দাবায় আন্তর্জাতিক মাস্টার (আইএম) হতে তিনটি নর্ম দরকার। ফিদে মাস্টার তাহসিন তাজওয়ার জিয়া তাঁর বহুল কাঙ্ক্ষিত তৃতীয় আইএম নর্মটি পেলেন আজ। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে ফারাগো ইভান মেমোরিয়াল গ্র্যান্ডমাস্টার দাবায় দশম রাউন্ডে স্বাগতিক দেশের এক গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছান তাহসিন। টুর্নামেন্টে রানারআপ হয়েছেন তিনি।

দশ ম্যাচে তাঁর পয়েন্ট ৬। একটি ম্যাচ হেরেছেন, যেটি ছিল নবম রাউন্ডে। তিনটি জিতেছেন, ছয়টি ড্র। তবে আইএম খেতাব পেতে তাহসিনের রেটিং হতে হবে ২৪০০। এই টুর্নামেন্ট শেষে তাঁর রেটিং হচ্ছে ২৩৭৪। আর এক-দুটি টুর্নামেন্টেই হয়তো তা পূরণ করে ফেলবেন।

তাহসিন তাঁর প্রথম আইএম নর্ম করেন ২০২৩ সালে ঢাকায় এশিয়ান জোনাল চ্যাম্পিয়নশিপে। দ্বিতীয়টি করেন গত মাসেই কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এশিয়ান জোনালে, ওই টুর্নামেন্টে রানারআপ হন তিনি। কলম্বোয় খেলেই হাঙ্গেরিতে গিয়েছিলেন তিনটি টুর্নামেন্টে খেলতে। প্রথম দুটিতে নর্ম হয়নি। তৃতীয়টি তাঁকে নিরাশ করেনি। বুদাপেস্ট থেকে মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তাহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। বলতে পারেন, বাবার স্বপ্ন পূরণে আমি এক ধাপ এগিয়েছি।’

বাবা গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান গত বছরের ৫ জুলাই বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে জাতীয় দাবায় খেলতে খেলতেই মারা গেছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলে গ্র্যান্ডমাস্টার হবেন। সে কথা বলতে বলতে বুদাপেস্ট থেকে ফোনের ও প্রান্তে কেঁদে ফেলেন জিয়াপত্নী তাসমিন সুলতানা। নিজেকে সামলে কোনোমতে বলেন, ‘জিয়া বেঁচে থাকলে আজ খুব খুশি হতো। ওর কথা অনেক মনে পড়ছে। তবে জিয়া না থাকলেও নিশ্চয়ই আজ সে সবকিছু দেখতে পাচ্ছে এবং খুশি হয়েছে। তাহসিন আইএম হওয়ার জন্য তৃতীয় নর্ম করেছে। আমি কতটা খুশি, বলে বোঝাতে পারব না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ