রাত পোহালেই আনন্দ শোভাযাত্রা, প্রস্তুতি প্রায় শেষ
Published: 13th, April 2025 GMT
পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে রংতুলির আচড়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ। বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ এর বর্ষবরণ ও আনন্দ শোভাযাত্রা ঘিরে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
ইতোমধ্যে মুখোশসহ বিভিন্ন উপকরণের কাজ প্রায় শেষ। শোভাযাত্রার মোটিফ ফ্যাসিবাদের রাক্ষুসে মুখচ্ছবি পুড়িয়ে দেওয়ার পর নতুন করে ককশিট দিয়ে মোটিফ তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। তবে এটি নির্ধারিত সময়ের আগের নির্মাণ শেষ হবে কি না কিংবা শিল্পমান কেমন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
জুলাই বিপ্লবের পর প্রথমবারের মতো পালিত হচ্ছে বাংলা নববর্ষ। জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবার নববর্ষের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান।
আরো পড়ুন:
৩২ এর প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে ২৭ এপ্রিল সমাবেশ
ঢাবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম খুঁজতে তদন্ত কমিটি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদের ‘বীভৎস মুখাকৃতি’সহ বড় আকারের মোটিফ থাকবে ছয়টি। এর মধ্যে রয়েছে- কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, ৩৬ জুলাই (টাইপোগ্রাফি), শান্তির পায়রা ও পালকি। এছাড়া মাঝারি আকারের মোটিফের মধ্যে থাকবে সুলতানি ও মোগল আমলের শাসকদের মুখোশ, তালপাতার সেপাই, রঙিন চরকি, পাখা, ঘোড়া, তুহিন পাখি ও শতফুট উচ্চতার লোকজ চিত্রাবলির ক্যানভাস।
ছোট মোটিফ হিসেবে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি রয়েছে ৮০টি। লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে বাঘের মাথা ২০০টি, পলো, মাছের চাঁই, মাথাল, লাঙল ও মাছের ডোলা থাকবে। এই কর্মযজ্ঞে দৈনিক অংশগ্রহণ করছেন অন্তত ৩৫০ জন শিক্ষক এবং সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী।
শোভাযাত্রায় ফ্যাসিবাদের মোটিফ প্রসঙ্গে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন বলেন, “এবারের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে মোটিফ নির্বাচন করা হয়েছে। কোনো ফ্যাসিবাদ যেন এ দেশে আর ফিরতে না পারে, সেজন্য এটিকে গুরুত্ব দিয়ে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিকে মোটিফ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুরুতে মীর মুগ্ধের বোতলের মোটিফ বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও পরে তা বাতিল করা হয়েছে।”
এদিকে, চারুকলার নববর্ষ উদযাপন ও শোভাযাত্রার অর্থ সংগ্রহের জন্য চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বরেণ্য শিল্পীদের দিয়ে বানানো বিভিন্ন চিত্র ও শিল্পকর্ম বিক্রি চলছে। গত ২০ মার্চ একটি কর্মশালার মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। সরা, জলরং, মুখোশসহ নানা শিল্পকর্ম রয়েছে এতে।
এছাড়া শনিবার (১২ এপ্রিল) শেষ হয় মোটিফ, প্রতিকৃতি ও শিল্পকর্ম বানানোর কার্যক্রম। এরপর সেগুলো প্রদর্শনী ও বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়, চলবে সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা পর্যন্ত। চারুকলার অভ্যন্তরে নাগরদোলা, চরকি, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ ও বৈশাখী খাবারে দোকান থাকবে। পাশাপাশি বকুলতলায় বৈশাখ উপলক্ষে দুদিন যাত্রাপালার আয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে দায়িত্বরত চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক তাসলিমা বেগম বলেন, “গত ২০ মার্চ থেকে আমরা এ কার্যক্রম শুরু করি। মাঝে রমজান ও ঈদ থাকায় শিল্পকর্মগুলো খুব বেশি বিক্রি হয়নি। তবে এই বিক্রি শেষ সময়ে এসে কিছুটা বাড়তে পারে।”
চারুকলার সিনিয়র শিক্ষক ও বরেণ্য শিল্পীদের বানানো পেইন্টিং বানানোরও কাজ চলছে। এসব শিল্পকর্ম ভালো দামেই বিক্রি হয় বলে জানান তাসলিমা বেগম।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, বাংলা বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে শিক্ষকসহ চারুকলায় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নববর্ষ উপলক্ষে চারুকলা প্রাঙ্গণে মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। রং-বেরংয়ের বেলুন ঝোলানো হয়েছে মঞ্চের সামনে। মঞ্চের পেছনে পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হচ্ছে আবরণ।
নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রা উপলক্ষে চারুকলা অনুষদে রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে আনা হয়েছে ১৮টি ঘোড়া। এ ঘোড়াগুলো আগামীকাল পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রায় যুক্ত হবে। শিশুদের জন্য আনা হয়েছে নাগরদোলা, শিশুদের খেলনা, জাম্পিং ও মিনি ট্রেন।
পুলিশ, র্যাব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই চারুকলা অনুষদের গেটে প্রবেশ করতে চাইলে প্রত্যেককে পরিচয় দিতে হচ্ছে। পরিচয় ব্যতীত কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেও নিরাপত্তা সম্মুন্নত রাখার চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে এখানে প্রায় ৬০-৭০ জনের ফোর্স রয়েছে পুলিশের।
প্রস্তুতি সম্পর্কে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ভাস্কর্যশিল্পী দীপক রঞ্জন সরকার শনিবার ফ্যাসিবাদের দৈত্যাকৃতির মুখাকৃতি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে উল্লেখ করে বলেন, “নাশকতা না ঘটলে আমাদের সব কাজ গতকালই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু গতকালের ঘটনায় কিছু বিলম্ব হচ্ছে। তবে আজকের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলব। আমরা মাছ, বাঘ, তরমুজের ফালি, পালকি, মুগ্ধের পানির বোতল মোটিফের কাজ শেষ করেছি। গতকাল ৩৬ জুলাই ও কবুতর পুড়িয়ে দেওয়া হলেও আমরা তা রিকভার করেছি এবং এখনো কাজ চলছে।”
এ বিষয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের ৩০ ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস বলেন, “আমরা নববর্ষের এ দিনটির জন্য বছর জুড়েই অপেক্ষা করি। আমরা এখানে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজগুলো করতে পারি। যার যেভাবে ভালো লাগে সেভাবে ডিজাইন করে। তাতে কোনো বাধা নেই। সত্যি বলতে, আমরা এখানে মজা নিয়ে কাজগুলো করে থাকি।
এবারের বর্ষবরণ প্রস্তুতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে উল্লেখ করে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, “এবারের বৈশাখ হবে সবার। আমাদের ভূখণ্ডে বসবাসরত সব জাতি, গোষ্ঠী বৈশাখ বরণে অংশীদারত্ব অর্জন করেছে। পাহাড় থেকে সমতল সবাই একসঙ্গে বর্ষবরণ উদযাপন করবে। এবারের আয়োজনের মধ্য দিয়ে একপেশে আয়োজনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আমরা বাংলাদেশের উদার, শুদ্ধচর্চার সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হতে পারব বলে আশা করছি।”
তিনি বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাপক এ আয়োজনের লক্ষ্যে মঙ্গল শোভযাত্রার নাম বদলে করা হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। এর ছায়াতলে দেশের বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটবে। প্রতিফলিত হবে সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং ফুটে উঠবে শুভযাত্রার প্রকৃত আনন্দ। এবারের আয়োজনে এটাই অনন্য এক মাত্রা।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা আমাদের চেষ্টা করছি। আগামীকালের অংশগ্রহণ হবে কালারফুল। বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের মানুষ সেখানে অংশগ্রহণ করবে। নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।”
তিনি বলেন, “সবার দলীয় সমর্থন থাকতে পারে। কিন্তু ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাপারে একমত হওয়া জরুরি। আমরা এখনো দেখছি, গত ১৬ বছরের অপকর্ম এখনো একদল শিক্ষিত মানুষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সেসব মাথায় রেখেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।”
মেট্রোস্টেশন পয়লা বৈশাখ শোভাযাত্রার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগ দু'টি মেট্রোস্টেশন বন্ধ থাকবে।
বিষয়টি উল্লেখ করে প্রক্টর বলেন, “সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মেট্রো শাহবাগ ও টিএসসি স্টেশন দুইটি বন্ধ থাকবে। এখানে যাত্রী উঠবে না এবং নামবে না, তবে মেট্রোরেল চলবে। শোভাযাত্রা শেষ হয়ে গেলে, স্টেশন দুইটি খুলে যাবে।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আনন দ শ ভ য ত র শ ল পকর ম নববর ষ র চ র কল র প রস ত ত আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারে এলে ৫০ লাখ নারীকে ফ্যামিলি কার্ড দিবে বিএনপি : সজল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষকে ফ্রি চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ করছি।
আমাদের দলে যে সিদ্ধান্ত সবাইকে মানবিক কর্মকান্ডে থাকতে হবে সেই সিদ্ধান্তর মোতাবেকি কিন্তু আমরা মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। যুবদলের নেতাকর্মীরা সবসময় মানুষের সেবায় তাদের পাশে থাকতে চায়। বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো মানুষের কল্যাণেই আগামী দিনে কাজ করবে।
যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ সদর থানা যুবদলের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথাগুলো বলেন।
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল দশটায় শহরের ১৩নং ওয়ার্ডস্থ গলাচিপা রুপার বাড়ি মোড়ে দিনব্যাপী মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ৩১ দফার আলোতে আগামীতে যে দেশ পরিচালনা করার যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আগামী দিনের যদি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে প্রথমেই ৫০ লাখ নারীদের জন্য ফ্যামিলি কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে।
যে পরিবারের প্রধান তার নামেই সে ফ্যামিলি কার্ড হবে এবং নারীরা রাষ্ট্রের সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
সকল পণ্যের উপরে রাষ্ট্রীয়ভাবে ভর্তুকি দিয়ে সকলের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করবে। ইনশাল্লাহ যদি বিএনপি ক্ষমতা আসে তাহলে এর সুফল আপনারা পাবেন। শুধু তাই না হেল্প কার্ডেরও ব্যবস্থা করা হবে। বিনামূল্যে মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া হবে । যাতে করে এদেশের মানুষ হাসপাতালে গেলে তাদের সঠিক চিকিৎসাটি পায়।
এই হেল্প কার্ডের মাধ্যমে সকলের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। সুতরাং আপনারা সবাই আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা যে অসুস্থ তার জন্য দোয়া করবেন দোয়া করবেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের জন্য দোয়া করবেন।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ,ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, মোঃ আরমান হোসেন, সাইফুল ইসলাম আপন, আশিকুর রহমান অনি, বাদশা খান, শাহীন শরীফ, ফয়েজ উল্লাহ সজল, ফয়সাল আহমেদ, আরিফ খান, হাবিবুর রহমান মাসুদ প্রমুখ।