ইসরায়েলের সেনাদের যুদ্ধের পরেও গাজায় রাখার ঘোষণা
Published: 17th, April 2025 GMT
ইসরায়েলের সেনাদের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও গাজার তথাকথিত বিভিন্ন নিরাপত্তা অঞ্চলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ। নিরাপত্তা অঞ্চল বা বাফার জোনে থাকা এসব ইসরায়েলি সেনারা ‘যে কোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পরিস্থিতিতে’ দেশটির মানুষকে সুরক্ষা দেবে। লেবানন ও সিরিয়াতেও নতুন করে তৈরি করা বাফার জোনে দেশটির সেনার অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবেন। বুধবার ইসরায়েল কার্তজ এসব কথা জানিয়েছেন।
তিন সপ্তাহ আগে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের ‘দশ শতাংশ ভূখণ্ড’ ইসরায়েল দখলে নিয়েছে জানিয়ে কার্তজ বলেন, ‘এবার অতীতের মতো হবে না। যেসব এলাকা পরিষ্কার [যেসব এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়ানো হয়েছে] এবং দখল করা হয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেসব এলাকা ছাড়ছে না।
‘গাজার যেকোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পরিস্থিতিতে আইডিএফ শত্রু এবং [ইসরায়েলি] সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার হিসেবে নিরাপত্তা অঞ্চলে থাকবে। লেবানন ও সিরিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’
কার্তজ বলেন, ইসরায়েলের নীতি হলো ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব জিম্মির মুক্তির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা এবং পরবর্তীতে হামাসকে পরাজিত করার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা।
আরও পড়ুনইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কেন নাকচ করল হামাস১৬ ঘণ্টা আগেকিন্তু হামাস আবারও জোর দিয়ে বলেছে, যে কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।’
ধবার হামাস বলেছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ, [ইসরায়েলি সেনাদের] সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, অবরোধ তুলে নেওয়া এবং পুনর্গঠন শুরু করার প্রকৃত নিশ্চয়তা না থাকলে, যেকোনো যুদ্ধবিরতি একটি রাজনৈতিক ফাঁদে পরিণত হবে।’
ইসরায়েলের ‘দ্য হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ কার্তজের পরিকল্পনাকে ‘উদ্ভট কল্পনা’ বলে মন্তব্য করেছে। গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজনদের এই সংগঠন বলেছে, ‘তারা [সরকার] প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সবকিছুর আগে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে ভূখণ্ড দখলের দিকে বেশি মনোযোগী।’
ফোরামটি মনে করে, ‘একটি স্পষ্ট ও বাস্তব সমাধান রয়েছে। তা হলো একটি চুক্তির মাধ্যমে এক ধাপে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া। এ জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ শেষ করা।’
ইসরায়েলের আপত্কালীন মজুত সেনা (রিজার্ভিস্ট) ও সাবেক সেনারা সম্প্রতি একাধিক খোলা চিঠিতে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ধারণা করা হয়, গাজায় হামাসের হাতে আরও ৫৯ জন জিম্মি আছেন। তাঁদের মধ্যে বেঁচে আছেন ২৪ জন।
এদিকে ইসরায়েলের দেওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। প্রস্তাবে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং হামাসের হাতে থাকা জীবিত জিম্মিদের অর্ধেককেই মুক্তি দিতে বলা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে এই কথা জানিয়েছেন। তবে গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র দৈনিক হারেৎসকে জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে হামাসের কর্মকর্তাদের এখনো নতুন করে কিছু বলেননি।
গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। এরপর ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সেখানে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে সেখানে অন্তত ১ হাজার ৬৩০ জন নিহত হয়েছেন। ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালায়। এরপরই ওই দিন থেকে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকারের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়ায় হয় ২৫১ জনকে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ব র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাউফলে বেদখল সরকারি ৭ গণমিলনায়তন
পটুয়াখালীর বাউফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সরকারি ৭টি গণমিলনায়তন বেদখল হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব গণমিলনায়তনে দোকান তুলে ভাড়া দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নির্মিত এসব গণমিলনায়তনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তদারকির অভাবে এগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতারা দখল করেন। পরে দোকান তুলে ভাড়া দেন। অনেকে গণমিলনায়তনের জমিতে লাগানো গাছও কেটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে মাদক ও জুয়ার আসর বসে।
১৯৮৯ সালে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও কর্মঠ করে তোলার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও জনসচেতনতা তৈরিতে গণমিলনায়তন কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উপজেলার কালাইয়া বন্দর, বীরপাশা, কালিশুরি বাজার, চন্দ্রপাড়া, মমিনপুর, বগাবাজার ও পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকায় গণমিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। আধাপাকা টিনশেড ভবনে গণমিলনায়তন নির্মাণে জমিও অধিগ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরেজমিন দেখা যায়, চন্দ্রদ্বীপের চেয়ারম্যান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক আলকাছ কালাইয়া বন্দরের গণমিলনায়তনটি দলীয় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দখলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, এনামুল হক সেখানে দুটি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে তাস ও ক্যারম বোর্ডের নামে জুয়ার আসর জমে। গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান এনামুল এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে কালাইয়া বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন তুহিনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা মিলনায়তনটি দখল করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন তুহিন বলেন, তিনি মিলনায়তনটি দখল করেননি। স্থানীয় তরুণ ও যুবকরা সেখানে ক্যারাম বোর্ড খেলে।
চন্দ্রপাড়ার আবদুল খালেক মাতুব্বর বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমিতে গণমিলনায়তন নির্মিত হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণও হয়েছে সেখানে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কেন্দ্রটিকে ওই বাড়ির এক ব্যক্তি গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেয়। এ ছাড়া সেখানে থাকা চারটি পুরোনো রেইন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, যুবলীগ নেতা মো. জহির মাতুব্বর গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেওয়ার পাশাপাশি চারটি রেইন্ট্রি গাছ কেটে বিক্রি করেন। ওই চারটি গাছের মূল্য লক্ষাধিক টাকা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জহির মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে জহির মাতুব্বর বলেন, কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি জানেন না।
কনকদিয়ার বীরপাশা এলাকার বাসিন্দা ফোরকান মাস্টার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বীরপাশা গ্রামের গণমিলনায়তনটি বখাটেদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
কেশবপুরের মমিনপুরের গণমিলনায়তনটিরও একই দশা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান বলেন, তাঁর এলাকার গণমিলনায়তন ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেন না।
এদিকে বাউফল পৌরসভার বাজার রোড এলাকায় গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ৫ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গণশৌচাগার নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, তিনি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বলেন, এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।