মশা, জলাবদ্ধতা, মাদক, ছিনতাই, ফুটপাত-ড্রেনের বেহাল অবস্থা, খেলার মাঠের সংকট, দখল, ভাঙাচোরা রাস্তাসহ এমন কোনো সমস্যা নেই, যাতে ভুগছে না রাজধানীর উত্তরা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত এক গণশুনানিতে এ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তারা।

নাগরিকদের কথা শুনে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ইতোমধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। বাকি সমস্যাগুলোও ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পার্ক নিয়ে কেউ মাস্তানি করবেন না। কেউ রাস্তা বন্ধ রাখতে পারবেন না। কেউ অবৈধ দখল করলে আমাকে বলবেন, আমি ব্যবস্থা নেব।

গণশুনানির পাশাপাশি এদিন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে একটি ফরমও বিতরণ করা হয়, যেখানে নগরবাসীর সমস্যা ও সুপারিশ-প্রত্যাশার কথা লিখে জানানোর কথা বলা হয়েছিল। সেগুলো পর্যালোচনা করে গুরুত্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সুপারিশ বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রশাসক। 

শুনানিতে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা কাজী ফেরদৌস বলেন, এই সেক্টরটি চারদিক দিয়ে অরক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা বলে এই সেক্টরে কিছু নেই। খিদ্দির খালটি মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুম এলেই জলাবদ্ধতা হয়। নেই কোনো খেলার মাঠ ও কবরস্থান। 
৯ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সারা বছর এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এক দিনও মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। উন্নয়ন করতে গিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও খুব নাজুক। 

৯ নম্বর সেক্টরের আরেক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় আবাসিক বাড়িতে চলে গার্মেন্ট ব্যবসা। সেই গার্মেন্টের বর্জ্য ফেলা হয় সামনের ড্রেনে। ৭/ডি নম্বর রোডে লাইটপোস্ট আছে, কিন্তু বাতি নেই। পার্কগুলো বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে বাচ্চারা খেলতে করতে পারে না। স্কুলগুলোতেও খেলার মাঠ নেই। দিয়াবাড়ী যাওয়ার রাস্তার বড় অংশজুড়ে ড্রেনগুলো খোলা থাকায় প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। 

১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সুজন আহমেদ তালুকদার বলেন, বিনোদনের জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে ক্লাব ও স্কলাস্টিকা স্কুল। কোনো মসজিদ নেই। জসিম উদ্‌দীন অ্যাভিনিউয়ের বড় গাছগুলো ঝড় হলেই ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। হকার সমস্যা তো আছেই। 

উত্তরখানের এক বাসিন্দা বলেন, উত্তরখান-কসাইবাড়ি সড়কে অটো ভাড়া অনেক বেশি। সড়কে একটি বাতিও জ্বলে না। বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়ার কোনো লোক নেই। ৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মোস্তফা মাহমুদ রাজীব বলেন, ১৮ নম্বর রোডে অনেক কফিশপ আছে, যেগুলোতে মাদকের কারবার চলে। 
৪ নম্বর সেক্টরের আনিছুর রহমান বলেন, ড্রেনগুলো অচল। মশা বন্ধ করতে হলে ড্রেন সচল করতে হবে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ২০১৮ সাল থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ধরছে অথচ কোনো সেবা দিচ্ছে না। এই হোল্ডিং ট্যাক্স ২০২৪ সাল থেকে ধরলে ভালো হয়। কাঁচাবাজার সড়কটির কাজ এক বছর ধরে চলছে, কিন্তু শেষ হচ্ছে না। 
৬ নম্বর সেক্টরের মোহাম্মদ সোহেল বলেন, পানির সমস্যা ও যানজট প্রকট। প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত সড়কগুলো বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অবস্থা নাজুক। নিয়মিত এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে। পাবলিক টয়লেট নেই। বাড়ি মালিক সমিতিগুলো ইচ্ছামতো চাঁদা ও উৎসব ভাতা আদায় করছে। ৭ নম্বর সেক্টরের মাসুদ আহসান সজীব বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। 

এলাকাবাসীর কথা শেষে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ট্র্যাপার বসানো হয়েছে। ভালো ফল মিললে সারা ঢাকা শহরে এটা বাড়ানো হবে। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে অবৈধ দখল, হকার উচ্ছেদ শুরু হবে। অবৈধভাবে দখলকৃত জমি উদ্ধার করে বানানো হবে খেলার মাঠ বা পার্ক। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড এনস স ড এনস স সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় গোলের থ্রিলারে জমজমাট ড্র বার্সেলোনা-ইন্টারের

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল মানেই উত্তেজনার পারদ চড়া—আর বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান মিলে সেটিকে নিয়ে গেল অন্য উচ্চতায়। কাতালানদের ঘরের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে দর্শকরা উপভোগ করলেন এক দুর্দান্ত গোলবন্যার ম্যাচ। ম্যাচ শেষে ফল—৩-৩ গোলে ড্র।

মৌসুমের রেকর্ড ৫০ হাজার ৩১৪ দর্শকের সামনে ইউরোপীয় ফুটবলের এই মহারণে উভয় দলই তুলে ধরেছে আক্রমণাত্মক ফুটবল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে ১৯৯৯ সালের পর এটিই প্রথম ম্যাচ যেখানে ছয়টি গোল হয়েছে এবং শেষ হয়েছে ড্রয়ে।

ম্যাচ শুরু হতে না হতেই চমকে দেয় ইন্টার মিলান। ম্যাচের মাত্র প্রথম মিনিটেই ডেনজেল ডামফ্রিজের ব্যাকহিল গোল দলকে এগিয়ে দেন মার্কাস থুরাম। এরপর ২১ মিনিটে আবারও দিমারকোর কর্নার থেকে ফ্রান্সেসকো আকেরবির সহায়তায় শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাক্রোব্যাটিকে ব্যবধান বাড়ান ডামফ্রিজ।

তবে ঘুরে দাঁড়াতে দেরি করেনি বার্সা। দুই মিনিট পরই ইয়ামাল ডান দিক থেকে একক নৈপুণ্যে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান কমান। প্রথমার্ধ শেষের আগে পেদ্রির ফ্লিকে রাফিনিয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং তাতে ফেরান তোরেসের শটে গোল করে ২-২ সমতায় ফেরে স্বাগতিকরা।

দ্বিতীয়ার্ধে লাউতারো মার্টিনেজের ইনজুরির পর মাঠে নামেন মেহেদি তারেমি। ৬০ মিনিটে কর্নার থেকে হেড করে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ডামফ্রিজ। কিন্তু দ্রুতই গোল শোধ করে বার্সা—ছোট কর্নার থেকে রাফিনিয়ার শট লাগে পোস্টে, সেখান থেকে গোলরক্ষক সোমারের পিঠে লেগে ঢুকে পড়ে জালে—ফলাফল ৩-৩। ৭৫ মিনিটে হেনরিখ মিখিতারিয়ান গোল করে ইন্টারকে আবারও এগিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু ভিএআরের চোখে পড়ে সামান্য অফসাইড, বাতিল হয় সেই গোল।

এখন সবকিছু নির্ভর করছে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচের ওপর, যা হবে ৬ মে, মঙ্গলবার, ইন্টারের ঘরের মাঠ জিউসেপ্পে মিয়াজ্জায়। ওই ম্যাচেই জানা যাবে ফাইনালে কারা প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ও আর্সেনালের মধ্যকার বিজয়ীর মুখোমুখি হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ