ময়মনসিংহ কারাগারে ঈদের তিন জামাত, বন্দিদের জন্য উন্নত খাবার
Published: 31st, March 2025 GMT
প্রতিবছরের ন্যায় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে তিনটি ঈদের জামাত সম্পন্ন হয়েছে। কারাবন্দিদের জন্য সকাল ৯টায় এবং কারারক্ষীদের জন্য সকাল আটটায় পরপর ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত নিয়মিত খাবারের সঙ্গে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে সব বন্দিদের জন্য স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঈদের দিনে। এছাড়াও ঈদে বাড়তি আনন্দ দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
ঈদের দিন দুপুরে সমকালের সঙ্গে কথা হয় ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো.
সারা বছর একজন বন্দি সরকারি খাবার হিসেবে সকালে হালুয়া, রুটি ও ডিম পেয়ে থাকেন। দুপুরে বরাদ্দ থাকে ভাত, ডাল ও সবজি। আর রাতের খাবার হিসেবে থাকে ভাত, ডাল, মাছ অথবা মাংস।
আর ঈদের দিনে বন্দীরা সকালে পেয়েছেন পায়েস, সেমাই ও মুড়ি। দুপুরের মেনুতে ছিল পোলাও, মুরগির রোস্ট, গরু অথবা খাসির মাংস, সালাদ, কোমল পানীয়, মিষ্টি ও পান। রাতের মেনুতে থাকছে ভাত, আলুর দম, মাছ ভাজি ও সবজি।
ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে কারাবন্দিদের বিনোদনের জন্য আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন ও তার পরের দিন কারাবন্দিরা স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে পাঁচ মিনিট বেশি কথা বলতে পারবেন টেলিফোনে। এতে হাসি ফুটেছে সব বন্দীদের মুখে।
সিনিয়র জেল সুপার জানান, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে কোনও ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দি নেই। সব বন্দিদের জন্য ঈদের দিন সমান সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কারাবন্দিরা এদিন বাসা থেকে রান্না করে আনা খাবার খেতে পারেন।
৫ আগস্ট সরকার পতনের পর অনেক আওয়ামী লীগ নেতাদের ঠাঁই হয় দেশের বিভিন্ন কারাগারে। বর্তমানে তাদের একমাত্র ভরসা পরিবারের ওপর।
আওয়ামী লীগের এক কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা দেশে নানান জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমার ভাইয়েরা কারাগারে আছেন। এখন কেউ কারাগারে তাদের খোঁজ নেয় না, আমরা ফোন দিলেও ধরে না। অথচ তারা বিদেশে বসে রাজকীয় ঈদ উদযাপন করে সেলফি দিচ্ছেন।
এদিকে কারাগারের বন্দিদের মতোই সারাজীবন কারাগারেই ঈদ করতে হয় কারারক্ষীদের। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. আব্দুল কাদির বলেন, কারাগারেই আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি। বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লাগে না। চাকরিতে যোগদানের পরে কোনও ঈদই বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে করা হয়নি। বাড়িতে গেলে হয়তো ১৫-২০ জন মানুষের সঙ্গে দেখা হয়। কিন্তু কারাগারে হাজারো বন্দিদের সঙ্গে মিলেমিশে আমরা ঈদ করি। বেশিরভাগ বন্দিই এখানে অসচ্ছল। ঈদের দিনে তাদের সবাইকে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করে যে তৃপ্তি পাই, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
সিনিয়র জেল সুপার মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, কারাগারের বন্দিরাও সমাজের অংশ, তাদের জন্য ঈদের আনন্দ নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। কারারক্ষী এবং কারাবন্দি কেউ যেহেতু ঈদে বাড়ি যেতে পারে না সেটা বিবেচনা করে আমরা সবাই মিলে একটা পরিবারের মত ঈদ উদযাপন করি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক র বন দ ঈদ র দ ন বন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব অনুষ্ঠিত
সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হলো ওরাঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘কারাম পূজা’। নাচ-গান, ঢাক-ঢোরের বাদ্য আর বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসব ঘিরে মুখরিত হয়ে ওঠে সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রাম।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে দেখা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের জেলা শাখার আয়োজনে পালিত হয় এই উৎসব। প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আদিকাল থেকেই ওরাঁওরা উপবাস থেকে শুরু করে কারাম বৃক্ষের ডাল পুঁতে পূজা-অর্চনা করে আসছেন। পূজা শেষে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোররা ঢাক-ঢোলের তালে নেচে-গেয়ে মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস, ভাদ্র মাসের শেষ দিন ও আশ্বিনের প্রথম দিনে পালিত কারাম পূজা বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, ভালো ফসল উৎপাদন ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে।
ভাদ্র মাসের শেষ রাত ও আশ্বিনের শুরুতে কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য ওরাঁও নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রথম দিন উপোস থাকেন। উপোসের মধ্য দিয়েই পূজা শুরু করেন ওরাঁও নারীরা।
পরদিন সন্ধ্যায় মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল সংগ্রহ করেন তারা। পরে একটি পূজার বেদি নির্মাণ করে সূর্য পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি বেদিতে রোপণ করা হয়। এরপর ঢাক-ঢোলের তালে হাত-পা দুলিয়ে নেচে-গেয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন আদিবাসীরা। নাচ, গান আর গল্প বলার মধ্য দিয়ে জমে ওঠে উৎসবের আসর।
রঙিন পোশাকে সারিবদ্ধ হয়ে নৃত্য পরিবেশন করেন নারী-পুরুষ। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পদচারণায় কারাম উৎসব রূপ নেয় মিলনমেলায়। শুধু ওরাঁওরা নন, হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও যোগ দেন এই উৎসবে।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কষাধ্যক্ষ বনি কেরকেটা বলেন, “বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, ভালো ফসল আর সুখ-সমৃদ্ধির আশায় আমরা প্রতিবছর এই পূজা পালন করি।”
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, “কারাম উৎসব ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের অন্যতম উদাহরণ। সরকারি সহযোগিতা পেলে এটি আরো বড় আয়োজনে পালিত হতে পারে।”
উৎসব উপভোগ করতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ। ঢাক-ঢোলের শব্দ আর নাচ-গানে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা জানান, প্রতিবছরই এই আয়োজনে আসতে তাদের ভালো লাগে।
তিন দিনব্যাপী এই উৎসবের শুরু হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। পূজা-অর্চনা শেষে ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে কারাম বৃক্ষের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়েই সমাপ্ত হবে এবারের কারাম পূজা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, “ওরাঁও সম্প্রদায়ের এই সংস্কৃতি যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক, এজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।”
শুধু ধর্মীয় আচার নয়, কারাম উৎসব হয়ে উঠেছে সুখ-শান্তি কামনার পাশাপাশি সম্প্রীতি আর সহাবস্থানের প্রতীক। এই ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে যেমন তাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচয় করায়, তেমনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মেলবন্ধন ঘটায়।
এসময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মো. খাইরুল ইসলাম। এছাড়াও সালন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে ইলাহি মুকুট চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী, ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হিমেল/এস