বন্দর নগরীতে ৫৪ বছরেও নেই বিশেষায়িত হাসপাতাল
Published: 6th, April 2025 GMT
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বার্ন ইউনিট নির্মাণের দাবিতে রাস্তায় নেমে একাধিকবার বিক্ষোভ করেন নগরবাসী। তবে অর্থ সংকটসহ নানা জটিলতায় এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ। বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতাল স্থাপনে প্রকল্প অনুমোদন হলেও ভূমি জটিলতায় বছরের পর বছর সেটিও আটকা। শুধু বার্ন ইউনিট কিংবা শিশু হাসপাতালই নয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই নগরীতে গড়ে ওঠেনি বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল।
এই অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের ‘সবেধন নীলমণি’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল! সদর হাসপাতাল থাকলেও সেখানকার চিকিৎসাসেবা বেশ নাজুক। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থাও করুণ। এখানে জ্বর-সর্দি ছাড়া অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ নেই। এমন বাস্তবতায় জটিল রোগীকে চিকিৎসার জন্য এখনও ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে একদিকে যেমন মানুষের চিকৎসা খরচ বাড়ছে, তেমনি রোগীর স্বজনকে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। এ পটভূমিতে আজ সোমবার নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।
স্বাধীনতার এত বছর পরও চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতে এমন ভঙ্গুর অবস্থার পেছনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকদের দুষছেন অনেকেই। এ জন্য কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রীয় কাঠামোও দায়ী বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামে রয়েছে দেশের বেশির ভাগ ভারী শিল্প। জাহাজভাঙা, পোশাক কারখানা, কেমিক্যাল ডিপোর সংখ্যাও অনেক। আছে সমুদ্রবন্দর। ছোট-বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামে জনসংখ্যাও বেড়েছে বহু গুণ। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও। তবে বাড়ছে না চিকিৎসার সহজলভ্যতা। বৃহত্তর চট্টগ্রামের পোড়া রোগীদের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শয্যা আছে মাত্র ২৬টি। অথচ শয্যার বিপরীতে এখানে প্রতিদিন কয়েক গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এখানে একটু বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীর চিকিৎসা, আইসিইউ ও ইনফেকশন কন্ট্রোলের কোনো ব্যবস্থাও নেই। যে কারণে বেশি পোড়া রোগীকে ঢাকায় পাঠাতে হয়।
ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরও একই হাল। কয়েক বছর ধরে এই অঞ্চলে স্তন, জরায়ুমুখ, ফুসফুস, মুখগহ্বর, গলাসহ কয়েকটি ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও এখানে চিকিৎসার সুযোগ নেই। চমেক হাসপাতালে পুরুষ ও নারী রোগীর জন্য শয্যা রয়েছে মাত্র ৩০টি। ক্যান্সার শনাক্তে নেই প্যাট-সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা। রোগ শনাক্তে নেই মলিকুলার ল্যাবও। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, মলিকুলার ল্যাবের মাধ্যমে যে ফল পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতেই নির্দিষ্ট থেরাপি দিতে হয় রোগীকে। সংকট রয়েছে চিকিৎসক-নার্সেরও।
চমেক হাসপাতালের কিডনি ওয়ার্ডও এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। ডায়ালাইসিস মেশিনের চেয়ে এখানে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ। পর্যাপ্ত মেশিনের অভাবে নির্দিষ্ট সময়ে ডায়ালাইসিস পরীক্ষা করাতে না পেরে অনেকের জীবন পড়ে হুমকিতে।
এখনও বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় এই অঞ্চলে শিশু স্বাস্থ্যসেবার অবস্থাও নাজুক। ১৫ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটিতে নেই এনআইসিইউ ব্যবস্থা। বেসরকারিভাবে শহরের কিছু হাসপাতালে এই সেবা চালু হলেও শুধু এনআইসিইউ শয্যা বাবদ এক দিনে ভাড়া গুনতে হয় ২০ হাজার টাকার বেশি।
এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি ডা.
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পার্থকের বাস্তব চিত্র বৈষম্যের বড় প্রমাণ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অনেকে মুখে চট্টগ্রামকে দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তিও বলেন। অথচ এখানকার স্বাস্থ্যসেবার মান এখনও রুগ্ণ। স্বাস্থ্য খাতের এমন ভঙ্গুর অবস্থার দায়ভার বিগত সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা এড়াতে পারেন না।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘চট্টগ্রামে বড় কোনো বিস্ফোরণ বা আগুনজনিত দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। সে কারণে একটু বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকে নিয়ে ছুটতে হয় ঢাকায়। আর যাদের ঢাকায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তারা চিকিৎসার অভাবেই মারা যান।’
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘পুরো অঞ্চলের কয়েক লাখ রোগীকে চমেক হাসপাতালের ওপরই নির্ভর করতে হয়। এ কারণে হাসপাতালের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র ন ইউন ট র অবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর
জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।
আরো পড়ুন:
মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ
মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।
১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।
কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।
পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল