জীবনের স্বাদ পেয়েই শুরু বাঁচার লড়াই
Published: 15th, April 2025 GMT
অভাবের সংসার। রাজমিস্ত্রির কাজ করে পাঁচ সদস্যের ভার বহন করেন ফরিদুল ইসলাম। বৈশাখে প্রথম সকালে আলোকিত করে তাদের সংসারে এসেছে নতুন সন্তান। কিন্তু এ আনন্দের সংবাদকেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলছেন মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলাম দম্পতি। তাদের কথা থেকে বোঝা যায় তারা বেশ বিপাকে আছেন এ আনন্দময় খবরে।
দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জন্ম হয় তাদের তৃতীয় ছেলেসন্তানের। শিশুটি জন্মের পরই তার শরীরে দেখা দিয়েছে ইনফেকশন। ফলে বাচ্চাকে ভর্তি করতে হয়েছে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে।
সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের এখন তিন সন্তান। নরমাল ডেলিভারিতে তাদের তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নববর্ষের প্রথম দিনে নতুন সন্তানের জন্ম যেমন আনন্দ বয়ে এনেছে, তেমনি অভাব আর সংক্রমণ নতুন শঙ্কায় ফেলেছে তাদের। তবুও শিশুকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা থেমে নেই স্বজনদের। বাবা শিশুটিকে মাদ্রাসায় পড়াতে চাইলেও বোন চায় সে ডাক্তার হবে।
এদিকে মায়ের চিন্তার শেষ নেই। তিনি শিশুটি এখন কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে সেই ভাবনায় প্রহর গুনছেন। যদিও চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের চিকিৎসায় শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। চিকিৎসা করাতে বেশি সমস্যা হলে তাদের হাসপাতালের একটি ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করা হবে।
মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামে। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়। মুর্শিদা বেগমের বাবার বাড়ি একই উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে। ফরিদুল ইসলামের বয়স যখন ৭ বছর তখন তার বাবা মারা যান। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন তখনই। ব্র্যাক স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও, ইতি টানতে হয় জীবনবাস্তবতায়। মা কোনোমতে এখানে-সেখানে কাজ করে সংসার চালান। কর্মে নিযুক্ত হন ফরিদ। একটু বোঝার মতো বয়স হলেই নেমে পড়েন রাজমিস্ত্রির কাজে। যেদিন কাজ নেই, সেদিন টাকা নেই।
এমন অবস্থায় তার উপার্জনের সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। যদিও তার মা এখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দুই সন্তানের পর আর কোনো সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না দম্পতির।
ফরিদ জানান, দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যখন শিশুটির জন্ম হয়, তখন ওই কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য একটি র্যালি। সেই র্যালির বাদ্যযন্ত্রের শব্দ কানে আসছিল যখন আমার এই সন্তানের জন্ম হয়।
যখন তারা জানতে পারেন, পহেলা বৈশাখে দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করা প্রথম সন্তান তাঁর। তখন তারা কিছুটা থমকে যান, একটু হাসি দিয়ে বলেন, ওহ। তাদের মুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দ কিন্তু ভেতরে সন্তান সুস্থ হবে কিনা সেই আতঙ্ক। বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম হওয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মুর্শিদা বেগমের বড় বোন মোস্তাকিমা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের মামি মোছা.
দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স লাভলী বেগম বলেন, সকালে জন্মের পর দুপুরের দিকে বমি করে শিশুটি। অসুস্থতা দেখা দেয়। দুধ খাওয়ায় অনীহা ছিল। ফলে শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন তারা। এরপর শিশু বিশেষজ্ঞ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলে বিকেলে ভর্তি করানো হয়। দেওয়া হয় স্যালাইন। তবে এখন শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মা-বাবা।
মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কথা হয় শিশুটির মা মুর্শিদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন একটু স্যালাইন ও চিকিৎসা দেওয়ার পর ভালো আছে। সন্তান হওয়ার পর তো এখন আনন্দ। প্রথমে তো কষ্ট হয়েছিল। নাম রাখা হয়নি, ওর বাবা আছে, দাদি আছে তারা রাখবে। এখন ভালো আছি।’
ফরিদ বলেন, ‘ফজরের আজানের পরই মুর্শিদা আমাকে ডেকে প্রসব বেদনার কথা জানায়। ডাক্তার ৮ এপ্রিল সম্ভাব্য তারিখ বলেছিলেন। আমার মা বাড়িতে ছিলেন না। মা আসার পর সকালেই অটোতে করে হাসপাতালে যাই। ওষুধ নিতে গিয়ে দেখি পহেলা বৈশাখের র্যালি যাচ্ছে। ডেলিভারি কক্ষ প্রবেশের ১০ মিনিট পরই বাবুর কান্না শুনতে পাই। পরে আমার মামি বাবুকে কোলে নিয়ে এসে আমাকে জানায় ছেলে হয়েছে। এ এক অন্যরকম আনন্দ। আমার বড় ছেলে মুরসালিন ওর নাম রেখেছে মুশফিকুর রহিম।
তিনি বলেন, এর আগে তাকে মাতৃসদনেই চিকিৎসা করিয়েছি। আমি সদরে (জেনারেল হাসপাতাল) আল্ট্রাসনোগ্রাম করেয়েছি। সেখানে আমাকে প্রথম তারিখ দেয় ৮ এপ্রিল। এর দেড় মাস পর আবারও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর ডেলিভারির সময় দিয়েছিল ১৪ তারিখ। ওজন তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। শিশুটি অসুস্থ হলে ডা. ওয়াহেদ সাহেবের কাছে নিয়ে গেলে তিনি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।
তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘আমার লেখাপড়া তেমন নাই। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন আমার বাবা মারা যান। আমার ভাই নাই। আমাকে মা মানুষ করেছেন। আমার স্ত্রী ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর সম্ভব হয়নি। এখন সন্তান, ঘর সামলানোর পাশাপাশি টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করে। বাচ্চাকে এখনও কোনো কিছু কিনে দিইনি। আমার বাচ্চাকে প্রথম কোলে নিয়েছিল আমার মামি। আমি মামার বাড়িতেই বড় হয়েছি। মেয়ে নার্স হবে, ছেলে ভোকেশনালে পড়বে আর একে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন আমাদের।’
শিশুর খালা মোস্তাকিনা বেগম বলেন, ‘ভালো লাগতেছে। আমাদের বাচ্চা পহেলা বৈশাখের প্রথম বাচ্চা জানতাম না, এখন জানলাম। আনন্দ লাগতেছে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। চিকিৎসা হচ্ছে। এখানে ইনজেকশন ফ্রি, ওষুধ খাওয়াচ্ছে ফ্রি। যেগুলো নাই, সেগুলো কিনে নিতে হচ্ছে আর মনের ভেতর তো আনন্দ আসতেছে, আমার বোনের ছেলে হলো পহেলা বৈশাখেই।’
শিশুটির বড় বোন ফারিয়া আক্তার ইভা বলে, ‘ভাইকে ডাক্তার বানাব, ভালো করে পড়ালেখা করাব। মারামারি, ঝগড়াঝাটি করতে মানা করব। সবার সঙ্গে যেন ভালো ব্যবহার করে।’
দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘শিশুটির পহেলা বৈশাখে জন্ম হয়েছে। ওর জন্য শুভকামনা। তার জন্মের পরপরই একটি ইনফেকশন তৈরি হয়েছে। অনেক কারণে সংক্রমণের মাত্রাটা বেড়েছে। এটা এখানে চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যাবে। বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যদি কোনো ওষুধের স্বল্পতা থাকে বা শেষ হয়ে যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের ফান্ড থেকে শিশুটির চিকিৎসার সার্বিক সহায়তা করা হবে।’
এ সহায়তার আশ্বাসে কিছুটা স্বস্তি এলেও মুর্শিদা-ফরিদের চিন্তার শেষ নেই। তবে সবার প্রত্যাশা– শিশুটি সুস্থ হয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরবে সবার সঙ্গে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফর দ ল ইসল ম র আম র ব ক জ কর র জন ম প রথম আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
সিরাজ–কৃষ্ণাতে ম্যাচে ফিরল ভারত
অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফিতে মোহাম্মদ সিরাজের মতো আর কোনো পেসার নেই, এভাবে বলাই যায়। কারণ, সিরাজ ও ক্রিস ওকসই এই সিরিজের সব কটি ম্যাচ খেলেছেন। সেই ওকসও ওভাল টেস্টের প্রথম দিনে চোট পেয়ে টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন, টিকে আছেন সিরাজ।
টিকে থাকা সিরাজ কী করেছেন? গতকাল ওভাল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৮ ওভারের এক স্পেলে ফিরিয়েছেন ওলি পোপ, জো রুট, জ্যাকব বেথেলকে। এরপর আরও এক উইকেট। সিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন প্রসিধ কৃষ্ণা। দ্বিতীয় সেশনের শেষ ওভারে দুই উইকেটসহ তিনিও নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভারতের ২২৪ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড অলআউট হয়েছে ২৪৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত কাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে। দুই ‘জীবন’ পাওয়া যশস্বী জয়সোয়াল ৫১ ও আকাশ দীপ ৪ রান নিয়ে উইকেটে আছেন।
অথচ কাল প্রথম সেশন শেষে ম্যাচের চিত্র ছিল আলাদা। ইংল্যান্ড প্রথম ১৬ ওভারেই তোলে ১ উইকেটে ১০৯ রান। দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট ৭৭ বলে গড়েন ৯২ রানের জুটি। এমন বাজবলীয় শুরুর পর চিত্র পুরোপুরি বদলে যায় দ্বিতীয় সেশনে। শুরুটা করেন কৃষ্ণা। তাঁর শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ক্রলি। পরের গল্পটা সিরাজের। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৩১ রান দেওয়া সিরাজকে অধিনায়ক গিল যখন বোলিংয়ে আনেন, তখন ইংল্যান্ডের রান ২৪ ওভারে ২ উইকেটে ১৪২। তিনি একে একে ফেরান দুই সেট ব্যাটসম্যান পোপ (২২), রুটকে (২৯) ও বেথেলকে (৬)। এরপর কৃষ্ণার দুই উইকেটে দ্বিতীয় সেশনটা পুরোপুরি ভারতের হয়ে যায়। ইংল্যান্ড দ্বিতীয় সেশনে ১০৬ রান তুলতে হারায় ৬ উইকেট। তৃতীয় সেশনে আর ৩২ রান যোগ করতে পারে তারা।
আরও পড়ুনকাঁধের চোটে ভারতের বিপক্ষে আর খেলতে পারবেন না ওকস১১ ঘণ্টা আগেলোকেশ রাহুলকে আউট করার পর অ্যাটকিনসনের আনন্দ