ওয়াকফ বিতর্কে গোটা ভারতের পাশাপাশি অশান্তির আগুন ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যবাসীকে প্ররোচনায় পা না দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ সব ধর্মাবলম্বী মানুষদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘দিদি আপনাদের প্রপার্টি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না। আমাকে গুলি করলেও আমি একতার পক্ষে, কেউ আমায় ঐক্য থেকে সরাতে পারবে না।”

বুধবার (৯ এপ্রিল) কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জৈন সম্প্রদায়ের মহাবীর জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভাষণে সকলকে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, ‘দিদি’ আছে আপনাদের সঙ্গে। দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের প্রপার্টি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।’’ 

সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের প্রতিবাদের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই গোটা ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও চলমান ছিল আন্দোলন বিক্ষোভ। এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরসহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়, সেজন্য রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি থানা এলাকাজুড়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা (পুরনো ১৪৪ ধারা) জারি রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। 

আরো পড়ুন:

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতজুড়ে ঈদ উদযাপন

নাগপুর দাঙ্গা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা

এরপরেই রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বুধবার ওয়াকফ সম্পত্তি ইস্যুতে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার জন্য মহানবীর জয়ন্তীর মঞ্চে মমতা বলেন , “আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে কিছু বলতে চাই। আমি জানি, ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে আপনারা আঘাত পেয়েছেন, কিন্তু আমার ওপর ভরসা রাখুন—বাংলায় এমন কিছু হবে না যা ভাগ করে শাসন করার পথ খুলে দেয়। এই বার্তা ছড়িয়ে দিন যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বাঁচতে হবে… দিদি আছে, দিদি আপনাদের আর আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। আমরা যদি এক থাকি, তাহলে সব জিততে পারি—আমরা গোটা বিশ্ব জয় করতে পারি।”

মমতা বলেন, ‘‘ঐক্য থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। উন্নতির পথে এগিয়ে যাব আমরা। বিভাজন করলে দেশ দুর্বল হবে।’’ পাশাপাশি জানিয়েছেন, বাংলাতে সব ধর্মের উৎসব পালন করা হয়। দুর্গাপূজা থেকে ঈদ, মহাবীর জয়ন্তী, বড়দিন বাদ যায় না কিছুই। বাংলার মানুষও প্রতিটি উৎসবে নিজেদের যুক্ত করেন। সেই সময় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে গুলি করে মারলেও ঐক্যের পথ থেকে সরব না।’’

মঞ্চ থেকে নাম না করে বিরোধীদেরও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তোলেন, বাংলাতে পূজা করতে দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলেন হিন্দু ধর্মকে সুরক্ষা দেওয়া হয় না। কে দেয় তাহলে সুরক্ষা? কোন অনুষ্ঠান করতে দিই না আমরা? সব সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন, বলুন কাকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। সব অনুষ্ঠান হয়। সংখ্যালঘুরাও সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এটাই বাংলা। এইজন্য আমি গর্বিত।’’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা তাকে অনুষ্ঠানে ডাকবে, সেখানে তিনি যাবেন। কেউ আটকাতে পারবেন না।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোতে অশান্তি ছড়িয়ে প্রসঙ্গে মঞ্চ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অশান্তির পরিবেশের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অশান্তির প্রভাব পড়েছিল সীমান্তেও। সীমান্তে পরিস্থিতি এখন যেমনই হোক, মাঝে মাঝে কঠোর কিছু করলেই সমস্যা হয়। আমাদের রাজ্যে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু। আমরা কি তাদের সরিয়ে দেব? কীভাবে সরাব? কীভাবে সম্ভব?’’ 

মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ইতিহাসে এক সময় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত—সব একসঙ্গে ছিল। স্বাধীনতার পরে দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু আমরা ভাগ করিনি। যারা তখন নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই সেটা করেছেন। আমরা তো পরে জন্মেছি। তাহলে আমাদের দোষ কেন থাকবে? যারা আজ আছেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ যমন ত র অন ষ ঠ ন আপন দ র প রসঙ গ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁতী দলের নেতা বহিষ্কার

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের এক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃত মোহাম্মদ সৈকত উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন তাঁতী দলের সভাপতি ছিলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জেলা তাঁতী দলের আহ্বায়ক ইকবাল করিম সোহেল ও সদস্যসচিব মোরশেদ আলমের যৌথ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বহিষ্কারের আদেশ দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি মূল্যায়নে ব্যর্থ হওয়ায় হাতিয়া উপজেলা তাঁতী দলের দক্ষিণ কমিটিকে সতর্ক করা হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিয়া উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের জোড়খালী গ্রামে সৈকতের বাড়ি থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে হাতিয়া থানা–পুলিশ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ১০টি ককটেল উদ্ধার করা হয়। আলাউদ্দিন ও মোহাম্মদ সৈকত সম্পর্কে ফুফা–ভাগনে।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে অনেকগুলো পরিবার থাকে। আমি ব্যবসার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকি। আলাউদ্দিন কখন বাড়িতে এসেছেন, তা আমার জানা নেই। আমাদের ঘর থেকে তাঁর শ্বশুরদের ঘর অনেক দূরে। উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়ানো হয়েছে।’

নোয়াখালী জেলা তাঁতী দলের সদস্যসচিব মোরশেদ আলম বলেন, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকে আত্মগোপনে থাকার সুযোগ করে দেওয়ায় মোহাম্মদ সৈকতকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের তাঁতী দল কমিটিকেও সতর্ক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনহাতিয়ায় শ্বশুরবাড়িতে পালিয়ে থাকা সন্দ্বীপ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার৩১ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ