ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এবারের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন দেওয়া ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে। মোটিফ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে মুখে মুখোশ লাগানো কালো জামা পরিহিত অজ্ঞাত যুবককে প্রাচীর টপকে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিতে দেখা গেছে। এ সময় মোটিফের আশপাশে নিরাপত্তারক্ষী, প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য অথবা পুলিশের কেউ উপস্থিত ছিল না।

শনিবার ভোর চারটা ৪৪ মিনিট থেকে ৪টা ৫০ মিনিটের মধ্যে আগুন লাগিয়ে বের হয়ে যায় অপরিচিত সেই যুবক। সিসিটিভি ফুটেজ এবং সরেজমিন ঘুরে এমন তথ্য জানা গেছে।

আনন্দ শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে গত দুই সপ্তাহ থেকে চারটি মোটিফ তৈরির কাজ চলছিল চারুকলা জয়নুল গ্যালারি সংলগ্ন মাঠে। একটি প্যান্ডেলে পাশাপাশি চারটি মোটিফ তৈরি করছিলেন শিল্পীরা।

এরমধ্যে শেখ হাসিনার ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’র মোটিফটিকে লক্ষ্য করেই আগুন দেওয়া হয়। সেই মোটিফ পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তার পাশে থাকা শান্তির প্রতীক ‘শান্তির পায়রা’ অর্ধেক জ্বলে গেছে। তবে পাশে মাছের মোটিফে ফয়েল পেপার থাকায় তাতে আগুন লাগেনি এবং বাঘের মোটিফ অক্ষত রয়েছে।

মোটিফ তৈরির কাজে থাকা আল আমিন সমকালকে বলেন, আমরা রাত দশটার দিকে কালকের মত কাজ শেষ করে চলে যাই। আমরা থাকার সময় আশেপাশে মানুষের চলাচল ছিল। তবে এমন ঘটনা ঘটবে কেউ আশা করেনি। জানলে হয়ত নিরাপত্তা বেশি থাকতো। তিনি জানান, গত ১৬-১৭ বছর থেকে তিনি মোটিফের কাজটি করেন, তবে কখনও এমন পরিস্থিতি হয়নি।

সরেজমিন দেখা যায়, প্যান্ডেলে টানানো ত্রিপল পুড়ে গেছে। তবে আবার সেটি লাগানোর কাজ চলছে। শিল্পীরা পুনরায় ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

চারুকলা অনুষদের অফিস সহায়ক আনোয়ার বলেন, আমাদের তিনজন নিরাপত্তারক্ষী। সবাই সারাদিন কাজে ব্যস্ত ছিল। সারাদিন কাজ করায় সবাই ক্লান্ত ছিল। তখন তো ভোর চারটা। অনেকে ঘুমিয়ে পড়ছিল, কেউ কেউ নামাজে গিয়েছিল। অর্থাৎ আশেপাশে কেউ ছিল না। এই সুযোগ কাজে লাগায় তারা।

জানা গেছে, চারুকলার দায়িত্বে পুলিশরা ছিল। তবে তারা প্রবেশ গেটের পাশে ছিল। মোটিফের পাশে ছিল না। অন্যদিকে প্রক্টরিয়াল টিমের কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

আনন্দ শোভাযাত্রা কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আড়াই লাখ টাকা আগাম বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, শৃঙ্খলা উপকমিটি, পুলিশের সঙ্গে মিটিংয়ের আপ্যায়ন বাবদ ৫০ হাজার টাকা, প্রক্টরিয়াল টিম এবং প্রক্টর অফিসের খরচ বাবদ ৬০ হাজার টাকা, পহেলা বৈশাখের আপ্যায়ন বাবদ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে মোটিফের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় গুরুত্ব দেয়নি কেউ।

এ দিকে সিসিটিভি ফুটেজের কথা জানিয়ে শনিবার দুপুরে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, কালো টি-শার্ট, ব্রাউন প্যান্ট, কালো স্যান্ডেল পড়া ও পিছনে চুলে ঝুঁটি করা একটা ছেলে চারুকলার তিন নম্বর গেট টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন এবং আগুন দিয়ে একইপথে ছবির হাটের দিকে পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, প্রবেশ করে প্রথমে সে মোটিফের গায়ে লিকুইড ঢেলে দেয়। তারপর সে পর্দার আড়ালে গিয়ে লাইটারে আগুন জ্বালিয়ে পুনরায় ফায়ার করেছে।

প্রক্টর বলেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে লাগাতার কাজ করছেন শিল্পীরা। তারা ক্লান্ত। এটা শৈল্পিক কাজ। চাইলেই মুহূর্তে তৈরি করা সম্ভব নয়। আমরা শিল্পীদের ওপর ছেড়ে দিয়েছি, তারা যদি এটাকে পুনর্নির্মাণ করতে পারেন।

এ দিকে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.

মো. আজহারুল ইসলাম শেখ মনে করেন, ফ্যাসিবাদী পক্ষের কেউ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, খুব সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের পক্ষের একটা শক্তি এখানে ঘাপটি দিয়ে আছে। তারাই এই কাজ করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করছি। একটা সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং আইনিভাবে শক্তহাতে দেখা হবে।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনা অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান। সদস্য হিসেবে রয়েছেন আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হক, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর ড. এ কে এম নূর আলম সিদ্দিকী এবং সদস্যসচিব আছেন চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল প্রাং।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ র কল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন

প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।

শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।

আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন

রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।

দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।

২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।

আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।

সূত্র: এনবিসি নিউজ

আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ