‘নিজেকে সৃজনশীলতার সমার্থক করে তুলুন’
Published: 19th, April 2025 GMT
পাবলো নেরুদা। সাহিত্যে নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম প্রভাববিস্তারী এ কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
আমার কবিতা ভীষণ দুর্বোধ্য জানি; তবে এই ‘সমস্যা’ থেকে নিজেকে সরাতে চাই না। বরং বলতে পারি, আমার কবিতাগুলো একটি নিখাদ আন্তরিকতার আত্মপ্রকাশ। হয়তো অন্য কবিদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কিন্তু পেইন্টিং, থিয়েটার, সিনেমা, কবিতা, গদ্য কিংবা মিউজিকের একটি স্কুল হিসেবে এটিকে আমি অন্য মানুষদের চেয়ে একেবারে আলাদা করে একটি ভুল পথ খুঁজে নিয়েছি; খুঁজে নিয়েছি একটি অন্ধগলি হিসেবে; যে গলি খুব বেশি দূরগামী নয়। তবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনাগুলোকে প্রসারিত করতে একটি নিরন্তর আবিষ্কার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকা থেকে নিজেকে কখনোই বিরত করিনি আমি।
আমি কোনো রাজনৈতিক কবি নই
জোরের সঙ্গে বলতে চাই, আমি কোনো রাজনৈতিক কবি নই। আদর্শগতভাবে দায়বদ্ধ কোনো কাব্যধারার প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে এ রকম জোরজবরদস্তি করে শ্রেণিভুক্ত করাটাকে ঘৃণা করি। লেখক হিসেবে আমার যদি আদৌ কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে সেটি হলো– যা দেখি, যা স্পর্শ করি, যা চিনি, যা ভালোবাসি কিংবা যা ঘৃণা করি, তার সবটাই নিজের লেখায় ফুটিয়ে তোলা। আমাকে ‘শ্রমিক জগতে’র লোক হিসেবে উল্লেখ করার অর্থ হলো, কোনো অবচেতন ও উদারপন্থায় গণমানুষের দুঃখ-দুর্দশার কিংবা সংগঠিত শ্রমিক দলের মুখপাত্র হিসেবে চিহ্নিত করা; অথচ আমি তা নই। সমকালীন জগতের দুর্দশা, লাতিন আমেরিকান ভূখণ্ডের দুর্দশা আমার কবিতার একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রতিধ্বনিত হয়েছে কেবল। তাই বলে আমি নিশ্চয়ই ‘রাজনৈতিক কবি’ হয়ে গেলাম না! যে কবিগণ কখনও, কোনোদিনই নিজেদের গণমানুষের অনুভূতি ছুঁতে পারেন না কিংবা যারা থেকে যান এ ব্যাপারে উদাসীন কিংবা যারা কবিতাকে কোনো নির্দিষ্ট বাস্তবতার চাপ থেকে যথেষ্ট দূরবর্তী করে তোলেন বা রাখেন, তারাই আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কবি হওয়ার যোগ্য দাবিদার। কেননা, সভ্যতার চিরন্তন পালাবদল থেকে, জগতের বিকাশ থেকে নিজেদের কবিতাকে নিশ্চুপ রেখে, বস্তুত তারা এই বিকাশের পথটিই রুদ্ধ করে দিতে চান। তার মানে, প্রতিক্রিয়াশীল কবি-সাহিত্যিকরাই প্রকৃত রাজনৈতিক কবি।
জগতের সৃজনশীলতার সমার্থক করে তোলা
একজন লাতিন আমেরিকান কবির দায়িত্ব হলো, নিজের নামকে জগতের সৃজনশীলতার সমার্থক করে তোলা। ফলে ব্যাপক ধোঁয়াশাময় ও রহস্যপূর্ণ কোনো উপাদানের নিষ্পত্তি করতে হবে আমাদের। আমাদের মহাদেশের এ জ্ঞানটি নিজেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, বিশেষ করে এ যুগের বিগত বছরগুলোতে, যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, বিশ বছর বয়সী এক তরুণ কবি, লেখালেখি শুরু করেছি মাত্র। ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি, বিশেষত ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি একটা দুর্নিবার ও জাদুকরী টান ছিল আমাদের। আমাদেরও সাহিত্যিক ছিলেন; এমন সব অসাধারণ আর জন্মগতভাবে প্রতিভাধর লেখক ছিলেন; যারা শুধু ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই লিখতেন। অথচ নিজ মহাদেশে ভীষণ তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়া ইকুয়েডরের লেখকরা জানতেনই না, তারা শুধু পথনির্দেশিকাই বদলে দিচ্ছেন না, বরং বদলে দিচ্ছেন নিজেদের ভাষাও।
নিজের দেশ ও নিজের মানুষের প্রতি নিবিড় মনোযোগ
নিজের দেশ ও নিজের মানুষের প্রতি নিবিড় মনোযোগ দিয়ে সাহিত্যের একটি প্রেরণাদায়ী পথের আবিষ্কার কিন্তু এমন এক সময়ে লিখতে শুরু করা আমি কিংবা আমার সমসাময়িক কেউ করিনি। এটা আগে থেকেই ছিল। আমি স্রেফ কল্পনাযোগ্য যে কোনো কিছু নিয়ে লিখি। লিখি মানুষের বিদ্রোহ নিয়েও। এটিই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কবিতারই একটি অংশ; অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সমীহ জাগানিয়া অংশ। তবে এটি কবিতার সবকিছু নয়। বলতে চাচ্ছি, আমিই হলাম কবিকুলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ! কেননা, ভিক্তর হুগোর মতো কিংবা অতীতের যে কোনো সময়ের অন্য যে কোনো কবির মতো আমিও গাইতে চাই তারার, চাঁদের, ফুলের, ভালোবাসার গান। কবিতায় বিপ্লবী আমি হয়ে উঠতে চাই না কিছুতেই। আমার কোনো কাব্য-মতবাদ নেই। আমার কোনো কাব্য-আদর্শ নেই। অনিবার্য ও জৈবিক প্রয়োজনে আমি কবি; আর এটিই আমার মতবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম র ক ন আম দ র জগত র
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি সুস্পষ্ট কূটনৈতিক সাফল্য
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্কের হার কমায় একে ঐতিহাসিক চুক্তি আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের শুল্ক আলোচকদের আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “এটি সুস্পষ্ট এক কূটনৈতিক সাফল্য।”
শুক্রবার (১ আগস্ট) এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শুল্ক হার ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে আরোপিত শুল্ক হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। এর মাধ্যমে আমাদের আলোচকরা অসাধারণ কৌশলগত দক্ষতা এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা ও সেটাকে আরো এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অবিচল প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছেন।
তিনি বলেন, আলোচকরা এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে নিরলসভাবে কাজ করে জটিল আলোচনাকে সফলভাবে এগিয়ে নিয়েছেন। যেখানে শুল্ক, অশুল্ক ও জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার মাধ্যমে অর্জিত এই চুক্তি আমাদের তুলনামূলক সুবিধা সংরক্ষণ করেছে। পাশাপাশি, বিশ্বের বৃহত্তম ভোক্তাবাজারে প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি ও আমাদের মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০ শতাংশ
কোন দেশে কত শুল্ক বসালেন ট্রাম্প
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আরো বলেন, এ অর্জন কেবল বাংলাদেশের বৈশ্বিক অঙ্গনে ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তুলে ধরে না; বরং এটি বৃহত্তর সম্ভাবনা, ত্বরান্বিত প্রবৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির পথ উন্মুক্ত করে।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিঃসন্দেহে উজ্জ্বল, উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আজকের সাফল্য আমাদের জাতীয় দৃঢ়তা ও আগামী দিনের আরো শক্তিশালী অর্থনীতির সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
তথ্যসূত্র: বাসস
ঢাকা/রফিক