ছুটির দিনে ওটিটিতে দেখতে পারেন যে সিনেমা ও সিরিজ
Published: 18th, April 2025 GMT
দেশের ওটিটিতে কনটেন্ট ছাড়াও চলতি সপ্তাহে ওটিটিতে এসেছে ও আসছে কিছু কাঙ্ক্ষিত সিনেমা-সিরিজ। এর মধ্যে বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে তাসনিয়া ফারিণ অভিনেত্রীর প্রথম চলচ্চিত্র ফাতিমা। এ ছাড়াও অ্যামাজন প্রাইমে খাউফ ও নেটফ্লিক্সে আসছে আই হোস্টেজসহ দারুণ কিছু কনটেন্ট। ওটিটি দুনিয়ার খবরাখবর নিয়েই এই আয়োজন
ফাতিমা
অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের প্রথম দেশীয় সিনেমা ‘ফাতিমা’। গত বছর ২৪ মে এটি মুক্তি পায় প্রেক্ষাগৃহে। তারও আগে ইরানের ৪২তম ফজর চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছিল সিনেমাটির। এমনকি এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ফারিণ সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও অর্জন করেন সেখান থেকে। দর্শক-সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয় সেটি। উৎসব ও প্রেক্ষাগৃহ ঘুরে সেই সিনেমাটি এবার মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। ১৭ এপ্রিল বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। ছুটির দিনে তাই সিনেমাটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। এতে তাসনিয়া ফারিণ ছাড়াও এখানে অভিনয় করেছেন ইয়াশ রোহান, তারিক আনাম খান, পান্থ কানাই, মানস বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকে।
খাউফ
সাসপেন্স ও ভৌতিক গল্পের সিরিজ ‘খাউফ’। ট্রেলারে দেখা যায় একজন তরুণী যিনি অতীতের দানবদের হাত থেকে বাঁচতে একটি নতুন শহরে আশ্রয় খুঁজছে। তিনি যে ঘরে আশ্রয় নেন সেই ঘরটি আসলে স্বাভাবিক ঘর নয়। যাতে লুকিয়ে আছে ভয়াবহতা, আছে মৃত্যুর গন্ধ ও অশুভ শক্তি। পঙ্কজ কুমার ও সূর্য বালাকৃষ্ণান যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন সিরিজটি। এতে অভিনয় করেছেন মনিকা পানওয়ার, রজত কাপুর, গীতাঞ্জলি কুলকার্নি, শিল্পা শুক্লাসহ অনেকেই। আজ অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাচ্ছে সিরিজটি।
ডেভিড
একজন সাবেক বক্সার ও নিরাপত্তারক্ষীর জীবনের গল্প উঠে এসেছে ডেভিড সিরিজটিতে। যাতে দেখা যায় আশিক আবু একজন প্রাক্তন বক্সার। যাঁর স্ত্রী বাড়ির বেশির ভাগ দায়িত্ব পালন করেন। আর্থিক অভাব সত্ত্বেও তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে সুখেই জীবনযাপন করেন। আবু জীবিকা নির্বাহের জন্য নিরাপত্তার চাকরি নেয়। আন্তর্জাতিক বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, সাইনুল আখমাদভকে পাহারা দেওয়ার জন্য নিয়োগ করা হয়, যিনি বক্সিং রিংয়ে কুখ্যাত। একদিন দুর্ঘটনা ঘটে এবং তুর্কি তারকার সঙ্গে একটি উত্তপ্ত মুখোমুখি তাঁকে রিংয়ে ফিরিয়ে আনে। গোবিন্দ বিষ্ণু পরিচালিত সিরিজটিতে অভিনয় করেছেন সাইজু কুরুপ, অ্যান্টনি ভার্গিস, লিজোমল, বিজয় রাঘবন, মো.
আই হোস্টেজ ও ইস্তাম্বুল এনসাইক্লোপিডিয়া
আমস্টারডামের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি অ্যাপল স্টোরে প্রবেশ করে একজন বন্দুকধারী। হুলস্থুল কাণ্ড ঘটে সেখানে। সেখানকার পুলিশ বিষয়টি সমাধানের জন্য আসে এবং বন্দুকধারীর সঙ্গে সূক্ষ্ম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এ ঘটনাকে নিয়েই নির্মিত হয়েছে আই হোস্টেজ। মূলত সত্য ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই সিরিজটি নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন সোফিয়ান মুসুলি, অ্যাডমির সেহোভিচ, ইমানুয়েল ওহেন বোয়াফোসহ অনেকেই। আজ থেকে সিনেমাটি দেখা যাবে নেটফ্লিক্সে।
আজ থেকে ‘ইস্তাম্বুল এনসাইক্লোপিডিয়া’ সিরিজটি দেখা যাবে নেটফ্লিক্সে। যার গল্পে দেখা যাবে, একজন তরুণী ছাত্রী ইস্তাম্বুল শহরের পরিবার থেকে আলাদা এক বন্ধুর সঙ্গে বসবাস করেন। যে বন্ধুর সঙ্গে তাঁর শহরের নানা বিষয় অভিজ্ঞতা নেয়। এবং নিজের বিশ্বাসের পরীক্ষায় নামে। বিভিন্ন চরিত্রে এতে অভিনয় করেছেন কানান এরগুডার, হেলিন কান্দেমির, কান মিরাক সেজেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব
পাহাড়ের আঁকাবাঁকা প্রায় দুই কিলোমিটারেরও বেশি উঁচুনিচু ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে আলোক শোভাযাত্রা করে করলেন হাজারো খৃষ্ট ভক্ত। মা মারিয়ার আশীর্বাদপ্রাপ্ত শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বারোমারি সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্মপল্লি’ তে ছিলো এ বছরের আয়োজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল থেকে শুরু হয় ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব। দুই দিনব্যাপী এই তীর্থোৎসব শেষ হয়েছে গতকাল শুক্রবার জীবন্ত ক্রুশের পথ ও পবিত্র মহাখ্রিষ্টযাগের মধ্যে দিয়ে।
এ উৎসবে শুধু ক্যাথলিক খ্রিষ্টানই নন, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও প্রতিবছর অংশ নেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র্যান্ডেল।
এসময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) তরফদার মাহমুদুর রহমান ও পুলিশ সুপার (এসপি) আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজক কমিটি জানায়, প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবারে এই তীর্থযাত্রার আয়োজন করা হয়। প্রধান পৌরহিত্যকারী ন্যুনসিওকে বরণ, তীর্থের জুবিলী উদজাপন, পুর্নমিলন সংস্কার, পবিত্র খিষ্টযাগ, জপমালার প্রার্থন, আলোক শোভাযাত্রা, সাক্রান্তের আরাধনা, নিরাময় অনুষ্ঠান, ব্যক্তিগত প্রার্থনা ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। শুক্রবার সকাল আটটায় জীবন্ত ক্রুশের পথ অতিক্রম এবং সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের তীর্থোৎসব।
১৯৪২ সালে ৪২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লি। ১৯৯৮ সালে প্রয়াত বিশপ ফ্রান্সিস এ গোমেজ স্থানটিকে ‘ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান’ হিসেবে ঘোষণা করেন। তখন থেকেই প্রতিবছর আয়োজিত হয়ে আসছে এই ধর্মীয় উৎসব। এ বছর প্রায় ৩০-৪০ হাজার দেশি-বিদেশি রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রী অংশ নিয়েছেন উৎসবে। সার্বিকভাবে উৎসব এলাকা ছিল আলো, প্রার্থনা ও শান্তির আবহে মোড়ানো।
রংপুর থেকে আসা তীর্থযাত্রী রিপন আরেং বলেন, “সবাই যখন মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রার্থনা করতে করতে পাহাড়ি আকাঁবাঁকা পথ অতিক্রম করছিলেন, তখন পাহাড় আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল। তীর্থে আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করতে এসেছি।”
চট্টগ্রাম থেকে আসা রীতা নকরেক বলেন, “পুত্রবধূর সন্তান হচ্ছিল না। গতবার মানত করার পর এবার নাতী পেয়েছি। তাই এবার নাতীকে নিয়ে আবার এসেছি।”
গাজীপুর থেকে পরিবারের সঙ্গে আসা শিক্ষার্থী ঝর্ণা আরেং বলেন, “মারিয়ার কাছে এলে মনে একধরনের শান্তি পাই। আমরা প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।”
শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, “আমরা এই তীর্থযাত্রাকে নিরাপদ ও ঝুঁকি মুক্ত রাখতে তিন স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রেখেছি। পাঁচ শতাধিক পুলিশ পোশাকে এবং সাদা পোশাকে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও র্যাব, বিজিবি, এপিবিএন ও সেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। যে কোন ঝুঁকি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত আছি।”
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, “উৎসবটি দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে সহযোগীতা করে আসছে। এবারের তীর্থযাত্রায় সারাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের উৎসব পালন করেছে।”
ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পনেন পল কুবি সিএসসি বলেন, “এ উৎসবের মাধ্যমে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়েছে। ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এ তীর্থে দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ সমবেত হয়েছেন। তাঁরা দুই দিনব্যাপী তীর্থে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। মা ফাতেমা রানীর কাছে দেশ ও মানবজাতির কল্যাণে প্রার্থনা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে যাবেন।”
ঢাকা/তারিকুল/এস