বংশী ও ধলেশ্বরীর জায়গায় সরকারি ‘মিনি স্টেডিয়াম’, আগের নাম ‘রাসেল স্টেডিয়াম’
Published: 10th, April 2025 GMT
বংশী নদীর একটি প্রবাহ ঢাকার সাভার উপজেলার ভাগলপুর এলাকায় শেষ হয়েছে। ভাগলপুরে পানির প্রবাহটি ধলেশ্বরী নাম নিয়ে রাজধানী ঢাকাকে পূর্ব দিকে রেখে মেঘনার সঙ্গে গিয়ে মিশেছে। ধলেশ্বরীর যেখানে শুরু, সেখানে নদীর একটি অংশ দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি স্টেডিয়াম। শেখ রাসেলের নামে নির্মিত এই মিনি স্টেডিয়ামকে অসিলা করে এখন এলাকাবাসীও নদী দখলে মেতেছেন। ফলে সংকুচিত হয়ে আসছে নদীর গতিপ্রবাহ। নদীবিশেষজ্ঞরা বলছেন একে তো বংশী–ধলেশ্বরী দূষণে বিপর্যস্ত; নতুন করে দখল শুরু হওয়ায় নদীর অস্তিত্বই বিলীন হওয়ার পথে।
সম্প্রতি ভাগলপুরে গিয়ে দেখা গেছে, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নাম নিয়ে নির্মিত স্টেডিয়ামটির নাম এখন বদলে গেছে। মূল ফটকে স্টেডিয়ামের নামের কিছু অংশ উঠে যাওয়ায় সেখানে শুধু ‘মিনি স্টেডিয়াম’ লেখা দৃশ্যমান। মাঠের এক পাশে একতলা পাকা ভবন, ভবনের নামফলকে লেখা রয়েছে ‘সাভার মিনি স্টেডিয়াম’। পুরো স্টেডিয়ামটির চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা; নিচের দিকে কংক্রিটের, ওপরে লোহার জাল দিয়ে ঘেরা। স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই নদীতে বর্জ্য ও বালু ফেলে কিছু জায়গা ভরাট করা হয়েছে। একটি স্থানে বালু ফেলে বসানো হয়েছে দোকান।
এটি মনু মিয়ার ঘাট হিসেবে পরিচিত। ছোটবেলা থেকে নদী–সড়ক পর্যন্ত দেখছি (শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের শুরুর অংশ)। আমরা যে নদী দেখছি সে অনুযায়ী স্টেডিয়াম নদীর মধ্যে পড়েছে। নদীর পাড় দিয়া যা উঠছে (স্থাপনা), সব সরকারি জায়গায়।নদীর পাড়ের বাসিন্দা সফিকুল ইসলামভাগলপুরের স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, বর্জ্য দিয়ে ভরাট করা ও দোকানের জায়গাটি বছর কয়েক আগেও নদীর পাড় ছিল। সেখানে বর্ষা মৌসুমে নৌকা ভেড়ানো থাকত, স্থানীয় লোকজন নৌকায় নদী পারাপার হতেন নিয়মিত। স্টেডিয়াম হওয়ার পর নদীর জায়গাটি ভরাট করেছেন স্থানীয় লোকজন, গড়ে তুলেছেন স্থাপনা।
ভাগলপুর এলাকায় নদীর পাড়ের বাসিন্দা সফিকুল ইসলাম (৭০) বলেন, ‘এটি মনু মিয়ার ঘাট হিসেবে পরিচিত। ছোটবেলা থেকে নদী–সড়ক পর্যন্ত দেখছি (শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের শুরুর অংশ)। আমরা যে নদী দেখছি সে অনুযায়ী স্টেডিয়াম নদীর মধ্যে পড়েছে। নদীর পাড় দিয়া যা উঠছে (স্থাপনা), সব সরকারি জায়গায়।’
স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান তাঁর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নদীর জায়গা দখল করে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করেছেন। অথচ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে।স্টেডিয়ামের ৯৪ শতক জায়গা নদীরসাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ও উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে সাভারের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের নথি সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো। নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল উপজেলার দক্ষিণ দরিয়ারপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত এসএ ২৪৬ এবং আরএস ৩৮ নম্বর দাগের খাসজমিতে স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই দাগে সেখানে বাস্তবে খাসজমি ছিল ২ একর ৬ শতক। কিন্তু স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়েছে ৩ একর জায়গা নিয়ে। বাকি ৯৪ শতক জায়গা পড়েছে ধলেশ্বরী নদীতে।
যদিও সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) রেকর্ড অনুসারে, দক্ষিণ দরিয়ারপুর মৌজা ম্যাপে স্টেডিয়ামের ওই জায়গা ধলেশ্বরী নদীর অংশ বলে উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, সিএস রেকর্ড ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম জমিসংক্রান্ত জরিপ।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুশি করতে তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান তাঁর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নদীর জায়গা দখল করে স্টেডিয়ামের কাজ শেষ করেছেন। অথচ শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে। কিন্তু সাভারের এই মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কাবিটা ও কাবিখার আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৪০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা ও ২৫০ মেট্রিক টন চাল, যার পুরোটাই স্টেডিয়াম নির্মাণের ব্যয় হিসেবে দেখানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়।
কাবিটা ও কাবিখার বাইরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আরও ৪১ লাখ টাকার কাজ করেছে বলে জানান সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.
ভাগলপুরের বাসিন্দা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘নদীর পাড় থেকে শুরু হয়ে অনেক ভেতর পর্যন্ত স্টেডিয়ামটি বানানো হয়েছে। স্টেডিয়াম হওয়ার আগে বর্ষায় ওই স্থান থেকে নৌকা দিয়ে নদী পার হয়েছি। এখন ধীরে ধীরে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করব যেন নদী দ্রুত দখলমুক্ত করা হয়।’
গত বছরের শেষের দিকে আমি এই কার্যালয়ে যোগদান করেছি। তত দিনে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বেশির ভাগ কাজ করেছে। তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ স্টেডিয়ামের ওয়াশ ব্লক, একটি কক্ষসহ বেশ কিছু অবকাঠামো নির্মাণকাজে সরাসরি যুক্ত ছিল।সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ফায়জুল ইসলামজমি বরাদ্দের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষসাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০২২ সালের এপ্রিলে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের অনুকূলে ২ একর ৬ শতাংশ খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের চিঠি পাঠানো হয়। পাশাপাশি জমি বরাদ্দের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য খতিয়ানের সত্যায়িত কপি (সিএস, এসএ), জমির রেকর্ডীয় ও বাস্তব শ্রেণি–সম্পর্কিত মতামতসহ প্রতিবেদন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন এবং অর্থসংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র চাওয়া হয়।
সাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে এসব কাজের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কাগজপত্রে আর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি বলে জানান সাভার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জহিরুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কাগজপত্রে ওই স্থানটিতে খাসজমি আছে ৩ একর। তবে সড়ক এবং সরকারি অন্যান্য ক্ষেত্রে কিছু জমি বরাদ্দ দেওয়ার কারণে সেখানে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ একর ৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ওই পরিমাণ জমি স্টেডিয়াম বানানোর জন্য প্রস্তাব করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। এরপর আর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে জমি বরাদ্দের বিষয়টি সেখানেই আটকে যায়।
পরবর্তী সময়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় একই স্থানে ৩ একর জায়গার ওপর স্টেডিয়ামটির কাজ শেষ করা হয় বলে জানান তিনি। সেখানে ২ একর ৬ শতক খাসজমি। বাদবাকি জায়গা শিকস্তি বা নদী তীরবর্তী জমি।
প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা নদীর পাড়ে বালুর ঘাটে ব্যবসা করছি। পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে।’ভাগলপুরের মেসার্স ইমু এন্টারপ্রাইজ নামের বালুমহালের মালিক বরকত উল্লাহক্ষত বাড়ছে ধলেশ্বরী–বংশীরস্টেডিয়ামের দক্ষিণ দিকে অল্প দূরে ধলেশ্বরী নদীর পাড় থেকে ভেতরের দিকে চারটি বালুর মহাল। এ মহালগুলো নদীর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। স্টেডিয়ামের পাশে থানা ঘাট এলাকা। এই এলাকায় ২০২২ সালে বংশী নদীর জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা কয়েকটি ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন। তবে মাটি সরানো হয়নি। ফলে ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও জায়গাগুলো ভরাটই আছে। ওই বছরই সাভারের নামাবাজার এলাকায় দোকানপাটসহ তিন শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে উপজেলা প্রশাসন; এগুলোর বড় অংশই ছিল নদীতে। সম্প্রতি আবার ওই এলাকায় নতুন করে একাধিক টিনের ও আধপাকা স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এদিকে উপজেলার নয়ারহাট এলাকাতেও বংশী নদীর পাড়ে কয়েকটি বালুর মহাল গড়ে উঠেছে।
ভাগলপুরের মেসার্স ইমু এন্টারপ্রাইজ নামের বালুমহালের মালিক বরকত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা নদীর পাড়ে বালুর ঘাটে ব্যবসা করছি। পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে।’
অবৈধ এসব স্থাপনার বিষয়ে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাভার পৌরসভার প্রশাসক মো. আবুবকর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন তাদের আওতাধীন কাজগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। নদী দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নদী দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আদালতের নির্দেশনা অনুসারে অবশ্যই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব। নদী দখল করে বালুমহাল, স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আদালতের নির্দেশনার ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এভাবে চলতে থাকলে বংশী ও ধলেশ্বরী নদী অচিরেই তার অস্তিত্ব হারাবে।বেলার প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমা ইসলাম আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে বংশী নদী রক্ষায় উচ্চ আদালতে একটি জনস্বার্থমূলক মামলা করা হয়। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে গত বছরের ২ জানুয়ারি তিন মাসের মধ্যে সরকারি ছয়জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বংশী নদীর দূষণকারী ও দখলদারদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। ওই ছয় কর্মকর্তা হলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা প্রশাসক এবং সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ঢাকা জেলা কার্যালয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক। পাশাপাশি সাভার পৌরসভার প্রশাসক এবং ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার নির্বাহী পরিচালককে এ নদীতে অনতিবিলম্বে পৌরবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য ফেলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি বংশী নদীকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ধারা ৫ অনুযায়ী, প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপনার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা–ও ওই রুলে জানতে চান আদালত।
কিন্তু উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার এক বছর পার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বরং দিন দিন দখল আরও বাড়তে দেখা গেছে। এর মধ্যে বেলার পক্ষ থেকে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট ১২টি সরকারি দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, সাভার পৌরসভার ভাগলপুর এলাকায় মনু মিয়ার ঘাটে নদী দখল করে ‘শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম’ নির্মাণ এবং নদীতে পৌরবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য ফেলা বন্ধের নির্দেশ থাকলেও সম্প্রতি পরিদর্শনে এ নদীর বিভিন্ন স্থানে বর্জ্যের ভাগাড় লক্ষ করা গেছে। বেলা জানিয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়নি। ফলে ওই মামলার শুনানি আটকে আছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনার ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। এভাবে চলতে থাকলে বংশী ও ধলেশ্বরী নদী অচিরেই তার অস্তিত্ব হারাবে।’
উদাস প্রশাসনগত বছরের ১২ জুন বংশী নদীর সাভারের নামাবাজার এলাকায় ৩৯ দশমিক ৫৪ একর জমিতে কমবেশি ৮৫০টি অবৈধ স্থাপনা আছে বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন দেয় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী, জরিপ করে অবৈধ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করা হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না, জানতে চাইলে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নদী রক্ষা কমিশনে কাজ করছি। বিষয়টি নিয়ে অবগত ছিলাম না, বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে স্টেডিয়ামটি সাভারের অন্য কোনো উঁচু জায়গায় করার অনুরোধ সত্ত্বেও কাজ হয়নি বলে জানালেন নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ সাভারের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার সাভারে একটি সুন্দর উঁচু জায়গায় শেখ রাসেল স্টেডিয়াম করতে পারত। নদীর পাড়ে এটি না করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছিল। চোখের দেখায়ই মনে হয়, ওই জায়গায় নদীর জমি রয়েছে। বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে বহুবার ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ডের কাছে এ ব্যাপারে পদেক্ষপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
শামসুল হক বলেন, সাভারে ধলেশ্বরী ও বংশী নদীসহ বিভিন্ন নদীর পাড় ও খাল-বিল দখল ও ভরাট করে গড়ে উঠেছে শিল্পকারখানা, ভবন, দোকানপাট। গড়ে উঠেছে অসংখ্য অননুমোদিত আবাসন প্রকল্প, বিনোদনকেন্দ্র। নদী দখলমুক্ত করতে সাভার বাজার ও নয়ারহাটে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছিল। এখন সাভার বাজারে উচ্ছেদকৃত একটি অংশে পুনর্বাসনের নামে পুনর্দখল হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে নদী তার অস্তিত্ব হারাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র ক জ শ ষ স ভ র উপজ ল প রথম আল ক পদক ষ প ন কর মকর ত গত বছর র নদ র প ড় র এল ক য় ল ইসল ম ২ একর ৬ একর ৬ শ র কর ড ক জ কর পর ব শ র প রস অন র ধ শ ষ হয় বর জ য য় নদ র অন য য় বর দ দ সরক র প রসভ খ সজম
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।