গাজা থেকে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করেছে ইসরায়েল। ক্রমশ সংকুচিত হওয়া ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের একটি ছোট এলাকায় তাদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে বসবাসের পরিবেশ এখন দমবন্ধ অবস্থার মতো। রাফাসহ গাজার বিশাল অংশ থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্বিষহ জীবন থেকে বাঁচতে শেষ পর্যন্ত বাসিন্দারা যাতে গাজা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান, সেটাই লক্ষ্য ইসরায়েলের।

গতকাল রোববার সিএনএনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার গভীরে স্থল অভিযান সম্প্রসারণ করেছে। সীমান্তে তারা একটি বৃহৎ বাফার জোন তৈরি করছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের সরে যেতে গত ১৮ মার্চ থেকে অন্তত ২০ বার নির্দেশনা জারি করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

জাতিসংঘের মতে, গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৪ লাখ মানুষকে সরে যেতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করার প্রচেষ্টা হিসেবে এই নির্দেশনা। গাজার বেশির ভাগ এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য। 

গত শুক্রবার গাজার সড়কে বাস্তুচ্যুত মানুষের মিছিল দেখা যায়। তারা মধ্য ও উত্তর গাজা থেকে সরে যাচ্ছিল অন্যত্র। যতদূর সম্ভব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করছিল তারা। তাদের মধ্যে এক বাসিন্দা রায়েদ রাদওয়ান। তিনি বলেন, রাস্তার পাশে তাঁবু ফেলে পরিবারগুলো অবস্থান নিয়েছে, এ দৃশ্য হৃদয়বিদারক। বুলডোজার দিয়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে তাঁবু তৈরির জায়গা করা হচ্ছে।

গাজা শহরের বাসিন্দা হাতেম আবদুল সালাম বলেন, মশা-মাছি ও আবর্জনার সঙ্গে জীবনযাপন করছেন তারা। অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। মধ্য গাজার আল-শুজাইয়া থেকে ৩০ বছর বয়সী ফয়সাল জামাল বলেন, আমরা জানি না কোথায় যাচ্ছি। দুই পা যেখানে যায়, আমাদের যেতে হবে।  

জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা এখন বাস্তুচ্যুতি আদেশের অধীন। এসব এলাকা ‘নো গো’ জোন হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। ত্রাণ সংস্থাগুলোকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।  

ইসরায়েলের কট্টরপন্থি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজাবাসীকে সংকীর্ণ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কাৎজ সম্প্রতি এক বক্তব্যে বলেন, দখল করা এলাকা ইসরায়েলের নিরাপত্তাধীন অঞ্চলে যুক্ত করা হচ্ছে। আমরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি।

মার্কিন গণমাধ্যমটি লিখেছে, ইসরায়েল অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার বিরাট এলাকা দখলের পরিকল্পনা করছে। তবে এত হামলার পরও প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এখনও প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। ১৮ মাস যুদ্ধের পরও তাদের শক্তি কমেনি।

গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, বাস্তুচ্যুত গাজাবাসী যেখানে ইচ্ছা চলে যাক, তাদের সেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ জ গণহত য ইসর য় ল র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যয় বাড়ল ১৪৪ কোটি টাকা

‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এর পর আটবার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। এ অবস্থায় প্রকল্পটি শেষ হওয়া নিয়ে হতাশা দেখা দেয়। 
আশার কথা, নতুন জেলা কারাগারের কাজ শেষ হয়েছে। গত ২৫ মে গণপূর্ত বিভাগের কাছ থেকে নতুন কারাগারটি বুঝে নেওয়ার কথা ছিল কারা কর্তৃপক্ষের। কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকায় হস্তান্তর হয়নি। চলতি জুন মাসে যে কোনো সময় নতুন কারাগার হস্তান্তরের কথা রয়েছে। জনবল পদায়ন হলেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে।
১৯১২ সালে নগরীর ভৈরব নদীতীরে নির্মাণ করা হয় খুলনার প্রথম কারাগার। সেখানে বন্দি ধারণক্ষমতা ৬৭৮ জনের। রয়েছেন ১ হাজার ৪শর বেশি বন্দি। ১১৩ বছরের পুরোনো জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয় তাদের। এসব বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হচ্ছে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন পড়লে পৃথক প্রকল্প নিয়ে অন্য অবকাঠামো নির্মাণ হবে।
নতুন কারাগার হবে সংশোধনাগার
কারাগার ঘুরে দেখা গেছে, ভেতরে সাজানো-গোছানো অভিজাত আবাসিক এলাকার মতো পরিবেশ। রং দেওয়া নতুন ভবন, পথের ধারে 
ফুল, দামি পার্কিং টাইলস দেওয়া ফুটপাত ধরে হাঁটলে এটি কারাগারই মনে হয় না। নতুন এ কারাগার নির্মাণ হচ্ছে সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক। নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড আছে। একইভাবে বন্দিদের জন্য ৫০ শয্যার হাসপাতাল থাকবে। 
আরও থাকবে কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল লাইব্রেরি, ডাইনিং রুম, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি। কারাগারে শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ নারী বন্দি থাকতে পারবেন না। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার ব্যবস্থা থাকবে। কারাগারে পুরুষ ও নারী বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর রয়েছে। মোট ৫২টি স্থাপনা রয়েছে এ কারাগারে। 
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম জানান, বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দিদের অন্য শ্রেণির বন্দিদের সঙ্গে মেশার 
সুযোগ নেই। কারাগারের ভেতরে শুধু সীমানাপ্রাচীরই রয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। ভেতরে ড্রেন, ফুটপাত, নিজস্ব পয়োবর্জ্য শোধন কেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সবকিছুর কাজ শেষ।
সময় বেড়েছে আটবার, ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ
২০১১ সালের অনুমোদিত খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১৪৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৬ জুন প্রকল্পটি প্রথম দফা সংশোধন করা হয়। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্য নেওয়া হয় ২০১৯ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার। এর পর পাঁচ দফায় পাঁচ বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কাজ আর শেষ হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
হস্তান্তর ও চালু কবে
খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নতুন কারাগারের সব কাজ শেষ। কয়েকটি স্থাপনায় রঙের শেষ প্রলেপসহ টুকটাক কাজ বাকি রয়েছে। আগে করলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে হস্তান্তর তারিখ নির্ধারণ হলেই এসব কাজ করা হবে। 
খুলনার জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করতে বলা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি জুন মাসেই আমরা কারাগার বুঝে নেব। তিনি আরও বলেন, কারাগার পরিচালনার জন্য ৬০০ জনবলের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পুরোনো কারাগারে প্রায় ২০০ জনবল রয়েছে। স্থাপনা বুঝে নেওয়ার পর কারাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ