নেত্রকোনার মদনের বাইনবিল। এ জলমহালের পানি দিয়ে আশপাশের প্রায় ৩০ একর বোরো ধানের ক্ষেতে সেচ দেন কৃষক। কিন্তু মাছ ধরার জন্য বিলের পানি সেচযন্ত্র দিয়ে শুকিয়ে ফেলছেন ইজারাদারসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে তারা লাভবান হলেও আশপাশের জমিতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ফসলহানির শঙ্কায় ভুগছেন অর্ধশত কৃষক। তাদের অভিযোগ, কৃষকরা প্রশাসনের কাছে ঘুরেও প্রতিকার পাননি। কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের মদন গ্রামের পাশে প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে বাইনবিল নামে জলমহালটির অবস্থান। সরকারিভাবে তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়েছে হাওর বাংলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। এর সভাপতি উলাদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলমহালটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির।
নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এ জলমহাল শুকিয়ে মাছ ধরার অভিযোগ পাওয়া গেছে ইজারাদার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় অন্তত ৩০ একর বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বারবার প্রশাসন ও পুলিশকে জানালেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
আজিম উদ্দিন ও সুলতানসহ স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের ভাষ্য, বাইনবিল যারা ইজারা নেন, তারা প্রতি বছরই শুকিয়ে মাছ ধরেন। এতে সেচের পানির ঘাটতি দেখা দেয়। খরার সময় তীব্র পানি সংকট দেখা দেয়। ফসল উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এ বছরও পানি শুকিয়ে ফেলায় বোরো জমিতে সেচ সংকট দেখা দিয়েছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯ অনুযায়ী, যেসব জলমহাল থেকে (নদী, হাওর, খাল ইত্যাদি) জমি সেচের সুযোগ রয়েছে, সেখান থেকে মৌসুমে সেচ দেওয়া বিঘ্নিত করা যাবে না। বাইনবিল জলমহালের ইজারাদাররা এ নীতিমালার কোনো তোয়াক্কা করেনি বলে অভিযোগ কৃষকের। সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, বাইনবিল প্রায় শুকিয়ে গেছে। দু-এক জায়গায় সামান্য পানি থাকলেও তা সেচ দেওয়ার উপযোগী নয়।
গত ৯ মার্চ মদন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির বাইনবিল শুকিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সেচযন্ত্র চালু করে বলে অভিযোগ কৃষক রহিছ উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মদন থানার ওসিকে জানিয়েছি। তাঁর পরামর্শে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এমনকি ইউএনওকে বিষয়টি জানালেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিল শুকিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পান আব্দুল কাদির। এতে বিল পারের জমি সেচ সংকটে পড়ছে, দেশীয় মাছের প্রজনন বৃদ্ধি হুমকিতে। আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সেচ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।’
পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির বলেন, ‘উলাদ মিয়ার কাছে চাঁদা দাবি করছিল রহিছ উদ্দিন। চাঁদা না পেয়ে তিনি এমন করছেন। বিলের পানি শুকিয়েছে কৃষক। আমার তো এখানে কোনো ভূমিকা নেই।’ ইজারাদার উলাদ মিয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় গাঢাকা দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বাইনবিলে সেচের বিষয়ে যতবার জানিয়েছে, ততবার পুলিশ পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছেন
মদন থানার ওসি নাঈম মুহাম্মদ নাহিদ হাসান।
তাঁর ভাষ্য, ‘আমি নিজেও একাধিকবার
গিয়েছি। তারপরও যদি পুলিশকে দোষ দেয়, কিছু বলার নেই।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত বলেন, বিষয়টি জানার পর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছিল। সেচ বন্ধ করাও হয়। বিষয়টি আদালতে যাওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইজ র দ র ব ইনব ল জলমহ ল র র জন ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫