জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনুর রহমান খাঁনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ওই হলের একদল শিক্ষার্থী। সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হলের ফটকে হ্যান্ডমাইক নিয়ে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। এর আগের দিন রোববার প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ওই শিক্ষকের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে নামফলক খুলে ফেলেন এই শিক্ষার্থীরা। ওই দিন তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সোহেল আহমেদের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার রাত ১০টার দিকে হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ডেন ও হাউস টিউটরদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ চাওয়া শিক্ষার্থীরা। তবে ওই আলোচনায় প্রাধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খাঁন উপস্থিত ছিলেন না। আলোচনায় শিক্ষার্থীরা রাতের মধ্যেই প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেন। এরপর হলের ওই শিক্ষকেরা (যাঁরা আলোচনায় বসেন) প্রাধ্যক্ষের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। এরপর তাঁরা জানান, প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, উপাচার্য তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তিনি বললে পদত্যাগ করবেন। তা ছাড়া স্বেচ্ছায় তিনি পদত্যাগ করবেন না।

এরপরই একদল শিক্ষার্থী হলের ফটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।

আলোচনায় উপস্থিত ও বিক্ষোভকারী ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান (তাজ) বলেন, ‘আমাদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হলের শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে মিটিং করেন। আমরা তাঁর পদত্যাগের দাবি জানাই। পরে শিক্ষকদের একজন প্রভোস্টকে কল করে পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পদত্যাগ করবেন না বলে জানান। এর প্রতিবাদে আমরা বিক্ষোভ করছি। রাতের মধ্যেই তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।’

যেসব কারণে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগ চান, সে বিষয়গুলো উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই শিক্ষার্থীরা।

লিখিত অভিযোগে তাঁরা উল্লেখ করেন, প্রাধ্যক্ষ হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেন। এ ছাড়া মসজিদ সংস্কারে অসহযোগিতা, হলের সব কর্মচারীর কাজের তদারকিতে অবহেলা ও হলের নোংরা পরিবেশ নিয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া, রিডিংরুম সংস্কারে দায়িত্বহীনতা, শিক্ষার্থীদের রুম সংস্কারে অনীহা ও দীর্ঘসূত্রতা, ডাইনিংয়ের খাবারের মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়া, হলের দীর্ঘদিনের ইন্টারনেট সমস্যার সমাধান না করা ও দীর্ঘ পাঁচ মাস তাঁকে বলার পরও এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া, হলের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাসামগ্রী দিতে অস্বীকৃতি, একাধিকবার বলার পরও বিশুদ্ধ পানির ফিল্টারের কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া, ওয়াশরুম সংস্কার ও পরিষ্কারে তদারকি না করা, শিক্ষার্থীদের হুমকি ও ক্ষমতার দাপট দেখানো, কোনো শিক্ষার্থী রাতে ফোন দিলে বিভিন্ন ধরনের কৈফিয়ত চাওয়া।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনুর রহমান খান। তিনি রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনাও করেছি। ঈদের আগপর্যন্ত কোনো অভিযোগের কথা তারা আমাকে বলেনি। ঈদের পর ক্যাম্পাস খুলেছে মাত্র কয়েক দিন হলো। এর মধ্যে কীভাবে এসব অভিযোগ এল? প্রশাসনের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলেছি। তারা পেছনে থেকে শিক্ষার্থীদের ইন্ধন দিয়ে এ কাজগুলো করাচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার বিষয়ে আমরা অতি দ্রুত সংবাদ সম্মেলন করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র পদত য গ র দ ব য গ কর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ