট এবং ভ্যান্সের স্ত্রী উষা ভ্যান্সও উপস্থিত ছিলেন। সফরের অংশ হিসেবে তারা মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং আর্কটিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
ট্রাম্প প্রশাসন আগেও গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছিল। ২০২৫ সালের শুরুর দিকে এই বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং তারা কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে পারে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান