ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় কংগ্রেস নেতা সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বিস্তারিত পর্যালোচনার পর আজ মঙ্গলবার বিশেষ আদালত এই অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন।

সোনিয়া ও রাহুলের নাম অভিযোগপত্রের এক ও দুই নম্বরে রয়েছে। তাঁদের পাশাপাশি বেআইনি অর্থ পাচারের অভিযোগে এতে আসামি হিসেবে নাম রয়েছে ওভারশিজ কংগ্রেস নেতা শ্যাম পিত্রোদা ও সুমন দুবের।

কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি এই অভিযোগপত্র দাখিল করেছিল ৯ এপ্রিল। বিশেষ বিচারক পর্যালোচনার পর আজ তা গ্রহণ করেন।

বেআইনি আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ আইনে (পিএমএলএ) আনা এই মামলায় এই প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো। দিল্লির রাউজ অ্যাভিনিউয়ের বিশেষ পিএমএলএ আদালতে এই মামলার শুনানি হবে ২৫ এপ্রিল। বিশেষ আদালতের বিচারপতি বিশাল গগনে এ কথা জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহের শুক্রবার ইডি এই মামলায় ন্যাশনাল হেরাল্ডের ৬৬১ কোটি স্থাবর সম্পত্তি দখলের জন্য নোটিশ জারি করেছিল। দিল্লি ও লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থিত ন্যাশনাল হেরাল্ড ও অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডের (এজেএল) দপ্তরগুলো খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় ইডি। মুম্বাই অফিসের ভাড়াটেদের নির্দেশ দেয় ভাড়ার টাকা ইডিতে জমা দিতে। ওই নোটিশ জারির তিন দিনের মধ্যেই সোনিয়া, রাহুলসহ অন্য কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।

স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, গান্ধী পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইডি আটঘাট বেঁধে নেমেছে। আজ সকালেই হরিয়ানায় এক জমি কেনাবেচা মামলায় কংগ্রেস সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট ভদ্রকে জেরার জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল ইডি। টানা ছয় ঘণ্টা জেরা করার পর আগামীকাল বুধবারও তাঁকে জেরার জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে।

একই দিনে বিশেষ পিএমএলএ আদালতের বিচারক সোনিয়া ও রাহুলের বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ২৫ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন কেস ডায়েরি দাখিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে ইডির তদন্ত কর্মকর্তা ও আইনজীবীদের।

জওহরলাল নেহরু প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকা আগাগোড়াই কংগ্রেস পরিচালিত। ২০০৮ সালে ওই ইংরেজি দৈনিকের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে এটির ডিজিটাল সংস্করণ শুরু হয়।

বিজেপি নেতা সুব্রামানিয়াম স্বামী ন্যাশনাল হেরাল্ডের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করেছিলেন ২০১২ সালে। তাঁর অভিযোগ ছিল, গান্ধী পরিবার কংগ্রেস দলের তহবিল ব্যবহার করে এজেএল সংস্থার (যারা ওই পত্রিকার মালিক) কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি দখল করেছে।

স্বামীর অভিযোগ, এজেএলের ৫ হাজার কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি ইয়ং ইন্ডিয়ান নামের এক সংস্থা কিনে নেয় মাত্র ৫০ লাখ টাকায়। সেই ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থার মোট শেয়ারের ৭৬ শতাংশের মালিক সোনিয়া ও রাহুল। দুজনেরই শেয়ার ৩৮ শতাংশ করে। বাকি ২৪ শতাংশ শেয়ার ছিল তৎকালীন কংগ্রেস কোষাধ্যক্ষ মোতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্দেজ, সুমন দুবে ও শ্যাম পিত্রোদার নামে।

অধিগ্রহণের ফলে এজেএলের ৯০ কোটির দেনা যেমন ইয়ং ইন্ডিয়ানের ওপর বর্তায়, তেমনই দিল্লি, মুম্বাই, লক্ষ্ণৌ, পাটনা, ভোপাল, ইন্দোরসহ বিভিন্ন শহরে থাকা স্থাবর সম্পত্তির অধিকারও চলে আসে তাদের হাতে। অধিগ্রহণের পরই কংগ্রেস এজেএলের অনাদায়ী ৯০ কোটি ঋণ মওকুফ করে দেয়।

স্বামীর অভিযোগ, বিনিময়ে সোনিয়া–রাহুলের কাছে চলে আসে পাঁচ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি।

এই মামলায় ২০১৪ সাল থেকে সোনিয়া ও রাহুল জামিনে রয়েছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর এবার শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ