জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে এক দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগামী ১৬ এপ্রিল সেফহোমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।  

অন্যদিকে ফজলে করিম অসুস্থ উল্লেখ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল কাইয়ুম লিটন ট্রাইব্যুনালে জামিন আবেদন করেন। সেই জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৭ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের এই মামলার আসামি যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ফিরোজকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে তাকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এদিন ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, এ মামলায় আরও অনেকের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে ৯ জন শহীদ এবং ৪৫৯ জন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজিরের নির্দেশ

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় সাভারের আশুলিয়ায় হত্যার পর ছয় জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় আরও সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তদন্ত সংস্থার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। তাঁরা হলেন ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো.

শাহিদুল ইসলাম, বরখাস্ত ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী ও ঢাকা উত্তর ডিবির সাবেক পরিদর্শক আরাফাত হোসেন। 

ট্রাইব্যুনালকে তাজুল ইসলাম বলেন, এই তিন আসামি অন্য মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার আছেন।

বিচার নিয়ে চিফ প্রসিকিউটর যা বললেন 

জুলাই আগস্টের সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হবে বলে উল্লেখ করেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। 

এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি যেটা বলেছেন (আইসিসিতে বিচার নিয়ে) সেটা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। উনার সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। তবে গণহত্যা বলেন বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বলেন, জুলাই আগস্টের এই মামলাগুলোর বিচার আমাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেই হবে। তবে আইসিসি যদি টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়, সেটা আমরা গ্রহণ করব।’

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার করতে বাংলাদেশ সক্ষম ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং ইচ্ছুক। বাংলাদেশের এই বিচার করার সামর্থ্য আছে। আর ঘটনা বাংলাদেশেই ঘটেছে। আসামিরা এ দেশেই বাস করেন বা আশপাশের দেশেই আছেন, সাক্ষীরাও এদেশের। সুতরাং এই বিচার এ দেশের আদালতেই হবে, এটাই স্বাভাবিক বিষয়। আইসিসিতে তখনই যেতে হয় যখন কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে সেই রাষ্ট্র সক্ষম না হয় কিংবা সেই রাষ্ট্র যদি এই বিচার করতে ইচ্ছুক না হয়। কিন্তু এই দুটোর একটিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই বাংলাদেশ আইসিসি’র সদস্য রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এই দেশের আদালতে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) হবে এটাই সিদ্ধান্ত।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই আগস ট ব চ র কর অপর ধ র ল ইসল ম আইস স

এছাড়াও পড়ুন:

কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর ইউক্রেন–যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সই

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর দেশ দুটি একটি চুক্তিতে সই করেছে। এর ফলে ওয়াশিংটন কিয়েভের মূল্যবান দুর্লভ খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকার পাবে ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে তার পুনর্গঠনে তহবিল জোগান দেবে।

গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এ চুক্তি সই হয়। এ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে জোর দরকষাকষি করে দুই দেশ। চুক্তি সই হওয়ার ব্যাপারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু অনিশ্চয়তা থাকলেও অবশেষে এটি সম্পন্ন হয়।

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।

চুক্তি সইয়ের ঘোষণা দিয়ে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন পুনর্গঠন বিনিয়োগ তহবিল’ প্রতিষ্ঠা রাশিয়ার প্রতি একটি বার্তা যে, ট্রাম্প প্রশাসন দীর্ঘমেয়াদে এক স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ ইউক্রেন গড়ার শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ চুক্তি একটি অগ্রগতি নির্দেশ করছে। গত মার্চে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এ সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল।

স্কট বেসেন্ট আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের জনগণের মধ্যে অংশীদারত্ব প্রতিষ্ঠার এ ভাবনা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের; যা একটি টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধ ইউক্রেনের প্রতি উভয় পক্ষের প্রতিশ্রুতিই প্রতিফলিত করে।’

‘স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না’, বলেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী।

ট্রাম্প প্রশাসন এ চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।

ইউক্রেনের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইউক্রেন পুনর্গঠন তহবিলে’ যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি বা সামরিক সহায়তার মাধ্যমে অবদান রাখবে এবং কিয়েভ তার প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে পাওয়া রাজস্বের ৫০ শতাংশ তহবিলে দেবে।

স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রাশিয়ার যুদ্ধচেষ্টায় অর্থ বা অন্যান্য সহায়তাদানকারী কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে ইউক্রেনের পুনর্গঠন থেকে উপকৃত হতে দেওয়া হবে না।স্কট বেসেন্ট, মার্কিন অর্থমন্ত্রী

মন্ত্রণালয় আরও জানায়, তহবিলের সম্পূর্ণ অর্থ প্রথম ১০ বছর শুধু ইউক্রেনে বিনিয়োগ করা হবে, এরপর ‘লাভ অংশীদারদের মধ্যে বণ্টন করা হতে পারে’। তহবিলে দুপক্ষের সমান সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। এ চুক্তি শুধু ভবিষ্যতের মার্কিন সামরিক সহায়তায় নজর দেব, অতীতের সহায়তা এতে অন্তর্ভুক্ত নয়।

ইউক্রেনের অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সিরিদেনকো বলেন, ‘আমরা শুধু বিনিয়োগই পেতে যাচ্ছি না; বরং এমন একটি কৌশলগত অংশীদারকেও পাচ্ছি, যারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনে সহায়তা করতে আমাদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল ভ্যাটিকান সিটিতে

সম্পর্কিত নিবন্ধ