মাগুরায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে জেলা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়কসহ ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের কাছে থেকে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি মাদক পাওয়া গেছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে মাগুরা পৌরসভার পারলা এলাকায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়।

আটক হওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন মাগুরা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি ফরিদ হাসান খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রেজা, শহরের হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা নূহু দারুল হুদা, ভায়না এলাকার কাজী আরিফুল হক, আবালপুর গ্রামের আবদুল জলিল, শ্রীপুর উপজেলার বাখেরা গ্রামের আইনুল হোসাইন, শাহীন শেখ, পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইলিয়াছ খান ও ঢাকার আদাবর এলাকার সৈয়দ খায়রুল আলম।

মাগুরা সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, পৌরসভার পারলা এলাকায় অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছেন। গতকাল রাতে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১টি চায়নিজ পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ২টি একনলা বন্দুক, ৪টি গুলি, ১টি এয়ার গান, এয়ারগানের ২৬৪টি গুলি, ২টি চায়নিজ কুড়াল, ৬টি চাপাতি, ২ বোতল মদ, ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ও ১১টি মুঠোফোন ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা হয়।

তবে এ অভিযানকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করেছেন আটক হওয়া ফরিদ হাসান খানের ভাই জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান খান। তিনি আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাইসহ যাঁদের আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে মাগুরার বেশ কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদার রয়েছেন। তাঁরা আমাদের ব্যবসায়িক অংশীদার। অভিযানে যে টাকা উদ্ধার দেখানো হয়েছে, সেটা আমাদের ব্যবসায়িক টাকা। যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো ওখানে ছিল না। ওখানে আমাদের ১৬ একর জমির ওপর ফার্ম, যে দেশি অস্ত্রের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলো ওই ফার্মের পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত হয়। এমন ষড়যন্ত্রমূলক কাজের জন্য সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’

জানতে চাইলে মাগুরা সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর সাফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরিদ হাসান খানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বেশ কিছু অভিযোগ ছিল। ওই সব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে অস্ত্র, মাদকসহ তাঁর সহযোগীদের আটক করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।’

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

আইয়ুব আলী প্রথম আলোকে বলেন, সকালে আসামিদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘স্বৈরাচারের পতন হলেও ষড়যন্ত্রের অবসান হয়নি’
  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
  • কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা