পাবলো নেরুদা। সাহিত্যে নোবেলজয়ী চিলিয়ান কবি। বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম প্রভাববিস্তারী এ কিংবদন্তির বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক

আমার কবিতা ভীষণ দুর্বোধ্য জানি; তবে এই ‘সমস্যা’ থেকে নিজেকে সরাতে চাই না। বরং বলতে পারি, আমার কবিতাগুলো একটি নিখাদ আন্তরিকতার আত্মপ্রকাশ। হয়তো অন্য কবিদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কিন্তু পেইন্টিং, থিয়েটার, সিনেমা, কবিতা, গদ্য কিংবা মিউজিকের একটি স্কুল হিসেবে এটিকে আমি অন্য মানুষদের চেয়ে একেবারে আলাদা করে একটি ভুল পথ খুঁজে নিয়েছি; খুঁজে নিয়েছি একটি অন্ধগলি হিসেবে; যে গলি খুব বেশি দূরগামী নয়। তবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনাগুলোকে প্রসারিত করতে একটি নিরন্তর আবিষ্কার প্রচেষ্টায় নিয়োজিত থাকা থেকে নিজেকে কখনোই বিরত করিনি আমি।
আমি কোনো রাজনৈতিক কবি নই 
জোরের সঙ্গে বলতে চাই, আমি কোনো রাজনৈতিক কবি নই। আদর্শগতভাবে দায়বদ্ধ কোনো কাব্যধারার প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে এ রকম জোরজবরদস্তি  করে শ্রেণিভুক্ত করাটাকে ঘৃণা করি। লেখক হিসেবে আমার যদি আদৌ কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহলে সেটি হলো– যা দেখি, যা স্পর্শ করি, যা চিনি, যা ভালোবাসি কিংবা যা ঘৃণা করি, তার সবটাই নিজের লেখায় ফুটিয়ে তোলা। আমাকে ‘শ্রমিক জগতে’র লোক হিসেবে উল্লেখ করার অর্থ হলো, কোনো অবচেতন ও উদারপন্থায় গণমানুষের দুঃখ-দুর্দশার কিংবা সংগঠিত শ্রমিক দলের মুখপাত্র হিসেবে চিহ্নিত করা; অথচ আমি তা নই। সমকালীন জগতের দুর্দশা, লাতিন আমেরিকান ভূখণ্ডের দুর্দশা আমার কবিতার একটি নির্দিষ্ট অংশে প্রতিধ্বনিত হয়েছে কেবল। তাই বলে আমি নিশ্চয়ই ‘রাজনৈতিক কবি’ হয়ে গেলাম না! যে কবিগণ কখনও, কোনোদিনই নিজেদের গণমানুষের অনুভূতি ছুঁতে পারেন না কিংবা যারা থেকে যান এ ব্যাপারে উদাসীন কিংবা যারা কবিতাকে কোনো নির্দিষ্ট বাস্তবতার চাপ থেকে যথেষ্ট দূরবর্তী করে তোলেন বা রাখেন, তারাই আমাদের যুগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কবি হওয়ার যোগ্য দাবিদার। কেননা, সভ্যতার চিরন্তন পালাবদল থেকে, জগতের বিকাশ থেকে নিজেদের কবিতাকে নিশ্চুপ রেখে, বস্তুত তারা এই বিকাশের পথটিই রুদ্ধ করে দিতে চান। তার মানে, প্রতিক্রিয়াশীল কবি-সাহিত্যিকরাই প্রকৃত রাজনৈতিক কবি।
জগতের সৃজনশীলতার সমার্থক করে তোলা
একজন লাতিন আমেরিকান কবির দায়িত্ব হলো, নিজের নামকে জগতের সৃজনশীলতার সমার্থক করে তোলা। ফলে ব্যাপক ধোঁয়াশাময় ও রহস্যপূর্ণ কোনো উপাদানের নিষ্পত্তি করতে হবে আমাদের। আমাদের মহাদেশের এ জ্ঞানটি নিজেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, বিশেষ করে এ যুগের বিগত বছরগুলোতে, যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, বিশ বছর বয়সী এক তরুণ কবি, লেখালেখি শুরু করেছি মাত্র। ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি, বিশেষত ফরাসি সংস্কৃতির প্রতি একটা দুর্নিবার ও জাদুকরী টান ছিল আমাদের। আমাদেরও সাহিত্যিক ছিলেন; এমন সব অসাধারণ আর জন্মগতভাবে প্রতিভাধর লেখক ছিলেন; যারা শুধু ফ্রেঞ্চ ভাষাতেই লিখতেন। অথচ নিজ মহাদেশে ভীষণ তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়া ইকুয়েডরের লেখকরা জানতেনই না, তারা শুধু পথনির্দেশিকাই বদলে দিচ্ছেন না, বরং বদলে দিচ্ছেন নিজেদের ভাষাও। 
নিজের দেশ ও নিজের মানুষের প্রতি নিবিড় মনোযোগ
নিজের দেশ ও নিজের মানুষের প্রতি নিবিড় মনোযোগ দিয়ে সাহিত্যের একটি প্রেরণাদায়ী পথের আবিষ্কার কিন্তু এমন এক সময়ে লিখতে শুরু করা আমি কিংবা আমার সমসাময়িক কেউ করিনি। এটা আগে থেকেই ছিল। আমি স্রেফ কল্পনাযোগ্য যে কোনো কিছু নিয়ে লিখি। লিখি মানুষের বিদ্রোহ নিয়েও। এটিই গুরুত্বপূর্ণ। এটি কবিতারই একটি অংশ; অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও সমীহ জাগানিয়া অংশ। তবে এটি কবিতার সবকিছু নয়। বলতে চাচ্ছি, আমিই হলাম কবিকুলের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ! কেননা, ভিক্তর হুগোর মতো কিংবা অতীতের যে কোনো সময়ের অন্য যে কোনো কবির মতো আমিও গাইতে চাই তারার, চাঁদের, ফুলের, ভালোবাসার গান। কবিতায় বিপ্লবী আমি হয়ে উঠতে চাই না কিছুতেই। আমার কোনো কাব্য-মতবাদ নেই। আমার কোনো কাব্য-আদর্শ নেই। অনিবার্য ও জৈবিক প্রয়োজনে আমি কবি; আর এটিই আমার মতবাদ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম র ক ন আম দ র জগত র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ