ওয়াকফ বিতর্ক: বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে মমতার ঐক্যের ডাক
Published: 9th, April 2025 GMT
ওয়াকফ বিতর্কে গোটা ভারতের পাশাপাশি অশান্তির আগুন ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে রাজ্যবাসীকে প্ররোচনায় পা না দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগরিষ্ঠ সব ধর্মাবলম্বী মানুষদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেছেন, ‘‘দিদি আপনাদের প্রপার্টি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না। আমাকে গুলি করলেও আমি একতার পক্ষে, কেউ আমায় ঐক্য থেকে সরাতে পারবে না।”
বুধবার (৯ এপ্রিল) কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে জৈন সম্প্রদায়ের মহাবীর জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভাষণে সকলকে সতর্ক করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ রাজনৈতিক প্ররোচনা দেয়। আমি বলছি, ‘দিদি’ আছে আপনাদের সঙ্গে। দিদি আপনাদের রক্ষা করবে। আপনাদের প্রপার্টি রক্ষা করবে। কেউ উস্কানিতে পা দেবেন না।’’
সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের প্রতিবাদের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই গোটা ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও চলমান ছিল আন্দোলন বিক্ষোভ। এর মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরসহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। আইনশৃঙ্খলার অবনতি না হয়, সেজন্য রঘুনাথগঞ্জ ও সুতি থানা এলাকাজুড়ে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা (পুরনো ১৪৪ ধারা) জারি রয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
আরো পড়ুন:
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, ভারতজুড়ে ঈদ উদযাপন
নাগপুর দাঙ্গা নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন মমতা
এরপরেই রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বুধবার ওয়াকফ সম্পত্তি ইস্যুতে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেওয়ার জন্য মহানবীর জয়ন্তীর মঞ্চে মমতা বলেন , “আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে কিছু বলতে চাই। আমি জানি, ওয়াকফ সম্পত্তির বিষয়ে আপনারা আঘাত পেয়েছেন, কিন্তু আমার ওপর ভরসা রাখুন—বাংলায় এমন কিছু হবে না যা ভাগ করে শাসন করার পথ খুলে দেয়। এই বার্তা ছড়িয়ে দিন যে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে সম্প্রীতির সঙ্গে বাঁচতে হবে… দিদি আছে, দিদি আপনাদের আর আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। আমরা যদি এক থাকি, তাহলে সব জিততে পারি—আমরা গোটা বিশ্ব জয় করতে পারি।”
মমতা বলেন, ‘‘ঐক্য থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। উন্নতির পথে এগিয়ে যাব আমরা। বিভাজন করলে দেশ দুর্বল হবে।’’ পাশাপাশি জানিয়েছেন, বাংলাতে সব ধর্মের উৎসব পালন করা হয়। দুর্গাপূজা থেকে ঈদ, মহাবীর জয়ন্তী, বড়দিন বাদ যায় না কিছুই। বাংলার মানুষও প্রতিটি উৎসবে নিজেদের যুক্ত করেন। সেই সময় সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে গুলি করে মারলেও ঐক্যের পথ থেকে সরব না।’’
মঞ্চ থেকে নাম না করে বিরোধীদেরও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধীরা বারবার অভিযোগ তোলেন, বাংলাতে পূজা করতে দেওয়া হয় না। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলেন হিন্দু ধর্মকে সুরক্ষা দেওয়া হয় না। কে দেয় তাহলে সুরক্ষা? কোন অনুষ্ঠান করতে দিই না আমরা? সব সম্প্রদায়ের কাছে প্রশ্ন, বলুন কাকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি। সব অনুষ্ঠান হয়। সংখ্যালঘুরাও সব ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। এটাই বাংলা। এইজন্য আমি গর্বিত।’’ পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, যারা তাকে অনুষ্ঠানে ডাকবে, সেখানে তিনি যাবেন। কেউ আটকাতে পারবেন না।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা জেলাগুলোতে অশান্তি ছড়িয়ে প্রসঙ্গে মঞ্চ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে তৈরি হওয়া অশান্তির পরিবেশের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা। বলেন, ‘‘বাংলাদেশে অশান্তির প্রভাব পড়েছিল সীমান্তেও। সীমান্তে পরিস্থিতি এখন যেমনই হোক, মাঝে মাঝে কঠোর কিছু করলেই সমস্যা হয়। আমাদের রাজ্যে ৩৩ শতাংশ সংখ্যালঘু। আমরা কি তাদের সরিয়ে দেব? কীভাবে সরাব? কীভাবে সম্ভব?’’
মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ইতিহাসে এক সময় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত—সব একসঙ্গে ছিল। স্বাধীনতার পরে দেশ ভাগ হয়েছে। কিন্তু আমরা ভাগ করিনি। যারা তখন নেতৃত্বে ছিলেন, তারাই সেটা করেছেন। আমরা তো পরে জন্মেছি। তাহলে আমাদের দোষ কেন থাকবে? যারা আজ আছেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”
ঢাকা/সুচরিতা/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম খ যমন ত র অন ষ ঠ ন আপন দ র প রসঙ গ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।