ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানির চার কর্মচারী বরখাস্ত
Published: 16th, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিএফসিএল) চার কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিজিএফসিএলের এক কর্মকর্তাকে শারীরিক লাঞ্ছনার ঘটনায় অসদাচরণের অভিযোগে মঙ্গলবার তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া চারজনই বিজিএফসিএলের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) পদধারী নেতা। তাঁরা হলেন বিজিএফসিএলের তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের (দক্ষিণ) বিভাগের অপারেটর-১ (প্ল্যান্ট) মো.
বিজিএফসিএল সূত্রে জানা যায়, ১৩ এপ্রিল বিজিএফসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মনজিল হাসানকে সিবিএর নেতারা লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় মনজিল হাসান বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হাবীবুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জিএম (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠির মাধ্যমে ওই চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্তের পর থেকে মনজিল হাসান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে উল্লেখ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
জিডি ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৩ এপ্রিল সকালে দাপ্তরিক কাজে বিজিএফসিএলের কম্প্রেসর বিভাগে ছিলেন সহকারী ব্যবস্থাপক মনজিল হাসান। সকাল পৌনে ১০টার দিকে পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মচারীর একটি দল সেখানে প্রবেশ করেন। তাঁদের মধ্যে সিবিএর নেতা মোস্তাক, মমিনুল, জামাল ও শাহানুর ছিলেন। তাঁরা মনজিলকে ঘিরে ধরে আসন গ্রহণ করেন। সিবিএ নেতা মোস্তাক মেকানিকদের খসড়া টাইম শিট দেখিয়ে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ওভারটাইম ১০ ঘণ্টা কেটে ৮ ঘণ্টা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তাঁকে (মনজিলকে) জেরা করেন। বিষয়টি নিয়ে সেখানে মনজিলের সঙ্গে কর্মচারীসহ সিবিএর নেতাদের কথা-কাটাকাটি হয়। মমিনুল ও জামাল একপর্যায়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গালাগাল করেন। ওভারটাইম কেটে দেওয়ার বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও বিজিএফসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গালাগালির একপর্যায়ে সিবিএর ওই চার নেতা মনজিলের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। সেখানে আরও কর্মচারী জড়ো হন। উচ্চবাচ্য শুনে উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মোহাম্মদ আরিফুল হক গিয়ে মনজিলকে উদ্ধার করেন। কর্মচারীরা দ্বিতীয় দফায় এসে মনজিলকে হুমকি দিয়ে যান এবং বলেন, মেকানিকেরা প্লান্ট বা ওয়ার্কশপে উপস্থিত না থাকলেও দৈনিক ৪ ঘণ্টা ও মাসিক ১০৪ ঘণ্টা ওভারটাইম দিতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুই কর্মকর্তা বলেন, কর্মচারী ও সিবিএর নেতারা কাজ না করেও কর্মঘণ্টায় ওভারটাইম উল্লেখ করতে যান। নিয়ম মানতে বললেও তাঁরা শোনেন না। প্রতিবাদ করলে দপ্তরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে কর্মকর্তাদের গায়ে হাত দেওয়াসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তাঁদের দাপটে কর্মকর্তারা এখনো অসহায়।
অভিযোগের বিষয়ে সিবিএর সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অবৈধ কোনো দাবি উত্থাপন করিনি। শুক্রবার অফিস বন্ধ থাকে। ওভারটাইম করলে আগে আমরা একবার স্বাক্ষর করতাম, কিন্তু তাঁর বক্তব্য তিনবার স্বাক্ষর করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ডিজিএমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নেতার সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করেছেন। এখন আমাদের ফাঁসানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে বিজিএফসিএলের মহাব্যবস্থাপক মো. হাবীবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত হবে। এটি প্রাথমিক শাস্তি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মনজ ল হ স ন স ব এর ন ত কর মকর ত বরখ স ত
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় এবার ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা, বেড়েছে ২২টি মন্ডপ
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ার মন্ডপগুলোতে চলছে নানা প্রস্ততি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকেরা। গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলায় বেড়েছে ২২টি পূজা মন্ডপ। সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। জেলায় ২৫০টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আবার কোথাও শুরু হয়েছে রঙের কাজ। আপন মনে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা। এখন শেষ সময়ের পূজার প্রস্ততি নিচ্ছেন আয়োজকেরা। দুর্গাপূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মালম্বীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ। প্রতিমা শিল্পীরা ৫টি থেকে ১০টি পর্যন্ত প্রতিমা তৈরি করেছেন।
প্রতিমা শিল্পী কুমারেশ দাস ও মৃত্যুঞ্জয় কুমার পাল জানান, শেষ সময়ে প্রতিমা শিল্পীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে চাহিদাও বেশি।
এদিকে সকলের সহযোগিতায় অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করতে চান আয়োজকরা।
হরিবাসর সার্বজনীন পূজা মন্দিরের উপদেষ্টা বিপ্রজিৎ বিশ্বাস বলেন, “আশা করছি প্রতিবছরের মতো এবছরও উৎসব মুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের সহযোগিতা ও আশ্বাসে আমরা আমাদের পূজার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।”
মিলপাড়া সাবর্জনীন পূজা মন্দিরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী বাগচী বলেন, “প্রত্যেক ধর্মকে সন্মান জানানো প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমাদের উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এলাকার সকলেই আমাদের পাশে থাকেন। আশাকরি এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।”
কুষ্টিয়া মহাশ্মশান মন্দিরের পুরোহিত পলাশ চক্রবর্ত্তী বলেন, “আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দশভূজার আগমন হবে হাতিতে চড়ে আর কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ৬ উপজেলায় ২৫০ মন্দিরে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮১টি, খোকসা উপজেলায় ৫৯টি, কুমারখালী উপজেলায় ৫৯টি, মিরপুর উপজেলায় ২৮টি, ভেড়ামারা উপজেলায় ১১টি ও দৌলতপুর উপজেলায় ১২টি মন্ডবে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এ বছর গত বছরের তুলনায় ২২টি মন্ডপে পূজা বেড়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়দেব বিশ্বাস বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ২২টি পূজা বেশি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশাসনের সাথে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের বৈঠক হয়েছে। এছাড়া ১৯টি ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে।”
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, “প্রতিটা পূজা মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পূজা মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনসহ পুলিশ ও আনসার মোতায়েন করা হবে।”
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন জানান, যার যার ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করা তাদের অধিকার। কোন প্রোপাগান্ডা ও গুজবে কান দেওয়া যাবে না। বর্তমান সরকারের মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। মব সৃষ্টি করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/কাঞ্চন/এস