Samakal:
2025-04-30@20:22:36 GMT

‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’

Published: 16th, April 2025 GMT

‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’

চৈত্রসংক্রান্তির দিন গ্রামে এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে যাওয়ার বিষয়ে দোনোমনা করছিলেন খালেদ। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসই তাকে উৎসাহ জোগালেন। বললেন, ‘ডাক্তার বলেছে আমার ডেলিভারির তারিখ ২৬ এপ্রিল, আরও দুই সপ্তাহ সময় আছে। চিন্তা করবেন না, আপনি যান বিয়েতে।’ 

খালেদ মনছুর পেশায় সাংবাদিক, চট্টগ্রামের একটি স্থানীয় দৈনিকের পাশাপাশি জাতীয় দৈনিকেরও আনোয়ারা উপজেলা প্রতিনিধি। ঘরে সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। খুব বেশি জরুরি না হলে রাতে কোথাও যান না, গেলেও খালেদ মনছুরের মনটা পড়ে থাকে ঘরে। সেদিন স্ত্রীর অনুরোধে গিয়েছিলেন বিয়েতে। বিয়েবাড়ির কোলাহলেও মোবাইলে স্ত্রীর মেসেজটুকু মিস করেননি খালেদ। রাত ১১টার দিকে মোবাইলের স্ক্রিনে ভেসে উঠল স্ত্রীর মেসেজ, ‘আমার পেইন উঠেছে, তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন।’

অনেকটা বাতাসের গতিতে বাড়িতে ছুটে গেলেন খালেদ। স্ত্রীর ব্যথাতুর মুখটা দেখে যা বোঝার বুঝে ফেললেন। বাড়ির লোকরা দ্রুত গাড়ি নিয়ে এলেন। ১২টা বাজার আগেই সিএনজি অটোরিকশা করে স্ত্রীকে নিয়ে ছুটলেন চট্টগ্রাম শহরের উদ্দেশে; সঙ্গে আছেন মনছুরের মা ষাটোর্ধ্ব রাবেয়া খানম। বিপদে মুরব্বিরাই ভরসা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে আনোয়ারা সদরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। সদর থেকে খালেদের গ্রাম চৌমুহনীর দূরত্ব আরও ৪ কিলোমিটার। মোট ২৮ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরের আন্দরকিল্লার জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালে পৌঁছাতে রাত ১টা বেজে গেল। রাত ২টার দিকে কেবিনে নেওয়া হলো জান্নাতুল ফেরদৌসকে। সাড়ে ৩ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারির পর প্রায় ৬টায় কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন জান্নাতুল। তখন পুব আকাশে হাসির আভা ছড়াচ্ছিল সূয্যি মামা। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম হলো খালেদ-জান্নাতুলের তৃতীয় সন্তান। আনন্দের ঢেউ লেগে গেল পরিবারে। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই দারুণ খুশি। নববর্ষের শুভেচ্ছা ও বাবা হওয়ার অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হতে লাগলেন খালেদ-জান্নাতুল দম্পতি। 

সেই মুহূর্তের অনুভূতি প্রকাশ করে খালেদ মনছুর বলেন, ‘স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তির পর কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। কারণ ব্যথা উঠেছে প্রায় ৪ ঘণ্টা আগে। এরপর ২৮ কিলোমিটার জার্নি। মনেপ্রাণে চাইছিলাম নরমাল ডেলিভারি হোক। আল্লাহ আমার ইচ্ছে পূরণ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের দিন আমার তৃতীয় কন্যার জন্ম হওয়ায় আনন্দ হয়েছে দ্বিগুণ। মোবাইলের মেসেজ, ফেসবুকের ইনবক্স, হোয়াটসআপে বন্ধু ও স্বজনরা আমাকে দু’বার করে উইশ করেছে। নববর্ষে পেয়েছি বাবা হওয়ার আনন্দ। আমার কন্যা অনেক ভাগ্যবতী।’

বাংলা নববর্ষের দিন সন্তানকে কোলে নিতে পেরে খুশি আর ধরে না জান্নাতুল ফেরদৌসেরও। আবহমান বাংলার বধূ বেশে ঘোমটা টেনে তিনি বলেন, ‘স্বজনদের একসঙ্গে দুই আনন্দের মিষ্টি খাইয়েছি। আপনারাও খেয়ে যান।’

খালেদ মনছুরের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চাতরী গ্রামে। তাঁর স্ত্রী জান্নাতুলের বাড়ি একই উপজেলার পরৈকোড়ায়। আট বছর আগে পরিবারের পছন্দে তাদের বিয়ে হয়।

হাসপাতালের কেবিনের এক পাশে মিটিমিটি হাসছিলেন নবজাতকের দাদি রাবেয়া খানম। বললাম, পহেলা বৈশাখে দাদি হলেন, নাতিনকে নিয়ে কী পরিকল্পনা করলেন? তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যা বললেন তা হলো– ‘আমার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। কারও জন্ম এমন আনন্দের দিনে (পহেলা বৈশাখ) হয়নি। নার্স যখন খবর দিলেন আমার একটি নাতিন হয়েছে, তখন সবে পুব আকাশে লাল আভা ছড়িয়ে সূর্য উঁকি দিয়েছে। আমার নাতিন যেন সূর্যোদয়ের সাক্ষী।’

মা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি লেবার রুমে থাকার সময় পাশের কক্ষে ডাক্তার-নার্সরা ডিসি হিলে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে কী যেন বলছিলেন। প্রসব হওয়ার পর একজন নার্স বাচ্চাকে উঁচু করে তুলে ধরে আমাকে বললেন, এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ।’ তারপরই তারা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানালেন।

মঙ্গলবার জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের কেবিনে ছোট বোনকে নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলছিল বড় দুই বোন ওয়াজিফা খানম (৬) ও নুসাইবা খানমের মধ্যে। দু’জনই বোনকে কোলে নেওয়ার জন্য বারবার বায়না ধরছিল। ওয়াজিফা খানম গ্রামের তালিমুল কোরআন মাদ্রাসায় ক্লাস ওয়ানে পড়ে। নুসাইবা এখনও বিদ্যালয়ে যায়নি। তিন কন্যাকেই উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন মা-বাবার।

বোনের কী নাম রাখবে? দুই বোনের উদ্দেশে এই প্রশ্ন করলে কথা টেনে নেন তাদের দাদি। তিনি বলেন, ‘আমার নামের সঙ্গে মিল রেখেই দুই নাতিন ওয়াজিফা খানম ও নুসাইবা খানমের নাম  রেখেছি; নতুন মেহমানের নাম রাখব মাহমুদা খানম।’ কবে নাম রাখবেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজ বিকালে আমরা গ্রামের বাড়ি চলে যাব। গ্রামে একটা প্রথা আছে, সাত দিনের দিন বাচ্চার মাথা মুণ্ডন করতে হয়। সেদিন একটা অনুষ্ঠান করে স্বজনদের দাওয়াত খাওয়াব। ওই অনুষ্ঠানেই মৌলবি ডেকে নাতিনের নাম রাখব।’

গ্রাম থেকে এত দূরে জেমিসন হাসপাতালে কেন এলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে  মনছুর বলেন, ‘কারণ আমার আগের দুই সন্তানের জন্মও এ হাসপাতালে হয়েছে। এখানে নরমাল ডেলিভারির জন্য শতভাগ চেষ্টা করা হয়।’

ডাক্তার ফারজানা বীথি জানান, মা ও শিশু ভালো আছে। তারা নিয়মিত পরামর্শ নিচ্ছেন। বাচ্চার ওজন ও স্বাস্থ্য ভালো। বাচ্চা বুকের দুধও পাচ্ছে।

দুই কন্যার পর এবার কি ছেলে সন্তানের আশা ছিল? ফিরে আসার সময় কথাটা বলেছিলাম মনছুরের কাছে। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ যা দিয়েছে তা অতুল্য। এই সময়ে ছেলেমেয়ের মধ্যে খুব একটা তফাত দেখি না। বরং মেয়েরা বেশি বাপকাতুরে হয়। রাতে আমি বাড়ি ফিরলে বড় দুই মেয়ের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়, কে বাবার শার্টটা আগে হাতে নেবে, কে বাবার জুতাটা আগে খুলে দেবে এই আনন্দ স্বর্গীয়।’ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সন্তানদের জন্য দোয়া চান তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববর ষ র অন ষ ঠ ন বলল ন আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের

কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। 

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে "বাংলা নববর্ষ: ইতিহাস, সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকার" শীর্ষক এক সেমিনারে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংস্কৃতিক তাৎপর্য ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অনুরোধ করেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, কেবল বাংলা নববর্ষই নয়, যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা জরুরি। রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্র ও সমাজের সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠলে কোনো উৎসবই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয় না। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সাংস্কৃতিক চিন্তা-চেতনার যে স্বকীয়তা রয়েছে, তা অক্ষুণ্ন রাখাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। বুদ্ধিভিত্তিক ও সচেতন উদ্যোগের মাধ্যমে ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। বাংলা নববর্ষের প্রতি জনগণের গভীর অনুরাগ রয়েছে, তাই এটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে।

সেমিনারে আইআরডিসি’র সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হকের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন 
আইআরডিসি-এর সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন।

সেমিনারে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নাছির আহমেদ তার মূল প্রবন্ধে বাংলা নববর্ষের ঐতিহাসিক বিবর্তন এবং নববর্ষ উদযাপনের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার নিয়ে দুই পর্বে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষ কেবল বাঙালিদের উৎসব নয়, বরং এটি ধর্ম, গোত্র ও সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশির একটি সমন্বিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া, বাংলা সনের উৎপত্তি, এর অর্থনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা এবং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মাত্রা নিয়েও তিনি গভীরভাবে আলোকপাত করেন।

এছাড়াও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্‌দীন এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফজলে এলাহি চৌধুরী প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁরা বাংলা নববর্ষের আন্তর্জাতিক ও  সামাজিক সংহতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে এর ভূমিকা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন। একইসাথে বাংলা নববর্ষের বহুমাত্রিক তাৎপর্য ও এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন।

এসময় সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপহার পেল পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া জেরিনের পরিবার
  • ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উৎসবকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে: মোহাম্মদ আজম
  • দৃশ্যপটে ‘আনন্দ’, মঙ্গল কোথায়
  • যেকোনো উৎসবকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের