মৌলভীবাজারের জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলায় এবার তেমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় হাকালুকি হাওর এলাকায় ধানের আবাদ ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। বছরের এ সময়ে হাওরসহ বিভিন্ন স্থানে বোরো ও রবিশস্যের ফসল ঘরে তুলছেন তাঁরা। এ কারণে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষক পরিবারগুলো।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জুড়ী ও কুলাউড়া জেলার বেশ কিছু এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর বিস্তৃত। সেখানে বছরের এ সময়ে বোরো ও রবিশস্যের আবাদ হয়। বাকি সময় হাওর অথই পানিতে ডুবে থাকে। প্রায়ই অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। তবে, এবারের চিত্রটা ভিন্ন। জুড়ীতে এবার ৬ হাজার ১৫০ ও কুলাউড়ায় ৮ হাজার ৬৯০ হেক্টর জমিতে নানা প্রজাতির বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ জমিই পড়েছে হাকালুকি হাওরে।।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাকালুকি হাওরের জুড়ী অংশের কালনীগড়, নয়াগ্রাম, সোনাপুর ও শাহপুর ও কুলাউড়া অংশের জাব্দা, মুক্তাজিপুর ও গৌড়করণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির ধান পেকেছে। সেখানে কৃষক-শ্রমিকদের ব্যস্ত সময় কাটছে। কোথাও ‘কম্বাইন হারভেস্টার’ যন্ত্র দিয়ে ধানের কর্তন-মাড়াই চলছে। কোথাও শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটানো হচ্ছে। কড়া রোদে ধান কেটে কাঁধভর্তি আঁটি নিয়ে গন্তব্যে ছুটছেন শ্রমিকেরা। বিশাল এ কর্মযজ্ঞের জন্য হাওরের ভেতর খড় দিয়ে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী ঘর। সেখানে রাতে অবস্থান করেন শ্রমিকেরা। রাত জেগে ধান পাহারা দেন। হাওরে কয়েকটি স্থানে কেটে আনা ধান মাড়াই করা হচ্ছে। ধান শুকানোর পর কেউ কেউ এগুলো বস্তায় ভরে রাখছেন। কৃষক পরিবারের নারী সদস্যরাও বসে নেই। ধান ঝাড়াইয়ে তাঁদের ব্যস্ত দেখা যায়।

জাব্দা গ্রামে ১০ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইউছুফ আলী। কম্বাইন্ন হারভেস্টার যন্ত্র দিয়ে প্রায় পাঁচ বিঘার ধান কাটা হয়ে গেছে। তাতে প্রতিবিঘা জমিতে খরচ পড়েছে ২ হাজার টাকা। ধানের ফলন সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউছুফ হেসে বলেন, ‘কয়েক বছর থাকি এই বার ধান ভালা হইছে। ঝড়-বৃষ্টি কম হইছে। খরায়ও তেমন ক্ষয়ক্ষতি হইছে না। এখন সবাই ফসল ঘরে তুলছে।’

কালনীগড় এলাকায় একটি জমিতে ধান কাটছিলেন চার–পাঁচজন শ্রমিক। পেশায় চা-শ্রমিক হলেও বাগানে তাঁদের কাজ নেই। তাই দৈনিক ৬০০ টাকা (মাথাপিছু) মজুরিতে তাঁরা ধান কাটেন। অনন্ত চাষা নামের তাঁদের একজন বললেন, ‘মেশিন (ধান কাটা ও মাড়াইয়ের যন্ত্র) আমরার কাজ কাড়ি নিছে। অনেকে মেশিন দিয়া ধান কাটায়। নইলে মজুরি আরও বেশি মিলত।’

শ্রমিকদের সঙ্গে ধান কাটছিলেন ওই জমির বর্গাচাষি পরেন্দ্র দাস। পরেন্দ্র বললেন, ‘মেশিনে খের (খড়) ভালা পাওয়া যায় না। ঘরে গরু-বাছুর আছে। তারাও তোর খানি (খাবার) লাগে। হাতে ধান কাটলে খের ভালা মিলে।’

কালনীগড় বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ। স্থানীয় লোকজন বললেন, ভোরে সবাই হাওরে ধান কাটতে চলে যান। বাড়ি ফেরেন বিকেলে। আর সন্ধ্যার পর খুলে সব দোকানপাট।

হাওরের অর্ধেক পাকা ধান কাটা শেষ বলে দাবি করেছেন জুড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল আলম খান। তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকলে এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি ধান পেকে যাবে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি দেখে ভালো লাগছে।’

অন্যদিকে কুলাউড়ার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, উপজেলার অর্ধেকের বেশি জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। কিছু কৃষক দেরিতে আবাদ শুরু করায় ধান পাকতেও দেরি হচ্ছে। তবে দ্রুত পেকে যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ