মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবো
Published: 16th, April 2025 GMT
অপারেশন থিয়েটার থেকে কাপড়ে মোড়ানো শিশুটিকে বের করতেই নার্সের কোল থেকে দ্রুত নিজের কোলে তুলে নিলেন সোহাগ হোসেন। মনে হলো, তিনি এর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন। কোলে নিয়ে শিশুটিকে আদর করতে থাকেন সোহাগ। এরপর তার কাছ থেকে একে একে নানি, খালাসহ উপস্থিত অন্য স্বজনরা কোলে নেন। সবার মুখে হাসি। সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবার এত খুশি হওয়ার কারণ, এটা সোহাগ হোসেন ও সুমি আক্তারের প্রথম সন্তান। তার ওপর পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়ায় তাদের আনন্দ যেন একটু বেশিই।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা গ্রামের আসবাব ব্যবসায়ী সোহাগ। গত সোমবার বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ফ্যামেলি কেয়ারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুমি। সারা শহর যখন বৈশাখের আমেজে মাতোয়ারা, তখন সন্তানকে কোলে পেয়ে আত্মহারা এই দম্পতি।
তাঁরা জানান, পারিবারিকভাবে বছর খানেক আগে সোহাগ ও সুমির বিয়ে হয়। এর দেড়-দুই মাসের মাথায় সুমির গর্ভে সন্তান আসে। তখন থেকেই এই দম্পতি প্রহর গুনছিলেন– কখন তাঁরা সন্তানের মুখ দেখবেন। এলাকার রীতি অনুযায়ী প্রত্যক নারী প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার দেড়-দুই মাস আগে বাবার বাড়িতে যান। সে অনুযায়ী গত রমজান মাসে বাবার বাড়িতে যান সুমি। চিকিৎসকের ধারণা অনুযায়ী তাঁর সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা আরও এক সপ্তাহ পর। কিন্তু এর আগেই সোমবার রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ সুমির প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তখন তাঁর স্বামী সোহাগ কাছে ছিলেন না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাতেই তাঁকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে আমতলী এলাকায় ফ্যামেলি কেয়ারে নিয়ে যান। সোহাগ খবর পেয়ে ছুটে যান সেখানে। তখন থেকে চিকিৎসকরা নরমালে প্রসব করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সকাল ৬টায় সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এর মাধ্যমে পহেলা বৈশাখে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয় সোহাগ-সুমির। সেই সঙ্গে বিশেষ দিনটি আরও স্মরণীয় হয়ে থাকল।
সুমি আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যথা ওঠায় খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আর বাঁচবো না। এ সময় আমার স্বামীও কাছে ছিল না। তাই মনে হচ্ছিল, এই রাতই আমার শেষ রাত। স্বামী-সন্তানের মুখ আর দেখতে পাবো না। গভীর রাতে বাবা-মা কীভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাও ঠিকঠাক বলতে পারি না। ওই মুহূর্তে অনেক বার আল্লাহকে স্মরণ করেছি। একবার দেখি আমার স্বামী কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন মনে শক্তি পাই। ভাবলাম– এখন মারা গেলেও অন্তত সন্তানের বাবা ওর দায়িত্ব নেবে। ওকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই দু’জন মিলে সন্তানের নাম রেখেছি সিদরাতুল মুনতাহা। সাত দিনের মাথায় এই নামেই আকিকা দেওয়া হবে। আমার সন্তান বড় হয়ে কোরাআনের হাফেজা হবে। দ্বীন শিক্ষা দেবে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
পহেলা বৈশাখে সন্তানের জন্ম হবে, এ কথা কখনও ভাবেননি সুমি। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলেছিল, এ মাসের ২১ অথবা ২২ তারিখে সন্তান হবে। কিন্তু তার আগে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই আমাদের সন্তান পৃথিবীতে এলো। তবে যেটা হয়েছে মন্দ না। আর যাই হউক অন্তত সন্তানের জন্ম তারিখ সব সময় মনে থাকবে!’
সুমির মা আনজু আরা বেগম বলেন, ‘সম্ভাব্য তারিখের আগে সিজার করে সন্তান প্রসব করাতে হবে, এটা নিয়ে ভয়েই ছিলাম। তবে ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিকতায় সব ভয় কেটে গেছে। নাতনির মুখ দেখে সব ভুল গেছি।’
শিশুটির ছোট খালা হাবিবা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা ঠিক আমার বড় আপার মতো হয়েছে। ওর বাবা-মা আগেই নাম ঠিক করে রেখেছে। তা না হলে আমি ওর নাম বৈশাখী রাখার জন্য দুলাভাইকে বলতাম। তবে আমি ওকে বৈশাখী বলেই ডাকবো।’
সোহাগ হোসেন বলেন, ‘বৈশাখ কী, আর চৈত্র কী, ছেলে কী আর মেয়ে কী, সন্তান তো সন্তানই। সন্তানের মুখ দেখে খুবই ভালো লাগছে। দুই দিন আগেও কাজের চাপে বাড়িতে যাওয়া ভুলে যেতাম। কিন্তু এখন সন্তানকে রেখে কোথায় যেতে মন চাইছে না।’
সুমির সিজারিয়ান অপারেশন করেন জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌসী শাপলা। তিনি বলেন, ‘এই রোগী রোববার রাত দেড়টায় ভর্তি হন। সব স্বাভাবিক থাকায় তখন থেকে নরমালে প্রসব করার চেষ্টা করি। পরে ভোর ৬টায় সিজার করে শিশুটি জন্ম নেয়। তার ওজন ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে প্রথম এই শিশুর জন্ম হওয়ায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির বাবা, নানি ও খালাকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।’
হাসপাতালের পরিচালক জামাল উদ্দীন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি নরমালে প্রসব করানোর। তবে তা সম্ভব হয়নি। ভোর ৬টায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে সিজার করা হয়। নববর্ষের প্রথম প্রহরে প্রথম শিশুটি জন্ম নেওয়ায় সবার নজর কেড়েছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নববর ষ র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’