ট্রাম্পের ‘মুক্তির দিন’ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপন্ন করবে
Published: 4th, April 2025 GMT
এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘মুক্তির দিন’ হতে পারে, যেটা হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে। আসলে কী হবে, সেটা আমরা দেখতেই পাব।
তারা এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা বলুক কিংবা বৈশ্বিক বাণিজ্যব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্নকরণের প্রচেষ্টা বলুক না কেন, ট্রাম্পের শুল্ক বাজেভাবে ভেঙে পড়া একটি অর্থনৈতিক মডেলকে রূপান্তরের প্রচেষ্টা। আর এটি এমন কিছু, যা বিশ্বে আমাদের সবাইকে প্রভাবিত করবে।
ট্রাম্পের ঘোষণা ছিল কতকগুলো বাজে বিভ্রান্তিকর কথা দিয়ে পূর্ণ। অপমানজনক শব্দে ভরা। বাকি বিশ্ব লুট করেছে, ধর্ষণ করেছে, চুরি করেছে এবং আমেরিকাকে লুটেপুটে শেষ করে দিয়েছে। এই বক্তব্য যদি আমেরিকার অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আসত, তাহলে সেটা হতো অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কিন্তু ট্রাম্প এমন একজন প্রেসিডেন্ট, যাঁর কোনো মান-অপমানের বোধ নেই। তিনি বাকি বিশ্বের ওপর শুল্ক আরোপ করলেন। সবার জন্য দরজা বন্ধ করে দিলেন।
জানুয়ারি মাসে ট্রাম্প তাঁর অভিষেক ভাষণে বলেছিলেন, ‘অন্য দেশগুলোকে সমৃদ্ধ করার জন্য আমাদের নাগরিকদের ওপর কর বসানোর পরিবর্তে আমরা আমাদের নাগরিকদের সমৃদ্ধ করার জন্য বিদেশি দেশগুলোর ওপর শুল্ক ও কর বসাব।’ ট্রাম্পের নতুন শুল্ক সেই কথাগুলোকে বাস্তব করে তুলল।
এমনকি ট্রাম্পের বিরোধীদের কাছেও, এই শুল্ক এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে উপস্থিত হবে যে ট্রাম্পের এজেন্ডায় আমেরিকান শ্রমজীবীরা আছেন। কোভিড-উত্তর অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে পরাজিত করতে জো বাইডেন বড় আকারের কর আরোপ, ধার করে ব্যয় করার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। সেখানে ট্রাম্প একই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য শুল্ক আরোপ করলেন।
একটা জল্পনা চালু হয়েছিল যে ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার বিষয়টি নিছক একটা কৌশল মাত্র, শিগগিরই তিনি এটা প্রত্যাহার করে নেবেন অথবা সমন্বয় করে নেবেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, এটা অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। ট্রাম্পের কাছে শুল্ক দর–কষাকষি বা আলাপ-আলোচনার কৌশল নয়, এটি একটি নতুন রাজস্ব ঢেউ এবং তাঁর ‘যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করো’ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।
ট্রাম্পের ঘোষণার আগে বাজার ও সরকারগুলো বিচলিত ছিল। তাঁর ঘোষণার পরেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অব্যাহতভাবে ‘শান্ত বাস্তববাদী’ পদক্ষেপের পক্ষে ওকালতি করে আসছিলেন। কিন্তু ট্রাম্পের আচরণ পুরোপুরি বিপরীত। আমরা পছন্দ করি আর না–ই করি, আমরা এখন একটা বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে পড়ে গেছি। বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির নেতা হিসেবে ট্রাম্প কিন্তু এটাকে পছন্দ করছেন, কারণ তিনি ভাবেন যে এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জিতবে।
যুক্তরাষ্ট্রে করের বোঝা কমানো হলো, ব্রিটেনে মিতব্যয়ী নীতি নেওয়া হলো, ফ্রান্সে অবসরকালীন ভাতা কাঁটছাট করা হলো। এই পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত তথাকথিত জনতুষ্টিবাদী প্রতিক্রিয়া উসকে দিল। যেমন ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলেন, যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট হলো, ফ্রান্সে হলুদ জ্যাকেট আন্দোলন হলো। কিন্তু এই সংকট কোনো দেশ সমাধান করে ওঠার আগেই কোভিড মহামারি এসে উপস্থিত হলো। চারদিকে মন্দা সৃষ্টি হলো, শেয়ারবাজারের পতন হলো, মূল্যস্ফীতি বাড়ল।যাহোক, যখন গাড়ির চাকা রাস্তা স্পর্শ করতে শুরু করবে, তখন ব্যাপারটি এতটা সৌম্য না–ও দেখাতে পারে। অনিবার্যভাবে এখনকার উত্তেজনাটা থিতিয়ে যাবে, সেটা জনগণের মধ্যে অথবা বাজারে। ব্যাপারটা ঘটবে যখন অবধারিতভাবে ভোক্তাদের ওপর মূল্যবৃদ্ধির চাপটা গিয়ে পড়বে, যখন মূল্যস্ফীতি এবং ব্যবসার খরচ বাড়তে শুরু করবে, যখন প্রকৃত মজুরি স্থির হয়ে থাকবে অথবা বিনিয়োগে স্থবিরতা আসবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ট্রাম্প-মন্দার অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়বে।
ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে যে ধরনের পরিকল্পনা করেছেন, অর্থনীতিতে তার বাস্তব প্রভাব পড়তে সময় লাগবে। এটা সত্য যে এই শুল্কগুলো খুব শিগগির নেওয়া শুরু হতে পারে এবং এর পাল্টায় অন্য দেশগুলো প্রতিশোধমূলক শুল্ক দ্রুত আরোপ করতে পারে।
আমরা একটু ভিন্নভাবে ব্যাপারটাকে দেখার চেষ্টা করি। এটাও প্রতীয়মান হচ্ছে যে ট্রাম্প বাস্তবতার চেয়েও বেশি যৌক্তিক কাজ করছেন। কেননা, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মডেলটা ভেঙে গেছে। তিনি বৈশ্বিক মন্দার মতো বাস্তব বিষয় থেকে উদ্ভূত সংকটে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন। ২০০৮-০৯–এর ব্যাংক খাতের সংকট এবং ২০২০ সালের কোভিড মহামারির সম্মিলিত প্রভাব থেকে জন্ম নেওয়া সংকট মোকাবিলা করছেন। এটা কোনো গুজব কিংবা কল্পিত বিষয় ছিল না। ব্যাপারটি শুধু ছিল না, ব্যাপারটা এখনো আছে। এটা শুধু যুক্তরাষ্ট্রই অনুভব করেছে এমনটা নয়, ইউরোপ, ব্রিটেনসহ বাকি বিশ্ব এই অনুভব করেছে।
আরও পড়ুনট্রাম্পের প্রতিশোধমূলক শুল্ক থেকে বাংলাদেশ যেভাবে লাভবান হতে পারে১০ ঘণ্টা আগেআজকের অর্থনীতির যে বোঝা, তার সাধারণ মূলটা হলো উপচে পড়া ঋণ ও দেনা। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতের বিপর্যয়ের কারণ ছিল এটা। কোয়ান্টিটিভ ইজিয়িং (এমন একটা মুদ্রানীতি যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনের জন্য মুক্তবাজারের নিরাপত্তা কেনে) নীতি প্রয়োগ করে বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয় করে প্রাথমিকভাবে এই বিপর্যয় ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বিপর্যয়ের আগেই সেই অর্থটা উৎপাদন বা পণ্যের চেয়েও ঋণের ওপর দাঁড়িয়েছিল।
ফলে এমন সব পদক্ষেপ নেওয়া হতে থাকল, যেটা স্বাভাবিক সময়ে কল্পনা করাটাও অসম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রে করের বোঝা কমানো হলো, ব্রিটেনে মিতব্যয়ী নীতি নেওয়া হলো, ফ্রান্সে অবসরকালীন ভাতা কাঁটছাট করা হলো। এই পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত তথাকথিত জনতুষ্টিবাদী প্রতিক্রিয়া উসকে দিল। যেমন ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলেন, যুক্তরাজ্যে ব্রেক্সিট হলো, ফ্রান্সে হলুদ জ্যাকেট আন্দোলন হলো। কিন্তু এই সংকট কোনো দেশ সমাধান করে ওঠার আগেই কোভিড মহামারি এসে উপস্থিত হলো। চারদিকে মন্দা সৃষ্টি হলো, শেয়ারবাজারের পতন হলো, মূল্যস্ফীতি বাড়ল।
ক্রমাগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া শুল্কের রূপ নিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রেই এটা কাজ করবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। এই শুল্ক মন্দা ডেকে আনতে পারে। ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, ব্রিটেনসহ এবং অন্যত্রও করনীতি ও ব্যয়নীতির মধ্যে দ্বিধা তৈরি হতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে দিতে পারে। ট্রাম্প যখন মুক্তির কথা বলছেন, জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎ৴স তখন ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বাধীনতার’ কথা বলছেন।
মার্টিন কেটল, দ্য গার্ডিয়ান–এর কলাম লেখক
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদক ষ প র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা