প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়া মানে কি কিডনি সমস্যা ?
Published: 21st, April 2025 GMT
প্রোটিন শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগ প্রতিরোধ, তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ এবং পেশি ও হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তবে, কখনও কখনও প্রস্রাবে প্রোটিনের উচ্চ উপস্থিতি কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনো অসুস্থতার সংকেত হতে পারে। যখন আমাদের কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না, তখন প্রোটিন ফিল্টার হয়ে প্রস্রাবে চলে যেতে পারে। এ অবস্থার নাম প্রোটিনুরিয়া বা অ্যালবুমিনুরিয়া। প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে।
প্রস্রাবে প্রোটিন বলতে কী বোঝায়?
প্রোটিনুরিয়া, যা প্রস্রাবে প্রোটিন ফুটো নামে পরিচিত একটি অবস্থা, যা প্রস্রাবে রক্তবাহিত প্রোটিনের অত্যধিক পরিমাণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রোটিন হলো প্রস্রাব বিশ্লেষণ করার জন্য ল্যাব টেস্টে পরীক্ষা করা উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। এই চিকিৎসা অবস্থা প্রায়ই কিডনি রোগ নির্দেশ করে। আমাদের কিডনি ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, যা সাধারণত বেশির ভাগ প্রোটিনকে এর মধ্য দিয়ে যেতে বাধা দেয়। তবে অ্যালবুমিনের মতো প্রোটিন থেকে রক্ষা পেতে পারে প্রস্রাবের মধ্যে রক্ত যখন কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। প্রস্রাবে শেষ হওয়া এই প্রোটিনগুলো শেষ পর্যন্ত শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রোটিনুরিয়াও ঘটতে পারে, যখন শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন তৈরি করে।
প্রস্রাবে আমিষ কেন যায়: আমাদের রক্তে যে প্রোটিন থাকে, তা সাধারণত কিডনির ফিল্টার দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হতে পারে না। প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যালবুমিন বের হওয়াটা অস্বাভাবিক। ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যালবুমিন নিঃসরণ উদ্বেগের বিষয়। প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। এছাড়াও কিডনির প্রদাহ, সংক্রমণ, এসএলই বা লুপাস, অ্যামাইলয়েডোসিস এবং কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রস্রাবে প্রোটিনের নিঃসরণ ঘটাতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে প্রস্রাবে প্রোটিন গেলে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও জ্বর, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম, কিংবা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও সামান্য পরিমাণ প্রোটিন প্রস্রাবে যেতে পারে। যদি ধারাবাহিকভাবে, বিশেষ করে তিন মাসের বেশি সময় ধরে প্রোটিন নিঃসরণ হয়, তাহলে তা ক্রনিক কিডনি রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে।
কীভাবে বুঝবেন
রুটিন প্রস্রাব পরীক্ষা ছাড়া এ সমস্যা শনাক্ত করা কঠিন। এজন্য ডায়াবেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতি ৬ মাস বা এক বছর পর প্রস্রাবে প্রোটিন পরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রোটিন নিঃসরণের মাত্রা বেশি হলে শরীরে ফোলাভাব, দুর্বলতা দেখা দেয় এবং মুখ ও পায়ে পানি জমতে পারে। প্রস্রাব ঘোলাটে বা সাদা রঙের হতে পারে।
প্রস্রাবে আমিষ গেলে কোন খাবারগুলো গ্রহণ করবেন: অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এ সমস্যার প্রধান সমাধান। কিডনির জটিলতা বা রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। পাশাপাশি, সঠিক ডায়েট পরিকল্পনাও জরুরি। প্রোটিনিউরিয়া কমাতে লো প্রোটিন ডায়েট সহায়ক হতে পারে। তবে ডায়েট থেকে পুরোপুরি প্রোটিন বাদ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে অপুষ্টি বা মাংসপেশির ক্ষয় হতে পারে।
অন্যদিকে, অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে টক্সিন হিসেবে জমা হতে পারে। তাই ওজন অনুযায়ী প্রয়োজনমতো প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কারও ওজন ৫০ কেজি হলে তার দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংসে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই তাজা মাছ-মাংস খাওয়া ভালো। খাদ্যতালিকা থেকে ডাল সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে, দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা অনুযায়ী যতটুকু দরকার ততটুকু খাওয়া উচিত। সোডিয়াম বা লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ (দৈনিক ২ গ্রামের বেশি নয়)। পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রাও বিবেচনায় রাখা দরকার। (পটাশিয়ামের স্বাভাবিক সিরাম স্তর ৩.
[ পুষ্টিবিদ, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ডন প রস র ব পর ম ণ আম দ র পর ক ষ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।
আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা।
আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।
আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।
অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।
আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।
এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।
এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।
বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।
লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল