সিলেটে ফুটেজ দেখে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলাকারীদের খুঁজছে পুলিশ, গ্রেপ্তার ১৮
Published: 8th, April 2025 GMT
সিলেট নগরের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের খুঁজছে পুলিশ। ফুটেজ দেখে পুলিশ এরই মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে। এ ছাড়া জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি কিংবা রাজনৈতিক দলের ইন্ধনে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, হামলাকারীরা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের মূল পরিচয় দুষ্কৃতকারী। হামলাকারীদের বেশির ভাগই সুযোগসন্ধানী ও ভবঘুরে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, তা–ও জানার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুনসিলেটে বিক্ষোভ থেকে আবাসিক হোটেলে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা৩ ঘণ্টা আগেএর আগে গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সিলেটে বের করা বিক্ষোভ মিছিল থেকে নগরের ১৩টি দোকান-রেস্তোরাঁ, সুপারশপ ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লুটপাটও চালানো হয়। সোমবার বিকেল চারটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এসব হামলা-লুটপাট চলে।
সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো.
এক হোটেলেই সাড়ে ৩ কোটি টাকা ক্ষতি
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ব্যক্তিকে উত্তেজিত করে কিছু ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে হামলার ঘটনা সাজান। ওই ব্যক্তিরা পৃথক কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে শাবল, হাতুড়িসহ দোকানপাট ভাঙচুরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে হামলায় যোগ দেন। তাঁদের অনেকের মুখে মাস্ক বা কাপড় পরা ছিল। কারও কারও মাথায় ছিল হেলমেট। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন উত্তেজিত সাধারণ মানুষও। এর বাইরে ভাঙচুর না চালালেও লুটপাটে যোগ দেন আরও বেশ কিছু ব্যক্তি।
ভাঙচুরের শিকার রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার প্রথম আলোকে জানান, হামলাকারীরা প্রথম দফায় ১১টায় এবং দ্বিতীয় দফায় সাড়ে ১২টার দিকে মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। পরে তৃতীয় দফায় বেলা আড়াইটার দিকে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ এসে ভাঙচুর চালান। হামলা-ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁরা লুটপাটও চালান। টানা বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তা চলে। ভাঙচুরে অন্তত ৪০–৫০ জন অংশ নেন। এসব ব্যক্তি হোটেলের ভেতরে ঢুকে শাবল, হাতুড়ি দিয়ে ভেতরের ইন্টেরিয়র, আসবাব, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিসি ক্যামেরাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র বিনষ্ট করে। অন্যদিকে বাইরে থেকে গুলতি দিয়ে ঢিল ছুড়ে ১৪ তলা ভবনের ৬ তলা পর্যন্ত বাইরের কাচের দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। হামলায় হোটেলের ১৫–২০ জন কর্মী আহতও হন। এ ছাড়া সব মিলিয়ে হোটেলের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
যোগাযোগ করলে রয়াল মার্ক হোটেলের চেয়ারম্যান ফয়সাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সিলেটি মানুষ, সিলেটের ব্যবসায়ী। তবু কেন আমাদের হোটেলে হামলা হলো? এটা পরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ইন্ধন রয়েছে। আমরা চাই, পুলিশ ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করুক।’
একটি সূত্র জানিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে রয়াল মার্ক হোটেলে হামলাকারীদের মধ্যে ১০–১২ জনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের কারও কারও রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে বলেও ওই সূত্রটি দাবি করেছে। তবে দোষীদের গ্রেপ্তার ও তদন্তের স্বার্থে কারও নামই আপাতত প্রকাশ করা হচ্ছে না।
পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকালে রয়াল মার্ক হোটেলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন সরকার বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ গতকাল ও আজ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে বিকেলে আদালতে পাঠিয়েছে। এ ছাড়া হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আরও কয়েকটি মামলার বিষয় প্রক্রিয়াধীন আছে বলে মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক বলেন, গ্রেপ্তার ১৮ জনের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অন্য অপরাধীদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে প্রতিটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনার একাধিক ভিডিও এবং স্থিরচিত্র পুলিশ সংগ্রহ করেছে বলে জানিয়েছে। মহানগর পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ভিডিও যাচাই-বাছাই করে দোষীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। অসংখ্য দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিতও করা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কারও নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
নিন্দা, ক্ষোভ
আজ দুপুরে ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা। পরিদর্শনকালে চেম্বারের সভাপতি খায়রুল হোসেন, প্রথম সহসভাপতি মো. ফেরদৌস আলম, কোষাধ্যক্ষ মো. জহির হোসেন, পরিচালক মাহবুবুর রহমান, মো. আবদুর রহমান রিপন, তোফায়েল আহমেদ লিমন, দিলওয়ার হোসেইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা নেতারা হামলার ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে হামলা ও লুটপাটকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। হামলাকারীদের শাস্তি না দিলে তারা ভবিষ্যতেও এমন ঘটনার মাধ্যমে সিলেটের সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করবে।
এ ছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি, জামায়াত, বাসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ভাঙচুরের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। এর বাইরে সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতি দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক র ব যবস ল টপ ট প রথম ব এনপ ঘটন র তদন ত ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’
নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫