কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে জেলেদের নতুন আতঙ্কের নাম আরাকান আর্মি। গত পাঁচ মাসে মাছ ধরতে যাওয়া দেড় শ জেলেকে অপহরণ করেছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর তৎপরতার কারণে নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছেন টেকনাফের ৪০০ জেলে।

গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরায় সরকার ঘোষিত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। তবে তার বেশ কিছুদিন আগে থেকেই টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। এতে জেলে পরিবারগুলো সীমাহীন অর্থকষ্ট ও ভোগান্তিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ–মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে নাফ নদীর জলসীমা পড়েছে ৮৪ কিলোমিটার। কিন্তু তিন মাস ধরে নাফ নদীর জলসীমায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) টহল তৎপরতা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে নাফ নদী থেকে জেলেদের ট্রলারসহ অপহরণের ঘটনাও বেড়েছে। জেলেরা এসব ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করেছেন।

সর্বশেষ ৮ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমার মৌলভীরশীল নামের এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে চারটি ফিশিং বোটসহ ২৩ মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এ ঘটনায় আতঙ্কিত টেকনাফের অন্তত ৪০০ ট্রলারের তিন হাজার জেলে পাঁচ দিন ধরে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

আশিকুর রহমান বলেন, গত ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্য মংডু টাউন দখলের পর নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মির (এএ) তৎপরতা বেড়েছে। এ সময় এই বাহিনীর সদস্যরা ১৫১ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছেন। এর মধ্যে বিজিবির একক প্রচেষ্টায় ১৩৪ জনকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্য জেলেদের দ্রুত সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান আরও বলেন, ট্রলারসহ ২৩ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। আজকালের মধ্যে ভালো একটি সংবাদ পাওয়া যেতে পারে। এর আগেও আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিবি যোগাযোগ করে কয়েক দফায় দেড় শতাধিক অপহৃত বাংলাদেশি জেলেকে ফিরিয়ে এনেছে।

ট্রলারমালিকদের দাবি, আরাকান আর্মির সদস্যরা দ্রুতগতির স্পিডবোট নিয়ে নাফ নদীর বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন। তাঁরা অস্ত্রের মুখে টেকনাফের জেলেসহ মাছ ধরার ট্রলার ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিজিবির তৎপরতায় সম্প্রতি কিছু জেলেকে ফেরত আনা গেলেও অপহরণের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।

সম্প্রতি বন্দিদশা থেকে ফিরে আসা টেকনাফের কয়েকজন জেলে বলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়া ও নিয়মিত যোগাযোগের পথ সৃষ্টি করতেই আরাকান আর্মি নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণ করছে। রাখাইনে বন্দী থাকার সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা তাঁদের কাছে এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, রাখাইন রাজ্য দখলের পর (গত ডিসেম্বর মাসে) আরাকান আর্মি নাফ নদীতে মাছ আহরণসহ নৌকা চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। এ বিষয়ে টেকনাফের জেলেদের সতর্ক করা হয়েছে, যাতে বাংলাদেশি জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে না পড়েন। তারপরও বাংলাদেশি জেলেদের অপহরণের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার খায়ুকখালী খালে নোঙর করা মাছ ধরার ট্রলার

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র র জলস ম র খ ইন ন ফ নদ

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লার ৫ ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনে তৎপরতা

দীর্ঘ এক যুগ পর ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের অন্তর্গত পাঁচটি ইউনিয়নে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে বইছে উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন হতে অনেকে ইতিমধ্যেই লবিং-তদবির শুরু করেছেন।

জানা গেছে, ইউনিয়ন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াকে সামনে রেখে নড়েচড়ে বসেছেন ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন ও সদস্য সচিব রাসেল মাহাম্মুদ।

তারা যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের দিয়েই নতুন নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের সক্রিয় নেতাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আগ্রহী নেতাকর্মীরাও তাদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ করছেন। 

আরও জানাগেছে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ফতুল্লা, এনায়েতনগর, বক্তাবলী, কুতুবপুর ও কাশিপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের মতবিনিময় সভার মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আর সেই নতুন কমিটিতে বিগত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা আমলে রাজপথের ত্যাগী ও নির্যাতিত এবং পরিক্ষীত নেতাকর্মীদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। আর সেই কমিটিতে ফ্যাসিবাদের দোসর ও সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ এবং মাদক ব্যবসায়ীদের স্থান হবে না। 

এ প্রসঙ্গে আহ্বায়ক জাকির হোসেন রবিন ও সদস্য সচিব রাসেল মাহাম্মুদ বলেন, “গত ১২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়।

ওই সভায় কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ভাই আমাদের আগামী ১০দিনের মধ্যে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী পাঁচ ইউনিয়নে কমিটি গঠন করা হবে।”

তারা আরও বলেন,“স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে গত ১৬ বছরে যারা আমাদের সাথে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে হামলা, মামলা, জেল-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সেসব ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিয়েই নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

আমাদের লক্ষ্য ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা। আওয়ামী লীগের দোসর, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের এই কমিটিতে কোনো স্থান দেওয়া হবে না।”
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • পুলিশের তৎপরতায় দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৪
  • ফতুল্লার ৫ ইউনিয়নে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনে তৎপরতা