সুন্দরবনে জেলেদের মারধর, দুই নৌকা ছিনতাই বিএসএফের
Published: 16th, April 2025 GMT
সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশি জেলেদের মারধর ও দুটি নৌকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালিন্দি নদীর বয়ারসিংসংলগ্ন উলোখালীর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বিএসএফের মারধরে আহত জেলেরা হলেন– সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মোহাম্মদের ছেলে রমজান আলী, শাহাজান আলী, ফরেজ গাজীর ছেলে শাহাদাৎ গাজী, শাহাজান গাজী, আতাউর গাজী, সৈয়দ গাজীর ছেলে আব্দুল গাজী, মানিকপুর গ্রামের কেরামত ও কৈখালীর নুর মোহাম্মদ।
হামলায় আহত শাহাদাৎ সমকালকে জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের কৈখালী স্টেশন থেকে পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে চার দিন আগে তিনটি নৌকার ১২ জেলে সুন্দরবনে যান। দু’দিন ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের উলোখালীর চরে পাটা জাল পেতে মাছ ধরছিলেন তারা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে আকস্মিক দুটি স্পিডবোটে বিএসএফ সদস্যরা সেখানে গিয়ে তাদের মারধর শুরু করেন। ওই সময় তারা পেতে রাখা জাল ও নৌকা ফেলে বনে ঢুকে আত্মরক্ষা করেন। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে দেখেন জাল থাকলেও দুটি নৌকা নিয়ে গেছেন বিএসএফ সদস্যরা।
স্থানীয় রমজাননগর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান, মারধরের শিকার আট জেলের মধ্যে ছয়জনই তাঁর এলাকার। বিএসএফ নৌকা নিয়ে যাওয়ায় উপায়ন্ত না পেয়ে বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে লোকালয়ে ফিরছেন জেলেরা। তারা এলাকায় ফিরলে বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানানো হবে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মশিউর রহমান জানান, এখনও কেউ বিষয়টি তাদের জানায়নি। খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
বিজিবি কৈখালী ক্যাম্পের সুবেদার আবু বক্কার জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বিষয়টি তাদের জানিয়েছেন। ঘটনাটি বয়ারসিং এলাকার হওয়ায় ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ জানাতে সেখানকার বিজিবি (রিভারাইন) ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন দরবন ব এসএফ স ন দরবন র ম রধর ব এসএফ
এছাড়াও পড়ুন:
উপকূল রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ধস, প্লাবনের আশঙ্কা সুন্দরবন তীরবর্তী জনপদে
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মালঞ্চ নদীর চর দেবে গিয়ে উপকূল রক্ষা বাঁধের পাঁচ নম্বর পোল্ডারের সিংহড়তলী অংশে ভয়াবহ ধসের সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ধস আজ সোমবার আরও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। এর আগে শুক্রবার রাতে আকস্মিকভাবে চুনকুড়ি ও সিংহড়তলী এলাকায় চর দেবে যাওয়ার পর থেকেই বাঁধে ধস শুরু হয়।
খবর পেয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোববার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে কাজ করছেন।
ধস একেবারে জনবসতির কোল ঘেঁষে হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নদীতে জোয়ারের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বাঁধের অবশিষ্ট দুই থেকে আড়াই ফুট অংশ যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হতে পারে। এতে সুন্দরবন তীরবর্তী কয়েকটি জনপদ লবণ পানিতে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মালঞ্চ নদীর ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিলেও সিংহড়তলী অংশের অবস্থা সবচেয়ে সংকটাপন্ন। তারা জানান, দ্রুত বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা না হলে পরবর্তী জোয়ারে সাত থেকে আটটি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবক আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘মাত্র সাত-আট মাস আগে এখানে মাটির কাজ হয়েছিল। বাঁধের পাশে অতিরিক্ত মাটি নেওয়ায় বাঁধ অনেকটা খাড়া হয়ে ছিল। কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়ার পর শনিবার থেকে ধস শুরু হয়। পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে জিওশিট চাপিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও শনিবার রাতে সবকিছু ধসে যায়।’
স্থানীয় বনজীবীদের নেতা বাবলুর রহমান সমকালকে বলেন, শনিবার দুপুরে বাঁধের প্রায় ৩০ ফুট অংশ নদীতে ধসে পড়ে। রোববার সকালের জোয়ারে আরও এক দফা ধসের পর বাঁধের অবশিষ্ট উচ্চতা এখন মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট। তিনি বলেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সিংহড়তলী, চুনকুড়ি, হরিনগর, যতীন্দ্রনগর, ছোট ভেটখালীসহ অন্তত সাতটি গ্রাম তাৎক্ষণিকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নীপা রানী সমকালকে বলেন, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ছয়টি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। সিংহড়তলীর অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বসতবাড়ির পাশে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকাবাসী উদ্বাস্তু হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে একাধিকবার সর্বস্ব হারিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন সমকালকে বলেন, শনিবার বিকেলে ভাঙন কবলিত অংশে শতাধিক জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হলেও তাতে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাঁধের ভেতর দিয়ে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ চলছে। তিনি জানান, রোববার রাতের মধ্যে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ শেষ করা গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন সমকালকে বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ভাটার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। পানি নামলে শত শত গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙন রোধে পুনরায় কাজ শুরু করা হবে।’