বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ছোট-বড় পাহাড়বেষ্টিত প্রায় সাড়ে তেরো হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান, সাংক্রাই, সাংলান, পাতা– পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রধানতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসবকে চাকমারা বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা ও গুর্খারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, ম্রোরা চাংক্রান, খুমীরা সাংক্রাই, খেয়াংরা সাংলান ও সাঁওতালরা পাতা নামে অভিহিত করেন। মারমাদের কাছে সাংগ্রাই উৎসবটি সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ উৎসব তিন দিন ধরে চলে। প্রথম দিনটি ‘পাইংছোয়ায়’, দ্বিতীয় দিনটি ‘আক্যা’ ও শেষ দিনটি আপ্যাইং নামে পরিচিত। পাইংছোয়ায় অর্থ ফুল সংগ্রহ। পাইংছোয়ায় দিনে মূলত পানি দিয়ে বৌদ্ধবিহার, বিহারের আঙিনা, বাড়ি, বাড়ির উঠোন, রাস্তা ইত্যাদি পরিষ্কার করা হয় এবং নানান ধরনের ফুল তুলে সে ফুল দিয়ে সেসব স্থাপনা সাজানো হয়। আক্যা অর্থ অবতরণ। আক্যা বা দ্বিতীয় দিনে অনেকে বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা বিহারে গিয়ে অষ্টশীল (আটটি বিশেষ নিয়ম) গ্রহণ ও পালন করেন। সাধারণ গৃহীরা ‘নাইংসারে’ (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত জল) দিয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নান করান। তারপর পুণ্যার্জনের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান করানো হয়। তাছাড়া এ দিনে বিভিন্ন বস্তু দান করা হয়। আপ্যাইং অর্থ উড্ডয়ন বা প্রস্থান। আপ্যাইং দিন মূলত নববর্ষ। এ দিনে ‘ম্রাইমা সইকু’ (মারমা নববর্ষ) বরণ করা হয়।
ম্রাইমা সাংগ্রাই-এর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে ‘রিলং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব। রিলং পোয়ে এর জন্ম অনেকটা পৌরাণিক এবং বলা হয়ে থাকে এটি সনাতন পৌরাণিক গল্পের বৌদ্ধ সংস্করণ। এ গল্প অনুযায়ী, ‘ব্রাইহ্মা মাং’ (ব্রহ্মা) ও ‘সাগ্রামাং’ (ইন্দ্র) এর মধ্যে একবার বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ হয়। এতে ব্রাইহ্মা মাং হেরে যান এবং যুদ্ধের শর্ত অনুযায়ী তিনি নিজের মস্তক কর্তন করেন। পরে এক হাতির মস্তক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাকে আমরা হিন্দু পুরাণে গণেশ নামে চিনি। ব্রাইহ্মা মাং-এর কর্তিত মাথা এত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও গরম ছিল যে এই মস্তক ভূখণ্ডে নিক্ষেপিত হলে পুরো পৃথিবী পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সাগরে নিক্ষেপ করা হলে সাগর শুকিয়ে যাবে এবং আকাশে নিক্ষেপ করা হলে আকাশ ফেটে যাবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রাইহ্মা মাং-এর সাত কন্যা, যারা সপ্তাহের সাত দিনের নাম ধারণ করে, তাদের হেফাজতে রাখার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তারা ছিন্ন মস্তকটি একটি স্বর্গীয় গুহায় রাখেন। প্রতি বছর একজনের কাছ থেকে আরেকজন দায়িত্ব নেওয়ার সময় গুহা থেকে বের করে মস্তকটি ধৌত করা হয়। তখন থেকেই অশুচিতা ও দুর্ভাগ্যকে ধৌত করে শুচি, সৌভাগ্যপূর্ণ ও মঙ্গলময় জীবনের কামনায় রিলং পোয়ে উদযাপন করা হয় প্রতি বছর। সাংগ্রাই-এর আক্যা দিনে সাগ্রামাং তাঁর স্বর্গীয় আবাস থেকে মনুষ্যলোকে অবতরণ করেন এবং একটি প্রদত্ত সংকেতের মাধ্যমে তিনি জল নিক্ষেপ করেন। সে সময় মনুষ্যজাতি বিভিন্ন পাত্র নিয়ে প্রার্থনা সহকারে মাটিতে জল ঢেলে দেয়। প্রতীকীরূপে এ দিনে প্রথমে বুদ্ধমূর্তিকে নাইংসারের মাধ্যমে স্নান করানোর পরে পর্যায়ক্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বয়োজ্যেষ্ঠকে স্নান করানো হয় আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে পুণ্য লাভের জন্য। সবশেষে সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে জল ছিটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। v
লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন ন কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।