যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর পাল্টা শুল্ক সম্পূর্ণ বাতিল করতে বলেছেন চীনের কর্মকর্তারা।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই ভুল সংশোধন করে নেওয়ার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বড় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। পাল্টা শুল্কের ভুল ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুন এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের সঠিক পথে ফিরে আসুন।’

২ এপ্রিল বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের ওপর ১০ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ৯ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের ওই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প শুল্কারোপ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন। তবে ব্যতিক্রম চীন। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বজায় আছে এবং দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে এখন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

যদিও শুক্রবার ট্রাম্প প্রশাসনের কথায় মনে হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর করছাড়ের প্রস্তাব দিতে প্রস্তুত আছে, এর মধ্যে চীনে উৎপাদিত পণ্যও থাকতে পারে।

তবে গতকাল রোববার মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটকিন এবিসি নিউজকে বলেন, এই ছাড় কেবল সাময়িক সময়ের জন্য। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন ‘সেমিকন্ডাক্টরের’ ওপর আলাদা শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে এবং পরে কোনো একদিন ওই শুল্ক ঘোষণা করা হবে।

লুটকিন আরও বলেন, ‘আমাদের এগুলো অবশ্যই আমেরিকায় তৈরি করতে হবে।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও সেমিকন্ডাক্টরের ওপর কর ছাড়ের খবরকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, সেগুলোকে শুধু শুল্কের আলাদা ঝুড়িতে সরিয়ে নেওয়া হবে।

ট্রাম্প লেখেন, ‘আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্তে আমরা সেমিকন্ডাক্টর এবং পুরো বৈদ্যুতিক পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের দিকে নজর দিচ্ছি।’

ট্রাম্পের এই মন্তব্য মাত্রই স্মার্টফোন, কম্পিউটার, সেমিকন্ডাক্টরসহ প্রযুক্তিপণ্যে শুল্কছাড়ের ঘোষণাকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই শুল্কছাড়কে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ছোট পদক্ষেপ’ বলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের প্রভাব কী হতে পারে, বেইজিং তা মূল্যায়ন করে দেখছে।

আরও পড়ুনএবার মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল চীন১১ এপ্রিল ২০২৫

২ এপ্রিল ট্রাম্প চীনের ওপর ৫৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, পরে তা বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রথমে ৩৪ শতাংশ, এরপর তা বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশ এবং পরে তা আরও বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে।

গত সপ্তাহে সর্বশেষ শুল্কের ঘোষণার সময় চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র শুল্কযুদ্ধ বা বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দিতে চায়, তবে চীন শেষ পর্যন্ত এ লড়াই চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুনট্রাম্প বিপুল শুল্ক আরোপের পরও কেন পিছু হটছে না বেইজিং১২ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের

আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।

দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।

মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।

হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’

সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।

হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।

বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’

এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।

এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।

চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।

বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে

তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।

দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।

এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ