Samakal:
2025-05-01@05:12:50 GMT

চিরন্তন সাংগ্রাই

Published: 11th, April 2025 GMT

চিরন্তন সাংগ্রাই

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ছোট-বড় পাহাড়বেষ্টিত প্রায় সাড়ে তেরো হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান, সাংক্রাই, সাংলান, পাতা– পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রধানতম সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এ উৎসবকে চাকমারা বিঝু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরারা বৈসু বা বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা ও গুর্খারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, ম্রোরা চাংক্রান, খুমীরা সাংক্রাই, খেয়াংরা সাংলান ও সাঁওতালরা পাতা নামে অভিহিত করেন। মারমাদের কাছে সাংগ্রাই উৎসবটি সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ উৎসব তিন দিন ধরে চলে। প্রথম দিনটি ‘পাইংছোয়ায়’, দ্বিতীয় দিনটি ‘আক্যা’ ও শেষ দিনটি আপ্যাইং নামে পরিচিত। পাইংছোয়ায় অর্থ ফুল সংগ্রহ। পাইংছোয়ায় দিনে মূলত পানি দিয়ে বৌদ্ধবিহার, বিহারের আঙিনা, বাড়ি, বাড়ির উঠোন, রাস্তা ইত্যাদি পরিষ্কার করা হয় এবং নানান ধরনের ফুল তুলে সে ফুল দিয়ে সেসব স্থাপনা সাজানো হয়। আক্যা অর্থ অবতরণ। আক্যা বা দ্বিতীয় দিনে অনেকে বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠরা বিহারে গিয়ে অষ্টশীল (আটটি বিশেষ নিয়ম) গ্রহণ ও পালন করেন। সাধারণ গৃহীরা ‘নাইংসারে’ (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত জল) দিয়ে বুদ্ধমূর্তি স্নান করান। তারপর পুণ্যার্জনের জন্য বৌদ্ধ ভিক্ষু ও বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নান করানো হয়। তাছাড়া এ দিনে বিভিন্ন বস্তু দান করা হয়। আপ্যাইং অর্থ উড্ডয়ন বা প্রস্থান। আপ্যাইং দিন মূলত নববর্ষ। এ দিনে ‘ম্রাইমা সইকু’ (মারমা নববর্ষ) বরণ করা হয়।
ম্রাইমা সাংগ্রাই-এর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্ব হচ্ছে ‘রিলং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসব। রিলং পোয়ে এর জন্ম অনেকটা পৌরাণিক এবং বলা হয়ে থাকে এটি সনাতন পৌরাণিক গল্পের বৌদ্ধ সংস্করণ। এ গল্প অনুযায়ী, ‘ব্রাইহ্মা মাং’ (ব্রহ্মা) ও ‘সাগ্রামাং’ (ইন্দ্র) এর মধ্যে একবার বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধ হয়। এতে ব্রাইহ্মা মাং হেরে যান এবং যুদ্ধের শর্ত অনুযায়ী তিনি নিজের মস্তক কর্তন করেন। পরে এক হাতির মস্তক দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, যাকে আমরা হিন্দু পুরাণে গণেশ নামে চিনি। ব্রাইহ্মা মাং-এর কর্তিত মাথা এত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও গরম ছিল যে এই মস্তক ভূখণ্ডে নিক্ষেপিত হলে পুরো পৃথিবী পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সাগরে নিক্ষেপ করা হলে সাগর শুকিয়ে যাবে এবং আকাশে নিক্ষেপ করা হলে আকাশ ফেটে যাবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রাইহ্মা মাং-এর সাত কন্যা, যারা সপ্তাহের সাত দিনের নাম ধারণ করে, তাদের হেফাজতে রাখার দায়িত্বভার দেওয়া হয়। তারা ছিন্ন মস্তকটি একটি স্বর্গীয় গুহায় রাখেন। প্রতি বছর একজনের কাছ থেকে আরেকজন দায়িত্ব নেওয়ার সময় গুহা থেকে বের করে মস্তকটি ধৌত করা হয়। তখন থেকেই অশুচিতা ও দুর্ভাগ্যকে ধৌত করে শুচি, সৌভাগ্যপূর্ণ ও মঙ্গলময় জীবনের কামনায় রিলং পোয়ে উদযাপন করা হয় প্রতি বছর। সাংগ্রাই-এর আক্যা দিনে সাগ্রামাং তাঁর স্বর্গীয় আবাস থেকে মনুষ্যলোকে অবতরণ করেন এবং একটি প্রদত্ত সংকেতের মাধ্যমে তিনি জল নিক্ষেপ করেন। সে সময় মনুষ্যজাতি বিভিন্ন পাত্র নিয়ে প্রার্থনা সহকারে মাটিতে জল ঢেলে দেয়। প্রতীকীরূপে এ দিনে প্রথমে বুদ্ধমূর্তিকে নাইংসারের মাধ্যমে স্নান করানোর পরে পর্যায়ক্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষু, বয়োজ্যেষ্ঠকে স্নান করানো হয় আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়ে পুণ্য লাভের জন্য। সবশেষে সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে জল ছিটিয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। v
লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন ন কর ন

এছাড়াও পড়ুন:

ফসলের ক্ষেতে আশার আলো

বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল। 
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • জবি ছাত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় আটক তরুণ
  • সুইডেনে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত ৩
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের
  • চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না
  • বিশ্বের বড় বড় উৎসব কোথায় হয়
  • প্রাগে পুরস্কৃত ‘নট আ ফিকশন’,অনলাইনে মুক্তি ১ মে
  • ফসলের ক্ষেতে আশার আলো