ইসরায়েলের সেনাদের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও গাজার তথাকথিত বিভিন্ন নিরাপত্তা অঞ্চলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ। নিরাপত্তা অঞ্চল বা বাফার জোনে থাকা এসব ইসরায়েলি সেনারা ‘যে কোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পরিস্থিতিতে’  দেশটির মানুষকে সুরক্ষা দেবে। লেবানন ও সিরিয়াতেও নতুন করে তৈরি করা বাফার জোনে দেশটির সেনার অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান করবেন। বুধবার ইসরায়েল কার্তজ এসব কথা জানিয়েছেন। 

তিন সপ্তাহ আগে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরুর পর থেকে ফিলিস্তিনের ‘দশ শতাংশ ভূখণ্ড’ ইসরায়েল দখলে নিয়েছে জানিয়ে কার্তজ বলেন, ‘এবার অতীতের মতো হবে না। যেসব এলাকা পরিষ্কার [যেসব এলাকা থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়ানো হয়েছে] এবং দখল করা হয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সেসব এলাকা ছাড়ছে না।

‘গাজার যেকোনো অস্থায়ী বা স্থায়ী পরিস্থিতিতে আইডিএফ শত্রু এবং [ইসরায়েলি] সম্প্রদায়ের মধ্যে বাফার হিসেবে নিরাপত্তা অঞ্চলে থাকবে। লেবানন ও সিরিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’

কার্তজ বলেন, ইসরায়েলের নীতি হলো ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব জিম্মির মুক্তির জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা এবং পরবর্তীতে হামাসকে পরাজিত করার জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা। 

আরও পড়ুনইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কেন নাকচ করল হামাস১৬ ঘণ্টা আগে

কিন্তু হামাস আবারও জোর দিয়ে বলেছে, যে কোনো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েলের সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।’

ধবার হামাস বলেছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ, [ইসরায়েলি সেনাদের] সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, অবরোধ তুলে নেওয়া এবং পুনর্গঠন শুরু করার প্রকৃত নিশ্চয়তা না থাকলে, যেকোনো যুদ্ধবিরতি একটি রাজনৈতিক ফাঁদে পরিণত হবে।’

ইসরায়েলের ‘দ্য হোস্টেজ অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম’ কার্তজের পরিকল্পনাকে ‘উদ্ভট কল্পনা’ বলে মন্তব্য করেছে। গাজায় আটক ইসরায়েলি নাগরিকদের আত্মীয়-স্বজনদের এই সংগঠন বলেছে, ‘তারা [সরকার] প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সবকিছুর আগে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে ভূখণ্ড দখলের দিকে বেশি মনোযোগী।’

ফোরামটি মনে করে, ‘একটি স্পষ্ট ও বাস্তব সমাধান রয়েছে। তা হলো একটি চুক্তির মাধ্যমে এক ধাপে সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া। এ জন্য প্রয়োজন হলে যুদ্ধ শেষ করা।’

ইসরায়েলের আপত্কালীন মজুত সেনা (রিজার্ভিস্ট) ও সাবেক সেনারা সম্প্রতি একাধিক খোলা চিঠিতে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চেয়ে জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

ধারণা করা হয়, গাজায় হামাসের হাতে আরও ৫৯ জন জিম্মি আছেন। তাঁদের মধ্যে বেঁচে আছেন ২৪ জন।

এদিকে ইসরায়েলের দেওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। প্রস্তাবে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে এবং হামাসের হাতে থাকা জীবিত জিম্মিদের অর্ধেককেই মুক্তি দিতে বলা হয়েছিল। গত মঙ্গলবার ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে এই কথা জানিয়েছেন। তবে গতকাল বুধবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র দৈনিক হারেৎসকে জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে হামাসের কর্মকর্তাদের এখনো নতুন করে কিছু বলেননি।

গত ২ মার্চ থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। এরপর ১৮ মার্চ থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে সেখানে নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তখন থেকে সেখানে অন্তত ১ হাজার ৬৩০ জন নিহত হয়েছেন। ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালায়। এরপরই ওই দিন থেকে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকারের তথ্যমতে, হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়ায় হয় ২৫১ জনকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প রস ত ব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তিন সাংবাদিকের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় ডিআরইউ’র উদ্বেগ

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সাংবাদিক রফিকুল বাসার, মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন সংবাদকর্মীর চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে ডিআরইউ।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী কমিটির পক্ষে সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল সংবাদকর্মীদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনায় এ উদ্বেগ জানান।

উল্লেখ্য, চ্যানেল আই’র সাংবাদিক রফিকুল বাসার, এটিএন বাংলার মুহাম্মদ ফজলে রাব্বি ও দীপ্ত টিভির সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে মঙ্গলবার কোনো রকম পূর্ব নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

ডিআরইউ নেতৃবৃন্দ তিন সাংবাদিককে চাকরিচ্যুতির কারণ ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন।

এএএম//

সম্পর্কিত নিবন্ধ