অভাবের সংসার। রাজমিস্ত্রির কাজ করে পাঁচ সদস্যের ভার বহন করেন ফরিদুল ইসলাম। বৈশাখে প্রথম সকালে আলোকিত করে তাদের সংসারে এসেছে নতুন সন্তান। কিন্তু এ আনন্দের সংবাদকেই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ বলছেন মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলাম দম্পতি। তাদের কথা থেকে বোঝা যায় তারা বেশ বিপাকে আছেন এ আনন্দময় খবরে।

দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জন্ম হয় তাদের তৃতীয় ছেলেসন্তানের। শিশুটি জন্মের পরই তার শরীরে দেখা দিয়েছে ইনফেকশন। ফলে বাচ্চাকে ভর্তি করতে হয়েছে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে।
 
সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের বাসিন্দা মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের এখন তিন সন্তান। নরমাল ডেলিভারিতে তাদের তিনটি সন্তানের জন্ম হয়। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নববর্ষের প্রথম দিনে নতুন সন্তানের জন্ম যেমন আনন্দ বয়ে এনেছে, তেমনি অভাব আর সংক্রমণ নতুন শঙ্কায় ফেলেছে তাদের। তবুও শিশুকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা থেমে নেই স্বজনদের। বাবা শিশুটিকে মাদ্রাসায় পড়াতে চাইলেও বোন চায় সে ডাক্তার হবে।
 
এদিকে মায়ের চিন্তার শেষ নেই। তিনি শিশুটি এখন কীভাবে সুস্থ হয়ে উঠবে সেই ভাবনায় প্রহর গুনছেন। যদিও চিকিৎসক জানিয়েছেন, তিন-চার দিনের চিকিৎসায় শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। চিকিৎসা করাতে বেশি সমস্যা হলে তাদের হাসপাতালের একটি ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করা হবে। 

মুর্শিদা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামে। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়। মুর্শিদা বেগমের বাবার বাড়ি একই উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে। ফরিদুল ইসলামের বয়স যখন ৭ বছর তখন তার বাবা মারা যান। জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন তখনই। ব্র্যাক স্কুলে পড়াশোনা শুরু করলেও, ইতি টানতে হয় জীবনবাস্তবতায়। মা কোনোমতে এখানে-সেখানে কাজ করে সংসার চালান। কর্মে নিযুক্ত হন ফরিদ। একটু বোঝার মতো বয়স হলেই নেমে পড়েন রাজমিস্ত্রির কাজে। যেদিন কাজ নেই, সেদিন টাকা নেই।

এমন অবস্থায় তার উপার্জনের সংসারে সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। যদিও তার মা এখনও অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। দুই সন্তানের পর আর কোনো সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না দম্পতির।

ফরিদ জানান, দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যখন শিশুটির জন্ম হয়, তখন ওই কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য একটি র‌্যালি। সেই র‌্যালির বাদ্যযন্ত্রের শব্দ কানে আসছিল যখন আমার এই সন্তানের জন্ম হয়। 

যখন তারা জানতে পারেন, পহেলা বৈশাখে দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করা প্রথম সন্তান তাঁর। তখন তারা কিছুটা থমকে যান, একটু হাসি দিয়ে বলেন, ওহ। তাদের মুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দ কিন্তু ভেতরে সন্তান সুস্থ হবে কিনা সেই আতঙ্ক। বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম হওয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মুর্শিদা বেগমের বড় বোন মোস্তাকিমা বেগম ও ফরিদুল ইসলামের মামি মোছা.

সুলতানা। 

দিনাজপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দায়িত্বরত সিনিয়র নার্স লাভলী বেগম বলেন, সকালে জন্মের পর দুপুরের দিকে বমি করে শিশুটি। অসুস্থতা দেখা দেয়। দুধ খাওয়ায় অনীহা ছিল। ফলে শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন তারা। এরপর শিশু বিশেষজ্ঞ শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলে বিকেলে ভর্তি করানো হয়। দেওয়া হয় স্যালাইন। তবে এখন শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন মা-বাবা। 

মঙ্গলবার সকালে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে কথা হয় শিশুটির মা মুর্শিদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন একটু স্যালাইন ও চিকিৎসা দেওয়ার পর ভালো আছে। সন্তান হওয়ার পর তো এখন আনন্দ। প্রথমে তো কষ্ট হয়েছিল। নাম রাখা হয়নি, ওর বাবা আছে, দাদি আছে তারা রাখবে। এখন ভালো আছি।’ 

ফরিদ বলেন, ‘ফজরের আজানের পরই মুর্শিদা আমাকে ডেকে প্রসব বেদনার কথা জানায়। ডাক্তার ৮ এপ্রিল সম্ভাব্য তারিখ বলেছিলেন। আমার মা বাড়িতে ছিলেন না। মা আসার পর সকালেই অটোতে করে হাসপাতালে যাই। ওষুধ নিতে গিয়ে দেখি পহেলা বৈশাখের র‌্যালি যাচ্ছে। ডেলিভারি কক্ষ প্রবেশের ১০ মিনিট পরই বাবুর কান্না শুনতে পাই। পরে আমার মামি বাবুকে কোলে নিয়ে এসে আমাকে জানায় ছেলে হয়েছে। এ এক অন্যরকম আনন্দ। আমার বড় ছেলে মুরসালিন ওর নাম রেখেছে মুশফিকুর রহিম।

তিনি বলেন, এর আগে তাকে মাতৃসদনেই চিকিৎসা করিয়েছি। আমি সদরে (জেনারেল হাসপাতাল) আল্ট্রাসনোগ্রাম করেয়েছি। সেখানে আমাকে প্রথম তারিখ দেয় ৮ এপ্রিল। এর দেড় মাস পর আবারও আল্ট্রাসনোগ্রাম করার পর ডেলিভারির সময় দিয়েছিল ১৪ তারিখ। ওজন তিন কেজি ৩০০ গ্রাম। শিশুটি অসুস্থ হলে ডা. ওয়াহেদ সাহেবের কাছে নিয়ে গেলে তিনি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। 

তিনি আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘আমার লেখাপড়া তেমন নাই। আমি যখন বুঝতে শিখি তখন আমার বাবা মারা যান। আমার ভাই নাই। আমাকে মা মানুষ করেছেন। আমার স্ত্রী ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও আর সম্ভব হয়নি। এখন সন্তান, ঘর সামলানোর পাশাপাশি টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করে। বাচ্চাকে এখনও কোনো কিছু কিনে দিইনি। আমার বাচ্চাকে প্রথম কোলে নিয়েছিল আমার মামি। আমি মামার বাড়িতেই বড় হয়েছি। মেয়ে নার্স হবে, ছেলে ভোকেশনালে পড়বে আর একে মাদ্রাসায় পড়ানোর স্বপ্ন আমাদের।’ 

শিশুর খালা মোস্তাকিনা বেগম বলেন, ‘ভালো লাগতেছে। আমাদের বাচ্চা পহেলা বৈশাখের প্রথম বাচ্চা জানতাম না, এখন জানলাম। আনন্দ লাগতেছে। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছি। চিকিৎসা হচ্ছে। এখানে ইনজেকশন ফ্রি, ওষুধ খাওয়াচ্ছে ফ্রি। যেগুলো নাই, সেগুলো কিনে নিতে হচ্ছে আর মনের ভেতর তো আনন্দ আসতেছে, আমার বোনের ছেলে হলো পহেলা বৈশাখেই।’ 

শিশুটির বড় বোন ফারিয়া আক্তার ইভা বলে, ‘ভাইকে ডাক্তার বানাব, ভালো করে পড়ালেখা করাব। মারামারি, ঝগড়াঝাটি করতে মানা করব। সবার সঙ্গে যেন ভালো ব্যবহার করে।’ 

দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘শিশুটির পহেলা বৈশাখে জন্ম হয়েছে। ওর জন্য শুভকামনা। তার জন্মের পরপরই একটি ইনফেকশন তৈরি হয়েছে। অনেক কারণে সংক্রমণের মাত্রাটা বেড়েছে। এটা এখানে চিকিৎসা করলেই ভালো হয়ে যাবে। বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। যদি কোনো ওষুধের স্বল্পতা থাকে বা শেষ হয়ে যায় তার ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের ফান্ড থেকে শিশুটির চিকিৎসার সার্বিক সহায়তা করা হবে।’ 

এ সহায়তার আশ্বাসে কিছুটা স্বস্তি এলেও মুর্শিদা-ফরিদের চিন্তার শেষ নেই। তবে সবার প্রত্যাশা– শিশুটি সুস্থ হয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরবে সবার সঙ্গে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফর দ ল ইসল ম র আম র ব ক জ কর র জন ম প রথম আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ