বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) বলছে,  উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং কর ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে দেশে কর ফাঁকির হার বেড়েছে।

সিপিডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে আনুমানিক ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

সিপিডির গবেষণা বলছে, এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হারিয়েছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। ২০২৩ সালে করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা।

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত ‘উত্তরণকালীন বাংলাদেশে কর সংস্কার: কর ন্যায্যতার দৃস্টিকোন থেকে’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিং এ তথ্য জানানো হয়। যৌথভাবে এর আয়োজন করে সিপিডি ও ক্রিশ্চিয়ান এইড।

সিপিডির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে, ২০১২ সালে ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। গবেষণা প্রতিবেনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্স এসোসিয়েট তামিম আহমেদ।

তিনি বলেন, “বৈশ্বিক অবস্থার মতো বাংলাদেশেও করপোরেট কর কমতির দিকে। পোশাক, আইসিটিসহ অনেক খাত কর সুবিধা পেয়ে থাকে। ২ লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড, কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিশন করেছে মাত্র ৯ শতাংশ কোম্পানি বা ২৪ হাজার ৩৮১ কোম্পানি। এটা একটা বড় বৈষম্য। যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর করের বোঝা বাড়ছে।”

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আগামী দিনে সরকার যদি উচ্চমাত্রায় রাজস্ব না পান তাহলে ভর্তুকি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনবল তৈরি করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। প্রত্যক্ষ কর, অপ্রতক্ষ কর ও কর বহির্ভূত আয় এই তিন উৎস থেকে মূল রাজস্ব আদায় করি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে করপোরেট খাত থেকে। প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব এখান থেকে আসে। আর ভ্যাট থেকে আসে ৪০ শতাংশ রাজস্ব। এই দুই উৎস থেকে প্রায় ৬০ ভাগ রাজস্ব প্রতি বছর আসছে। এ জন্য করপোরেট কর ও ভ্যাটের সংস্কার নিয়ে আমরা আলোচনা করতে চাই।”

তিনি বলেন, “প্রতি বছর বাজটে আসলে প্রেশারগ্রুপ সরকারের ওপর চাপ দিতে থাকেন তার কর হার কমানোর জন্য। এর ফলে কর নিয়ে সরকারের যে লক্ষ্য তা প্রায়ই বিচ্যুত হয়, এটা খোলস আকারে থেকে যায়। যার পরিণতি ভালো হয় না। কর জিডিপির বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী দিনে একটি কাঠামো প্রণয়ন করা প্রয়োজন।”

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “আমাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছি ২০২৩ সালে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি কর ফাঁকি হয়েছে। এনবিআর কি পরিমাণ প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করছে। শুধু যে কর ফাঁকি তা নয়, করজালের বাইরেও অনেক খাত ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যাদেরকে করজালের মধ্যে আনা যায়নি। এই বিপুল পরিমাণ ফাঁকি রোধ করতে পারলেও আমরা বড় পরিমাণ অর্থ বা রাজস্ব আদায় সম্ভব।”

তিনি বলেন, “ডিজিটালইজেশন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা দেখতে পারছি। ব্যবসায়ী ও এনবিআরে স্বার্থে এটা করা জরুরি। অথচ এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের এক ধরনের অনীহা রয়েছে। বাংলাদেশে যে কোনো লেনদেন একক ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। যাতে করে যে কোনো লেনদেন ট্রেস ও ট্রাক করা যায়। সেটার আলোকে দাখিলকৃত রিটার্নকে ভেরিভাই করা যায়।”

ক্রিশ্চিয়ান এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর নুজহাত জাবিন বলেন, “বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের দেশ প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল। এটা পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যখন এলডিসি গ্রাজুয়েশন করছি প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে।”

সিপিডি বাংলাদেশের ক্রমাগত কর ফাঁকি সমস্যার পেছনে বেশ কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং কর ব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি। সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কর ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে, উচ্চ মাত্রার কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং যারা আইন অনুসরণ করে তাদের ওপর বোঝা বাড়িয়ে দেয়।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করপ র ট কর ২০২৩ স ল পর ম ণ সরক র র ওপর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী