যশোরে ১৪ বাড়িতে হামলা-লুট, জামায়াত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা
Published: 15th, April 2025 GMT
যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়া মধ্যপাড়াতে হতদরিদ্র ১৪টি পরিবারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সকালে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ দুই ঘণ্টা ধরে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ দিকে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, আসামিদের ধরতে অভিযান চালছে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর সদরের রূপদিয়া মধ্যপাড়ার ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করেছেন বাস্তুহীন ১৪টি পরিবার। জমির মূল মালিক সাঈদ বক্স তাদের আশ্রয় দেন। তার মৃত্যুর পর জামায়াত নেতা খবির খাঁ ও তার অনুসারীরা জমিটি নিজেদের দাবি করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। মামলা করেও তারা ব্যর্থ হয়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে জমি দখল নিতে হুমকি-ধমকি শুরু করেন তারা। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল সকালে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ৬০-৭০ জনের একটি সশস্ত্র দল হামলা চালিয়ে ১৪টি বাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় বাড়িতে থাকা নারী-পুরুষের মারধর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, তাদের বাড়িঘর ভাঙচুরের পাশাপাশি সর্বস্ব লুট করে নিয়ে গেছেন হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে ফের হামলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ঘটনার রাতেই ভুক্তভোগী ইজিবাইকচালক মিলন হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। হামলাকারীরা বেশিরভাগই স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ দিকে মঙ্গলবার বিএনপি খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও জেলা সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ভুক্তভোগীরা নেতাকর্মীদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সুষ্ঠু বিচার ও পুনর্বাসনে সব ধরণের সহযোগী করা হবে উল্লেখ করে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ‘এখানে যা হয়েছে, তা নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ। ঘটনার পরপরই বিএনপি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের সহযোগিতা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আবার এসেছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত, ভুক্তভোগী তারা বলছেন, হামলাকারীরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন এমন দুর্বৃত্তদের দায় নেওয়ার কথা নয়। যারা এই কাজটি করেছে, তারা দুর্বৃত্ত, তারা সমাজে অনাচার সৃষ্টি করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বৃত্ত পরিচয়েই বিবেচিত করবে। জামায়াতে ইসলামী যদি এই দুর্বৃত্তদের দায়িত্ব নেয়, তাহলে বিএনপি রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করবে।’
এর আগে জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম রসূলের নেতৃত্বে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘এখানে যারা হামলা করেছে, তারা দুর্বৃত্ত। দখলের নামে যারা হামলা চালিয়েছে; তারা অপরাধী। নিন্দা জানাচ্ছি। আসলে এই হামলার সঙ্গে জামায়াতকে দোষারোপ করা হচ্ছে; এটা ভুল। সুবিধাবাদী গুষ্ঠি এটাকে রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, ‘হামলার পরে আমরাও কয়েকবার ঘটনা স্থলে গিয়েছি। মামলা করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি তদন্ত চলছে।’
ভুক্তভোগী মিলন হোসেন নামে ইজিবাইকচালক বলেন, ‘হামলা ও ভাঙচুরে এক লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার স্ত্রী সালমা খাতুনের ঘর থেকে ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণের দুল নিয়ে যায় হামলাকারীরা। রাজিয়ার ঘর থেকে এক লাখ ৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণের গহনা, ইসমাইলের ঘর থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা, প্রিয়ার ঘর থেকে স্বর্ণের এক জোড়া কানের দুল, আনসারের ঘর থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, মিলনের ঘর থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করা হয়েছে। এছাড়া সিদ্দিকের বাড়ির আসবাবপত্র, টিভি, ফ্রিজ ভাঙচুর করে ৫ লাখ টাকার ক্ষতি এবং নগদ ৩৫ হাজার টাকা লুট করে হামলাকারীরা। হামলাকারীদের মারধরে আনসার, সুফিয়া, রাজিয়া, জানু, পারভীন ও সালমা বেগম আহত হয়েছেন।’
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জামায়াত নেতা হিসেবে পরিচিত স্থানীয় প্রভাবশালী খবির খাঁ ও তার লোকজন এখনও তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য বলছেন। না হলে তাদের বাড়ি-ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। যে কোনো সময় আবারও হামলার শিকার হতে পারেন বলে আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন তারা। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকনের নেতৃত্বে বিএনপির একটি টিম ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও নগদ টাকা সহায়তা দেয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: যশ র জ ম য় ত ইসল ম ব এনপ র ন ত কর ম র জন ত ক র ঘর থ ক কর ছ ন ব এনপ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল
ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।
গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র
গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানেরইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।
ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।
ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।