রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর ও মীরহাজিরবাগে ছিনতাইকারীদের ছুরি ও চাপাতির আঘাতে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এক জন প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাসায় ফিরে গেছেন।

আহতরা হলেন—সেন্টমার্টিন সি ভিউ ট্রাভেল এজেন্সির সুপারভাইজার মোহাম্মদ ইমন (২১), ফুডপান্ডার ডেলিভারি ম্যান মানিক মিয়া (১৮) এবং সিএনজি অটোরিকশার চালক পান্নু মাতুব্বর (৪০)। ঢামেক পুলিশ ক‍্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বুধবার (২ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যাত্রাবাড়ীর সায়দাবাদ রেল ক্রসিংয়ের সামনে চার-পাঁচ জন ছিনতাইকারী মোহাম্মদ ইমনকে আক্রমণ করে। তাদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন ইমন। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ইমনকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

ইমনের বন্ধু নাঈম হোসেন বলেন, বুধবার ভোরে মতিঝিলের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ড যাওয়ার পথে সাদাবাদ রেল ক্রসিংয়ের সামনে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন ইমন। তাকে ছুরিকাঘাত করে ব্যাগে থাকা ১০ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। আমরা খবর পেয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। ইমনের কোমরের নিচে ও ডান উরুতে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। ইমনের বাড়ি বরিশাল জেলার কাউনিয়া থানার কাউনিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নয়ন মিয়া।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের ৪০ ফিট এলাকায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন মানিক মিয়া (১৮)। তাকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

মানিকের দুলাভাই মো.

সুমন বলেন, আমার শ্যালক মানিক ফুডপান্ডায় ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করে। রাতে সে ডেলিভারির কাজে মোহাম্মদপুর এলাকায় আসার পথে তিন-চার জন ছিনতাইকারী তার পথ রোধ করে। তারা ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করলে মানিক বাধা দেয়। ছিনতাইকারীরা মানিকের বুক, পিঠ ও উরুতে ছুরিকাঘাত করে ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমরা খবর পেয়ে মানিককে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। মানিকের বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানা এলাকায়। তার বাবার নাম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মীরহাজিরবাগের ইঞ্জিনিয়ার গলির সামনে ছিনতাইকারীর চাপাতির আঘাতে আহত হন পান্নু মাতুব্বর (৪০)। তাকে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।

পান্নু মাতুব্বরের ভাতিজি রুমা আক্তার বলেন, আমার চাচা মঙ্গলবার রাতে সিএনজি অটোরিকশা গ‍্যারেজে রেখে বাসায় ফেরার পথে মীরহাজিরবাগের ইঞ্জিনিয়ার গলির সামনে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। আমার চাচাকে চাপাতি দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। তিনি রাস্তার ওপর পড়ে থাকলে স্থানীয়রা আমাদেরকে খবর দেন। আমরা চাচাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। ছিনতাইকারীরা মাথা, বুক ও পিঠে কুপিয়ে তার কাছে থাকা ২৮ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। 

পান্নু মাতুব্বরের মেয়ে বীথি আক্তার বলেন, আজ আমার আব্বাকে বাসায় নিয়ে এসেছি। তার অবস্থা এখনো ভালো নয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমাদের বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাসের বিল গ্যারেজের মালিকের কাছে জমা ছিল। সেই টাকা বাসায় নিয়ে আসার পথে বাবা ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন।

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ত ব বর ম হ ম মদ র স মন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ