যশোরের কেশবপুরের একমাত্র সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চ। এই মঞ্চের সামনে বসানো হয়েছে সবজি, মাছ ও মাংসের বাজার। এই বাজারের নির্দিষ্ট স্থান পুরাতন গরুহাটায় পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় বাজারটি ওই মঞ্চে স্থানান্তরিত করেছে পৌরসভা ও প্রশাসন। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীরা ক্ষুব্ধ।

কেশবপুর শহরের পুরাতন গরুহাটায় মাছ-মাংস ও সবজির বাজার বসে। সেখানে পৌরসভা পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সে কারণে বাজারটি স্থানান্তর করে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবি, গত রোববার এই মঞ্চের সামনে বাজার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সাংস্কৃতিক কর্মীরা ওই মঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান থাকার কথা জানালে এক দিন পর মঙ্গলবার থেকে সেখানে বাজার বসছে।

সরেজমিনে বুধবার বিকেলে দেখা যায়, রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চের পুরো এলাকায় বাজার বসেছে। মঞ্চে ঢোকার স্থানে বসেছে গরুর মাংসের দোকান, পাশেই একটি চায়ের দোকান। মঞ্চের অপর প্রান্তে উত্তর পাশে বসেছে মুরগির দোকান। মঞ্চের ওপরে বাজারের মালামাল রাখা হয়েছে। পুরো চত্বরে বসেছে মাছ ও সবজি বাজার। এখন মঞ্চে ঢোকার কোনো পথ নেই। কোনোভাবে বোঝার উপায় নেই এটি রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চ।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে শহরের হরিহর নদ ও খোঁচা খালের পাড়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রক্তকরবী মঞ্চ তৈরি করা হয়। এর পর থেকে এই মঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, লোকসংস্কৃতি উৎসব, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়ে আসছিল। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে এখানে একটি পৌর পার্ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চটি ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।

মঞ্চ কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, মঞ্চটি কেশবপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের বহু বছরের আন্দোলনের ফসল। মঞ্চটি নির্মাণের পর থেকে এ অঞ্চলে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়। মাছ, মাংস ও সবজির বাজার বসানোর ফলে সেই নান্দনিকতা নষ্ট হচ্ছে। বাজার বসলে সেখানে মাছের পানি, মুরগির অবশিষ্ট অংশসহ নানা ময়লা–আবর্জনার কারণে পরিবেশ বদলে যাবে। জায়গাটির নান্দনিক পরিবেশ আর থাকবে না। এটি বড়ই কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কেশবপুর নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, মঞ্চ ঘিরেই কেশবপুরের সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত। এখানে সকালে ও বিকেলে মানুষ হাঁটাচলা করতেন। বাজার বসানোয় সেটি ব্যাহত হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্থানটিতে বাজার বসানোয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের মনে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও এখানে বাজার বসানোয় আমরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা ব্যথিত।’

এ ব্যাপারে কেশবপুরের ইউএনও ও পৌর প্রশাসক রেকসোনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, পৌর পার্ক নির্মাণের সময়টুকুতেই ওখানে বাজার বসানো হয়েছে। পৌর মার্কেট নির্মাণ হলেই বাজারটি সরিয়ে আবার পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে। এটা সাময়িক অসুবিধা। এর মধ্যে যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, তাহলে সেদিন বাজার বন্ধ থাকবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ক ত ক কর ম ক শবপ র র

এছাড়াও পড়ুন:

আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ

ঝমঝম বৃষ্টি, কর্দমাক্ত পথঘাট, খাল-বিলে থৈ থৈ পানি- এমন দৃশ্যপট সামনে না থাকলেও ভেবে নিতে দোষ কি। কারণ, আজ পহেলা আষাঢ়।

রবি ঠাকুরের ভাষায়— ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশও ছেয়ে... আসে বৃষ্টিরও সুবাসও বাতাসও বেয়ে...’।

অবশ্য একেবারে নিরাশ করেনি আষাঢ়। রাজধানীতে সকাল থেকেই আকাশে মেঘের আনাগোনা আর কোথাও হালকা বৃষ্টি জানান দিচ্ছে প্রকৃতিতে বর্ষার আগমন। বর্ষার আগমন যেন স্বস্তি-শান্তি ও আনন্দের। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস নগরবাসীর জীবনে এক আনন্দের বার্তা। 

বাংলার প্রকৃতিতে আলাদা বৈশিষ্টময় বর্ষা ঋতুর আজ যাত্রা শুরু হলো। 

বলা হয়, গ্রীষ্মের খরতাপের ধূসর নাগরিক জীবন আর রুদ্র প্রকৃতিতে প্রাণের স্পন্দন জাগায় বর্ষা। জ্যৈষ্ঠের প্রচণ্ড খরতাপে রুক্ষ প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠবে বর্ষার বর্ষণের মৃদঙ্গ-ছোঁয়ায়, এটাই যে সকল বাঙালির চাওয়া। 

আষাঢ়ের রিমঝিম বৃষ্টি গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্ণতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। রঙিন হয়ে পুকুর-বিলে ফোটে শাপলা-পদ্ম। বর্ষা ঋতু তার বৈশিষ্ট্যের কারণে স্বতন্ত্র। বর্ষার প্রবল বর্ষণে নির্জনে ভালোবাসার সাধ জাগে, চিত্তচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বর্ষার নতুন জলে স্নান সেরে প্রকৃতির মনও যেন নেচে ওঠে। ফুলে ফুলে শোভিত হয় প্রকৃতি। তাই বর্ষাবিহীন বাংলাদেশ ভাবাই যায় না। 

বর্ষা বাঙালি জীবনে নতুন প্রাণসঞ্চারকারী। বৃষ্টিস্নাত কদম ফুলের সৌন্দর্য্য যে দেখেছে, মুগ্ধ নয়নে চেয়ে না থেকে পারেনি। এর বর্ণনায় পল্লীকবি জসীমউদদীন লিখেছেন- ‘বনের ঝিয়ারি কদম্বশাখে নিঝঝুম নিরালায়, / ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে, অস্ফুট কলিকায়।’

বৃষ্টি হলে গ্রামের নদী নালা পুকুরে জল জমে থৈ থৈ করে। বর্ষা আনন্দ-বেদনার সারথী। সবুজের সমারোহে, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণে বর্ষা আনে জীবনেরই বারতা। 

উন্নয়নের নামে চলমান প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি নিয়ে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বর্ষা ঋতুকে বরণ করে নিতে ‘বর্ষা উৎসব’ আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। 

রবিবার (১৫ জুন) আষাঢ়ের প্রথমদিনে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকালে সুর-সংগীতে প্রকৃতি-বন্দনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের কর্মসূচি।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • কলকাতায় নতুন সিনেমার শুটিং শুরু করলেন জয়া
  • বর্ষা উৎসবে বন ও পরিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পান্থকুঞ্জ পার্ক রক্ষাসহ কয়েকটি দাবি
  • নাচ-গান-আবৃত্তিতে চারুকলায় বর্ষাবরণ
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরির সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • মেঘ-রোদের লুকোচুরি সকালে নাচে-গানে বর্ষাবরণ 
  • আষাঢ়ের প্রথম দিন আজ
  • কলিজা ঠান্ডা করে দেওয়া ছবি ‘উৎসব’
  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী