সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরদার আখতার মেঙ্গলের বিরুদ্ধে আক্রমণ চলছে। তিনি বেলুচিস্তান ন্যাশনালিস্ট পার্টির (বিএনপি) প্রধান। শান্তিপূর্ণ পথে বেলুচ সমস্যার সমাধান চান। এই আক্রমণ যদি ক্ষমতাসীনদের চিন্তার প্রতিফলন হয়, তাহলে তা খুবই হতাশাজনক। এই আক্রমণ সাধারণত এমন অ্যাকাউন্ট থেকে আসছে, যেগুলোকে পাকিস্তানের হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়।

এসব আক্রমণের ভাষা ও ভঙ্গি প্রমাণ করে যে তারা কী বলবে, তা নিয়ে যেন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। আখতার মেঙ্গলের প্রতিবাদ ও আন্দোলন বাস্তবে কী পরিবর্তন আনতে পারে, তা নিয়ে তাঁরা মোটেই সচেতন নন।

কয়েক মাস ধরে মেঙ্গল গভীর হতাশায় আছেন। রাষ্ট্র বেলুচ জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার অস্বীকার করছে। এর ফলে বেলুচিস্তানের তরুণেরা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।

মেঙ্গল বহুবার সতর্ক করেছেন—যদি সঠিক পথে ফেরা না হয়, তাহলে পরিস্থিতি রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তাঁর মতো নেতারাও তখন কিছু করতে পারবেন না। অথচ এখনো তিনি শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে বেলুচ জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়১৪ মার্চ ২০২৫

সম্প্রতি সরদার মেঙ্গল বলেন, হয়তো পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যে তাঁর পক্ষে এখন আর কিছুই করা সম্ভব নয়। বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটির নেতারা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সময় গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে আছেন ডা.

মেহরাং বেলুচ ও সাম্মি দীন বেলুচ। একজনকে কোয়েটা থেকে, আরেকজনকে করাচি থেকে আটক করা হয়।
এরপর বিএনপি নেতা আখতার মেঙ্গল প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দেন। এটা স্পষ্ট যে এই বেলুচ জাতীয়তাবাদী নেতা আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দেখছেন। অবশ্যই একে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন বলে মানতে হবে।

প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকার বেলুচ ইয়াকজেহতি কমিটিকে (বিওয়াইসি) সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে করে। তারা মনে করে, এই কমিটি বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) মতো গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল। বিএলএর প্রতি শুধু নিরাপত্তা বাহিনী নয়, নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপরও হামলার অভিযোগ আছে।

বিএলএর এই সহিংসতার পেছনে একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তারা নিরীহ শ্রমিক ও ভ্রমণকারীদের হত্যা করছে, বিশেষ করে পাঞ্জাব থেকে আসা মানুষকে। এর মাধ্যমে তারা চায় রাষ্ট্র আরও কঠোর ব্যবস্থা নিক। কারণ, তারা বিশ্বাস করে যে যত বেশি দমন-পীড়ন হবে, তত বেশি অসন্তুষ্ট তরুণ তাঁদের দলে যোগ দেবেন।

যেভাবে চীন উইঘুরদের মোকাবিলা করেছে জিনজিয়াংয়ে অথবা শ্রীলঙ্কা যেভাবে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলা করেছে, সেই মডেলগুলো পুনরায় প্রয়োগ করার আলোচনা শোনা যাচ্ছে সম্প্রতি। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এই দুই জায়গা থেকে একেবারেই আলাদা। চ্যালেঞ্জগুলোও অনেক বেশি কঠিন। মানচিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়।

পাঞ্জাবে এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমে যেভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরই লাভ হয়েছে। সাংবাদিক ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলছে। এটি দুই পক্ষের বিভেদকে এমন এক স্তরে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আর মীমাংসার সুযোগ থাকছে না।

বিএলএর জাফর এক্সপ্রেস দখল করে যাত্রীদের জিম্মি করাও এই কৌশলেরই অংশ ছিল। সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বড় ধরনের হামলাকে গুরুত্ব দেয়। এই রকম হামলা তাদের ভাবমূর্তি গড়ে তোলে এবং নতুন সদস্য সংগ্রহে সাহায্য করে।

রাষ্ট্রের তখন আর কোনো পথ খোলা থাকে না। তারা কঠোর মনোভাব গ্রহণ করে। সরকার ঘোষণা করে সন্ত্রাস ও বিদ্রোহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো রাষ্ট্রই সশস্ত্র বিদ্রোহীদের প্রতি দুর্বলতা দেখাতে পারে না। তাহলে তাদের নিজের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে।

গুড ফ্রাইডে চুক্তিতে দেখা যায় যে আয়ারল্যান্ডের বিদ্রোহী সংগঠন ইআরএ এবং যুক্তরাজ্য সরকারের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের পর কঠোর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এরপর সংলাপ হয়। শান্তিচুক্তি ও সন্ত্রাসীদের নিরস্ত্রীকরণ সম্পন্ন হয়। যখন শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় নিরস্ত্রীকরণ হয়, তখন সশস্ত্র সংগ্রামকারীরা রাজনীতিতে চলে আসেন। যুক্তরাজ্য ও উত্তর আয়ারল্যান্ড একমাত্র উদাহরণ নয়। স্পেনের ইটিএ সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ করে এখন বাস্ক অধিকার নিয়ে পার্লামেন্টে কথা বলে।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বাংলাদেশ হচ্ছে?৩১ মার্চ ২০২৫

অন্যদিকে শুধুই কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। তাই দরকার আলোচনার আর প্রয়োজন মধ্যস্থতাকারী। বেলুচ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের মধ্যে যাঁরা মূলধারা রাজনীতিতে ছিলেন এবং সাংবিধানিক পরিসরে শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম করেছেন, তাঁরা এমন একটি ভূমিকা পালন করতে পারেন। এমন নেতাদের মধ্যে আছেন যেমন আখতার মেঙ্গাল ও ড. আবদুল মালিক বালোচ।
এই পটভূমিতে রাষ্ট্র ও তার প্রতিনিধিরা আখতার মেঙ্গলের কর্মকাণ্ডের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। কারণ, তিনি শান্তির জন্য একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে সাহায্য করতে পারেন।

পাকিস্তান এখন মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে। প্রত্যেক নাগরিক ও সৈনিকের রক্ত অমূল্য। যা কিছু এই রক্তপাত কমাতে সাহায্য করবে, তাই দেশের স্বার্থে বলে বিবেচনা করতে হবে। এখন রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে তারা কোন দিক নিতে চায়। শক্তির ব্যবহার কেবল রক্তপাতের এক কানাগলির মধ্যে ঘুরিয়ে মারবে। যদি রাষ্ট্র মনে করে যে শক্তির ব্যবহার অব্যাহত রাখলে সংঘাত ধীরে ধীরে থেমে যাবে, তবে তারা সেই পথ নিতে পারে।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি কারা, তাদের জন্ম কীভাবে?১৬ মার্চ ২০২৫

অথবা রাষ্ট্র শক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য বিকল্পও অনুসন্ধান করতে পারে। সশস্ত্র সংগ্রাম ও একে দমনের পরিবর্তে উভয় পক্ষের আপস এলেও অনেক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হবে। তবে এর জন্য তিনটি শর্ত পূর্ণ করতে হবে।

প্রথমত, ‘গুম’ হওয়ার বিষয়টি, দ্বিতীয়ত, কিছু বড় অভিযোগের সমাধান এবং সেই সঙ্গে, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার সত্যিকারের প্রয়াস। যখন মানুষ বঞ্চিত বোধ করছে, তখন মধ্যস্থতাকারীদের শাসন কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না।

যেভাবে চীন উইঘুরদের মোকাবিলা করেছে জিনজিয়াংয়ে অথবা শ্রীলঙ্কা যেভাবে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবিলা করেছে, সেই মডেলগুলো পুনরায় প্রয়োগ করার আলোচনা শোনা যাচ্ছে সম্প্রতি। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এই দুই জায়গা থেকে একেবারেই আলাদা। চ্যালেঞ্জগুলোও অনেক বেশি কঠিন। মানচিত্র দেখলেই তা বোঝা যায়।

আব্বাস নাসির দ্য ডনের সাবেক সম্পাদক

দ্য ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আখত র ম ঙ গ সশস ত র স ব যবস থ র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ  দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।

চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।

স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।

এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।

মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।

নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”

এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।

মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”

আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”

ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।

তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।

রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।

মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়? 

সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।

এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ