মাদক সন্ত্রাস মশাসহ নানা যন্ত্রণায় জর্জরিত উত্তরাবাসী
Published: 9th, April 2025 GMT
মশা, জলাবদ্ধতা, মাদক, ছিনতাই, ফুটপাত-ড্রেনের বেহাল অবস্থা, খেলার মাঠের সংকট, দখল, ভাঙাচোরা রাস্তাসহ এমন কোনো সমস্যা নেই, যাতে ভুগছে না রাজধানীর উত্তরা ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার উত্তরা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) আয়োজিত এক গণশুনানিতে এ নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তারা।
নাগরিকদের কথা শুনে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, ইতোমধ্যে কিছু সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। বাকি সমস্যাগুলোও ধাপে ধাপে সমাধান করা হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পার্ক নিয়ে কেউ মাস্তানি করবেন না। কেউ রাস্তা বন্ধ রাখতে পারবেন না। কেউ অবৈধ দখল করলে আমাকে বলবেন, আমি ব্যবস্থা নেব।
গণশুনানির পাশাপাশি এদিন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে একটি ফরমও বিতরণ করা হয়, যেখানে নগরবাসীর সমস্যা ও সুপারিশ-প্রত্যাশার কথা লিখে জানানোর কথা বলা হয়েছিল। সেগুলো পর্যালোচনা করে গুরুত্ব অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে সুপারিশ বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রশাসক।
শুনানিতে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা কাজী ফেরদৌস বলেন, এই সেক্টরটি চারদিক দিয়ে অরক্ষিত। আইনশৃঙ্খলা বলে এই সেক্টরে কিছু নেই। খিদ্দির খালটি মশা উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুম এলেই জলাবদ্ধতা হয়। নেই কোনো খেলার মাঠ ও কবরস্থান।
৯ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান বলেন, সারা বছর এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এক দিনও মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। উন্নয়ন করতে গিয়ে গাছ কাটা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও খুব নাজুক।
৯ নম্বর সেক্টরের আরেক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় আবাসিক বাড়িতে চলে গার্মেন্ট ব্যবসা। সেই গার্মেন্টের বর্জ্য ফেলা হয় সামনের ড্রেনে। ৭/ডি নম্বর রোডে লাইটপোস্ট আছে, কিন্তু বাতি নেই। পার্কগুলো বাণিজ্যিক ব্যবহারের ফলে বাচ্চারা খেলতে করতে পারে না। স্কুলগুলোতেও খেলার মাঠ নেই। দিয়াবাড়ী যাওয়ার রাস্তার বড় অংশজুড়ে ড্রেনগুলো খোলা থাকায় প্রচণ্ড দুর্গন্ধ।
১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা সুজন আহমেদ তালুকদার বলেন, বিনোদনের জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে ক্লাব ও স্কলাস্টিকা স্কুল। কোনো মসজিদ নেই। জসিম উদ্দীন অ্যাভিনিউয়ের বড় গাছগুলো ঝড় হলেই ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। হকার সমস্যা তো আছেই।
উত্তরখানের এক বাসিন্দা বলেন, উত্তরখান-কসাইবাড়ি সড়কে অটো ভাড়া অনেক বেশি। সড়কে একটি বাতিও জ্বলে না। বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়ার কোনো লোক নেই। ৩ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা মোস্তফা মাহমুদ রাজীব বলেন, ১৮ নম্বর রোডে অনেক কফিশপ আছে, যেগুলোতে মাদকের কারবার চলে।
৪ নম্বর সেক্টরের আনিছুর রহমান বলেন, ড্রেনগুলো অচল। মশা বন্ধ করতে হলে ড্রেন সচল করতে হবে। ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসি ২০১৮ সাল থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স ধরছে অথচ কোনো সেবা দিচ্ছে না। এই হোল্ডিং ট্যাক্স ২০২৪ সাল থেকে ধরলে ভালো হয়। কাঁচাবাজার সড়কটির কাজ এক বছর ধরে চলছে, কিন্তু শেষ হচ্ছে না।
৬ নম্বর সেক্টরের মোহাম্মদ সোহেল বলেন, পানির সমস্যা ও যানজট প্রকট। প্রধান সড়কের সঙ্গে যুক্ত সড়কগুলো বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের অবস্থা নাজুক। নিয়মিত এলাকায় ছিনতাই হচ্ছে। পাবলিক টয়লেট নেই। বাড়ি মালিক সমিতিগুলো ইচ্ছামতো চাঁদা ও উৎসব ভাতা আদায় করছে। ৭ নম্বর সেক্টরের মাসুদ আহসান সজীব বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এলাকাবাসীর কথা শেষে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘ব্যাটারি রিকশা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ট্র্যাপার বসানো হয়েছে। ভালো ফল মিললে সারা ঢাকা শহরে এটা বাড়ানো হবে। আগামী ১৬ এপ্রিল থেকে অবৈধ দখল, হকার উচ্ছেদ শুরু হবে। অবৈধভাবে দখলকৃত জমি উদ্ধার করে বানানো হবে খেলার মাঠ বা পার্ক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এনস স ড এনস স সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।