কার ‘ইশারায়’ বারবার হয়রানির শিকার সলিমুল্লাহ এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হারুন
Published: 9th, April 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় রামপুরা থানার একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁকে। যদিও মামলার বাদী তাঁকে চেনেন না। ওই মামলা থেকে নাম কাটাতে এক দফায় তাঁর কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করে একটি চক্র। পরে র্যাব পরিচয়ে আরও বেশি অর্থ আদায় করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন র্যাব ও সেনাবাহিনীর সাবেক দুই সদস্যসহ তিনজন। এর সাড়ে তিন মাসের মাথায় সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
ওই ব্যক্তি পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার তত্ত্বাবধায়ক হারুন অর রশীদ। গ্রেপ্তারের পর জানা গেল, কেবল রামপুরা থানা নয়, জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় নিউমার্কেট থানা ও কোতোয়ালি থানার দুটি মামলায়ও তিনি আসামি।
হারুনের পুলিশি হয়রানির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এতিমখানার উন্নয়নের নামে নামমাত্র মূল্যে প্রতিষ্ঠানটির সাড়ে আট বিঘা জমি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি এবং অসম চুক্তিতে ১৮ তলা ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে ২০১২ সালে আন্দোলনে নেমেছিলেন হারুন। তখন তাঁকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তুলে নিয়ে গুম করে রেখেছিল। তখন থেকেই প্রভাবশালী একটি মহল হারুনকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। এমনকি ২০২৩ সালে তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও মামলা হয়। ওই মামলার নেপথ্যে ছিলেন লালবাগ অঞ্চলের তৎকালীন কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। এবার জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা একাধিক মামলার ঢালাও আসামির তালিকায় হারুনের নাম এসেছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলায় গত ১৯ মার্চ হারুনকে আজিমপুর থেকে গ্রেপ্তার করল পিবিআই।
যদিও এ ধরনের মামলার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে, মামলা হলেই কাউকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। তদন্তে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলেই কেবল আসামিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অথচ জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় হারুন জড়িত—এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো পায়নি পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। এরপরও তাঁকে গ্রেপ্তার করায় পিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর বন্ধু-স্বজনেরা।
জুলাই আন্দোলনের মামলায় হারুন অর রশীদকে ফাঁসানো হচ্ছে, এমন কথা তিনি গত ডিসেম্বরের শুরুতে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে র্যাব পরিচয়ে একটি চক্র তাঁর কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। গ্রেপ্তার এড়াতে ভয়ে তিনি এই চক্রের হাতে ২ লাখ টাকা এবং ৮ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। পরে ৮ লাখ নগদ টাকার জন্য চক্রের সদস্যরা তাঁকে বারবার চাপ দিতে থাকেন। বিষয়টি তিনি তখন যৌথ বাহিনীকে জানান। পরে ১ ডিসেম্বর এতিমখানায় টাকা নিতে আসা সাবেক সেনাসদস্য সিরাজুল ইসলাম, র্যাব-১০–এর তৎকালীন সদস্য শাহীনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে যৌথ বাহিনী। এ ঘটনায় তিনি লালবাগ থানায় মামলা করেন। চাঁদা নেওয়ার ঘটনার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন সিরাজুল।
এদিকে গত ১৯ মার্চ পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তারের পর থেকে কারাগারে আছেন হারুন। গ্রেপ্তারের পরদিন ২০ মার্চ তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ওই দিন আদালত চত্বরে সাবেক সেনাসদস্য সিরাজুল ইসলামকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন হারুনের এক বন্ধু। এ–সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও পাওয়া গেছে। হারুন অর রশীদের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বন্ধু বাকী বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, হারুনকে আদালতে হাজির করার দিন (২০ মার্চ) আদালত চত্বরে সিরাজুলকে দেখা গেছে। সিরাজুল জামিনে বেরিয়ে এসে হারুনকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন।
তবে সিরাজুল অভিযোগ অস্বীকার করেন। উল্টো তাঁর অভিযোগ, হারুনই তাঁকে কৌশলে ডেকে নিয়ে মামলায় ফাঁসিয়েছেন। আর তিনি আদালতে গিয়েছিলেন তাঁর নিজের মামলার খোঁজখবর নিতে। সিরাজুল অবশ্য জানান, হারুন তাঁর পূর্বপরিচিত। আজিমপুর এলাকার আওয়ামী লীগের তৎকালীন কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিকের মাধ্যমে হারুনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল।
হারুন জড়িত কি না, জানে না পিবিআই
গত ১৯ জুলাই বনশ্রী এলাকায় নিহত হন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ জাবির। এ ঘটনায় তাঁর বাবা নওশের আলী নালিশি মামলা করেন গত ২৪ নভেম্বর। পরে ৪ জানুয়ারি রামপুরা থানায় নথিভুক্ত এ মামলায় হারুনসহ আসামির তালিকায় রয়েছেন ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আইজিপি ও পুলিশের তৎকালীন ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। এর বাইরে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, আজমপুর ও লালবাগ এলাকার অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও রয়েছেন আসামির তালিকায়। হারুনকে ‘আওয়ামী লীগ নেতা’ উল্লেখ করে মামলার ৩৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। অথচ তিনি কখনো রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। অর্থাৎ এ মামলায় ঢালাওভাবে আসামি করার ঘটনা ঘটেছে।
পিবিআই বলছে, হারুন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। যদিও তিনি দলীয় কোনো পদে ছিলেন কি না, সেটি তারা জানাতে পারেনি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানজিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে হারুনের ছবি দেখিয়েছেন। তবে হারুনের দলীয় পদ তিনি জানেন না। হারুন হত্যায় জড়িত কি না, তা জানতে রিমান্ডে এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
পুরান ঢাকার আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সাবেক শিক্ষার্থী হারুন অর রশীদ বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে আছেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর র তৎক ল ন প ব আই প রথম সদস য আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতকে ‘স্বস্তি’ দিয়ে অস্ট্রেলিয়া দল ছাড়লেন ট্রাভিস হেড
৮, ২৮, ২৯, ২৮, ৬—ভারতের বিপক্ষে ট্রাভিস হেডের সর্বশেষ ৫ ইনিংস।
২০২৩ সাল থেকে ব্যাট হাতে ভারতকে যতটা ভুগিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ততটা ভোগাতে পারেননি হেড। তবু তিনি ভারতীয় বোলারদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। যেকোনো সময় বাউন্ডারির বৃষ্টি বইয়ে দিতে পারেন।
তবে হেডকে নিয়ে ভারতীয় দলকে আপাতত মাথা ঘামানোর দরকার পড়বে না। যশপ্রীত বুমরা, অর্শদীপ সিং, হর্ষিত রানা, অক্ষর প্যাটেলদের জন্য সুখবর হলো ভারতের বিপক্ষে চলমান টি–টোয়েন্টি সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে খেলবে না হেড।
ভারতের বিপক্ষে সম্প্রতি ভালো করতে পারেনি ট্রাভিস হেড