Samakal:
2025-06-16@03:26:58 GMT

‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’

Published: 16th, April 2025 GMT

‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’

চৈত্রসংক্রান্তির দিন গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে যাওয়ার বিষয়ে দোনোমনা করছিলেন খালেদ। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসই তাকে উৎসাহ জোগালেন। বললেন, ‘ডাক্তার বলেছে আমার ডেলিভারির তারিখ ২৬ এপ্রিল, আরও দুই সপ্তাহ সময় আছে। চিন্তা করবেন না, আপনি যান বিয়েতে।’ 

খালেদ মনছুর পেশায় সাংবাদিক, চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিকের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিকেরও আনোয়ারা উপজেলা প্রতিনিধি। ঘরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। খুব বেশি জরুরি না হলে রাতে কোথাও যান না, গেলেও খালেদ মনছুরের মনটা পড়ে থাকে ঘরে। সেদিন স্ত্রীর অনুরোধে গিয়েছিলেন বিয়েতে। বিয়েবাড়ির কোলাহলেও মোবাইলে স্ত্রীর মেসেজটুকু মিস করেননি খালেদ। রাত ১১টার দিকে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠল স্ত্রীর মেসেজ, ‘আমার পেইন উঠেছে, তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন।’

অনেকটা বাতাসের গতিতে বাড়িতে ছুটে গেলেন খালেদ। স্ত্রীর ব্যথাতুর মুখটা দেখে যা বোঝার বুঝে ফেললেন। বাড়ির লোকরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে এলেন। ১২টা বাজার আগেই সিএনজি অটোরিকশা করে স্ত্রীকে নিয়ে ছুটলেন চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশে; সঙ্গে আছেন মনছুরের মা ষাটোর্ধ্ব রাবেয়া খানম। বিপদে মুরব্বিরাই ভরসা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে আনোয়ারা সদরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। সদর থেকে খালেদের গ্রাম চৌমুহনীর দূরত্ব আরও ৪ কিলোমিটার। মোট ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরের আন্দরকিল্লার জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালে পৌঁছাতে রাত ১টা বেজে গেল। রাত ২টার দিকে কেবিনে নেওয়া হলো জান্নাতুল ফেরদৌসকে। সাড়ে ৩ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারির পর প্রায় ৬টায় কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন জান্নাতুল। তখন পুব আকাশে হাসির আভা ছড়াচ্ছিল সূয্যি মামা। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম হলো খালেদ-জান্নাতুলের তৃতীয় সন্তান। আনন্দের ঢেউ লেগে গেল পরিবারে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই দারুণ খুশি। নববর্ষের শুভেচ্ছা ও বাবা হওয়ার অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হতে লাগলেন খালেদ-জান্নাতুল দম্পতি। 

সেই মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশ করে খালেদ মনছুর বলেন, ‘স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির পর কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। কারণ ব্যথা উঠেছে প্রায় ৪ ঘণ্টা আগে। এরপর ২৮ কিলোমিটার জার্নি। মনেপ্রাণে চাইছিলাম নরমাল ডেলিভারি হোক। আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের দিন আমার তৃতীয় কন্যার জন্ম হওয়ায় আনন্দ হয়েছে দ্বিগুণ। মোবাইলের মেসেজ, ফেসবুকের ইনবক্স, হোয়াটসআপে বন্ধু ও স্বজনরা আমাকে দু’বার করে উইশ করেছে। নববর্ষে পেয়েছি বাবা হওয়ার আনন্দ। আমার কন্যা অনেক ভাগ্যবতী।’

বাংলা নববর্ষের দিন সন্তানকে কোলে নিতে পেরে খুশি আর ধরে না জান্নাতুল ফেরদৌসেরও। আবহমান বাংলার বধূ বেশে ঘোমটা টেনে তিনি বলেন, ‘স্বজনদের একসঙ্গে দুই আনন্দের মিষ্টি খাইয়েছি। আপনারাও খেয়ে যান।’

খালেদ মনছুরের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী গ্রামে। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুলের বাড়ি একই উপজেলার পরৈকোড়ায়। আট বছর আগে পরিবারের পছন্দে তাদের বিয়ে হয়।

হাসপাতালের কেবিনের এক পাশে মিটিমিটি হাসছিলেন নবজাতকের দাদি রাবেয়া খানম। বললাম, পহেলা বৈশাখে দাদি হলেন, নাতিনকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করলেন? তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বললেন তা হলো– ‘আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। কারও জন্ম এমন আনন্দের দিনে (পহেলা বৈশাখ) হয়নি। নার্স যখন খবর দিলেন আমার একটি নাতিন হয়েছে, তখন সবে পুব আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য উঁকি দিয়েছে। আমার নাতিন যেন সূর্যোদয়ের সাক্ষী।’

মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি লেবার রুমে থাকার সময় পাশের কক্ষে ডাক্তার-নার্সরা ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে কী যেন বলছিলেন। প্রসব হওয়ার পর একজন নার্স বাচ্চাকে উঁচু করে তুলে ধরে আমাকে বললেন, এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ।’ তারপরই তারা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন।

মঙ্গলবার জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের কেবিনে ছোট বোনকে নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলছিল বড় দুই বোন ওয়াজিফা খানম (৬) ও নুসাইবা খানমের মধ্যে। দু’জনই বোনকে কোলে নেওয়ার জন্য বারবার বায়না ধরছিল। ওয়াজিফা খানম গ্রামের তালিমুল কোরআন মাদ্রাসায় ক্লাস ওয়ানে পড়ে। নুসাইবা এখনও বিদ্যালয়ে যায়নি। তিন কন্যাকেই উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন মা-বাবার।

বোনের কী নাম রাখবে? দুই বোনের উদ্দেশে এই প্রশ্ন করলে কথা টেনে নেন তাদের দাদি। তিনি বলেন, ‘আমার নামের সঙ্গে মিল রেখেই দুই নাতিন ওয়াজিফা খানম ও নুসাইবা খানমের নাম  রেখেছি; নতুন মেহমানের নাম রাখব মাহমুদা খানম।’ কবে নাম রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজ বিকালে আমরা গ্রামের বাড়ি চলে যাব। গ্রামে একটা প্রথা আছে, সাত দিনের দিন বাচ্চার মাথা মুণ্ডন করতে হয়। সেদিন একটা অনুষ্ঠান করে স্বজনদের দাওয়াত খাওয়াব। ওই অনুষ্ঠানেই মৌলবি ডেকে নাতিনের নাম রাখব।’

গ্রাম থেকে এত দূরে জেমিসন হাসপাতালে কেন এলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে  মনছুর বলেন, ‘কারণ আমার আগের দুই সন্তানের জন্মও এ হাসপাতালে হয়েছে। এখানে নরমাল ডেলিভারির জন্য শতভাগ চেষ্টা করা হয়।’

ডাক্তার ফারজানা বীথি জানান, মা ও শিশু ভালো আছে। তারা নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। বাচ্চার ওজন ও স্বাস্থ্য ভালো। বাচ্চা বুকের দুধও পাচ্ছে।

দুই কন্যার পর এবার কি ছেলে সন্তানের আশা ছিল? ফিরে আসার সময় কথাটা বলেছিলাম মনছুরের কাছে। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ যা দিয়েছে তা অতুল্য। এই সময়ে ছেলেমেয়ের মধ্যে খুব একটা তফাত দেখি না। বরং মেয়েরা বেশি বাপকাতুরে হয়। রাতে আমি বাড়ি ফিরলে বড় দুই মেয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে বাবার শার্টটা আগে হাতে নেবে, কে বাবার জুতাটা আগে খুলে দেবে এই আনন্দ স্বর্গীয়।’ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সন্তানদের জন্য দোয়া চান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববর ষ র অন ষ ঠ ন বলল ন আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।

বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।

প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।

অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।

ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।

জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

যেসব কারণে অনুপস্থিতি

যেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।

দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।

আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।

নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।

প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।

বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ