নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ সময়ের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষে নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। সে জন্য দলটি নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণ করার সময়সীমা পেছানোর আবেদন করবে। এনসিপির প্রতিনিধিদল শিগগিরই এ ব্যাপারে ইসির কাছে যাবে।

এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। নিবন্ধনের শর্ত পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যালয় স্থাপন, দলীয় কমিটি ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন এই দল।

আরও পড়ুনঈদে ৪১ আসনে সক্রিয় ছিলেন এনসিপি নেতারা, কে কী করেছেন০৭ এপ্রিল ২০২৫

ইসি গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। আবেদনের শেষ তারিখ ২০ এপ্রিল।

কিন্তু ইসির গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। ১৮ মার্চ ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন। রিটকারী পক্ষের আইনজীবী আবেদা গুলরুখ সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, হাইকোর্ট গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করেছেন। তবে এ স্থগিতাদেশ শুধু রিট আবেদনকারীর (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এনসিপির যাত্রা শুরু করেছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। ইসিতে নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকা, অনূর্ধ্ব এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় জেলা অফিস এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্রমতে মেট্রোপলিটন থানায় অফিস (যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত হতে হবে) থাকতে হয়। পাশাপাশি দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিষয় উল্লেখ থাকতে হয়। তবে ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধনের এসব শর্ত এনসিপির পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসকে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী চান সারজিস, এনসিপির অবস্থান কী০৫ এপ্রিল ২০২৫

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন মনে করেন, তাঁদের দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেছে ইসি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের দলের ফোরামে কথা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে এনসিপির পদক্ষেপ কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

নিবন্ধনের প্রস্তুতিসংক্রান্ত কাজের জন্য এনসিপি একটি টিম গঠন করেছে বলে জানান দলের আরেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। এই টিম শিগগিরই ইসির সঙ্গে আলোচনায় যাবে বলে জানান তিনি।

এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, নিবন্ধনের আবেদন গ্রহণের তারিখ পেছানোর জন্য এনসিপির পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে।
দুই মাসের মধ্যে প্রস্তুতির লক্ষ্য

আরও পড়ুন৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এনসিপি: সারজিস আলম০৪ এপ্রিল ২০২৫

কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কার্যালয় স্থাপন, দলীয় কমিটি ও গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত করাসহ যাবতীয় প্রস্তুতি আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছে এনসিপি। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এ কথা জানিয়েছেন।

দলীয় কমিটি গঠনের জন্য শিগগিরই বিভাগীয় সমন্বয়ক টিম গঠন করা হবে বলে প্রথম আলোকে জানান এনসিপির শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা। তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে দলীয় কমিটি মোটামুটি প্রস্তুত আছে। জেলাগুলো গোছাতে হবে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটি যে ধাঁচে করা হয়েছে, সেভাবে জেলা–উপজেলা কমিটিগুলো করা হবে উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে একটা অংশ, জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে একটা অংশ এবং এর বাইরে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে কমিটিগুলো করা হবে।

এ ছাড়া চলতি এপ্রিল মাসে এনসিপির যুব শাখা আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ মার্চ দলটির শ্রমিক শাখার সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুটি শাখার বাইরে নারী শাখাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী শাখা বা উইং গঠনের কাজ চলছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়েও একটি ফোরামের কথা ভাবা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঈদের পর সংস্কার নিয়ে আলোচনার চিন্তা এনসিপির৩১ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র প ন র জন য প রস ত ত

এছাড়াও পড়ুন:

জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।

এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কা‌দেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’

এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের

আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”

তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”

“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”

এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”

মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”

অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”

কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা