প্রোটিন শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রোগ প্রতিরোধ, তরল ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ এবং পেশি ও হাড়ের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তবে, কখনও কখনও প্রস্রাবে প্রোটিনের উচ্চ উপস্থিতি কিডনির সমস্যা বা অন্য কোনো অসুস্থতার সংকেত হতে পারে। যখন আমাদের কিডনি ঠিকমতো কাজ করে না, তখন প্রোটিন ফিল্টার হয়ে প্রস্রাবে চলে যেতে পারে। এ অবস্থার নাম প্রোটিনুরিয়া বা অ্যালবুমিনুরিয়া। প্রস্রাবে প্রোটিনের উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেছে।
প্রস্রাবে প্রোটিন বলতে কী বোঝায়?
প্রোটিনুরিয়া, যা প্রস্রাবে প্রোটিন ফুটো নামে পরিচিত একটি অবস্থা, যা প্রস্রাবে রক্তবাহিত প্রোটিনের অত্যধিক পরিমাণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। প্রোটিন হলো প্রস্রাব বিশ্লেষণ করার জন্য ল্যাব টেস্টে পরীক্ষা করা উপাদানগুলোর মধ্যে একটি। এই চিকিৎসা অবস্থা প্রায়ই কিডনি রোগ নির্দেশ করে। আমাদের কিডনি ফিল্টার হিসেবে কাজ করে, যা সাধারণত বেশির ভাগ প্রোটিনকে এর মধ্য দিয়ে যেতে বাধা দেয়। তবে অ্যালবুমিনের মতো প্রোটিন থেকে রক্ষা পেতে পারে প্রস্রাবের মধ্যে রক্ত যখন কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। প্রস্রাবে শেষ হওয়া এই প্রোটিনগুলো শেষ পর্যন্ত শরীর থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রোটিনুরিয়াও ঘটতে পারে, যখন শরীর অতিরিক্ত পরিমাণে প্রোটিন তৈরি করে। 
প্রস্রাবে  আমিষ কেন যায়: আমাদের রক্তে যে প্রোটিন থাকে, তা সাধারণত কিডনির ফিল্টার দিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বের হতে পারে না। প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যালবুমিন বের হওয়াটা অস্বাভাবিক। ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি অ্যালবুমিন নিঃসরণ উদ্বেগের বিষয়। প্রস্রাবে প্রোটিন যাওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। এছাড়াও কিডনির প্রদাহ, সংক্রমণ, এসএলই বা লুপাস, অ্যামাইলয়েডোসিস এবং কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া প্রস্রাবে প্রোটিনের নিঃসরণ ঘটাতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর ক্ষেত্রে, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে প্রস্রাবে প্রোটিন গেলে প্রি-এক্লাম্পসিয়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও জ্বর, অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম, কিংবা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও সামান্য পরিমাণ প্রোটিন প্রস্রাবে যেতে পারে। যদি ধারাবাহিকভাবে, বিশেষ করে তিন মাসের বেশি সময় ধরে প্রোটিন নিঃসরণ হয়, তাহলে তা ক্রনিক কিডনি রোগের ইঙ্গিত দিতে পারে। 
কীভাবে বুঝবেন
রুটিন প্রস্রাব পরীক্ষা ছাড়া এ সমস্যা শনাক্ত করা কঠিন। এজন্য ডায়াবেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের প্রতি ৬ মাস বা এক বছর পর প্রস্রাবে প্রোটিন পরীক্ষা করা প্রয়োজন। প্রোটিন নিঃসরণের মাত্রা বেশি হলে শরীরে ফোলাভাব, দুর্বলতা দেখা দেয় এবং মুখ ও পায়ে পানি জমতে পারে। প্রস্রাব ঘোলাটে বা সাদা রঙের হতে পারে। 
প্রস্রাবে আমিষ গেলে কোন খাবারগুলো গ্রহণ করবেন: অনিয়ন্ত্রিত গ্লুকোজ এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা এ সমস্যার প্রধান সমাধান। কিডনির জটিলতা বা রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। পাশাপাশি, সঠিক ডায়েট পরিকল্পনাও জরুরি। প্রোটিনিউরিয়া কমাতে লো প্রোটিন ডায়েট সহায়ক হতে পারে। তবে ডায়েট থেকে পুরোপুরি প্রোটিন বাদ দেওয়া উচিত নয়, কারণ এতে অপুষ্টি বা মাংসপেশির ক্ষয় হতে পারে। 
অন্যদিকে, অতিরিক্ত প্রোটিন শরীরে টক্সিন হিসেবে জমা হতে পারে। তাই ওজন অনুযায়ী প্রয়োজনমতো প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, কারও ওজন ৫০ কেজি হলে তার দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত। প্রোটিনের উৎস হিসেবে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। তবে প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংসে লবণের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই তাজা মাছ-মাংস খাওয়া ভালো। খাদ্যতালিকা থেকে ডাল সম্পূর্ণ বাদ না দিয়ে, দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা অনুযায়ী যতটুকু দরকার ততটুকু খাওয়া উচিত। সোডিয়াম বা লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করাও গুরুত্বপূর্ণ (দৈনিক ২ গ্রামের বেশি নয়)। পটাশিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রাও বিবেচনায় রাখা দরকার। (পটাশিয়ামের স্বাভাবিক সিরাম স্তর ৩.

৫ থেকে ৫ mmol/L। অপরদিকে রক্তে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা প্রায় ১৩৫ থেকে ১৪৫ mmol/L)। প্রোটিনিউরিয়া আক্রান্ত রোগীর রক্তে চর্বি বেড়ে যাওয়া এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই তেল-চর্বি বিশেষত সম্পৃক্ত চর্বি কম খাওয়া উচিত। 

[ পুষ্টিবিদ, কিডনি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ডন প রস র ব পর ম ণ আম দ র পর ক ষ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

গান নিয়েই আমার সব ভাবনা

কর্নিয়া। তারকা কণ্ঠশিল্পী। অনলাইনে প্রকাশ পাচ্ছে বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া তাঁর দ্বৈত গান ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘ভাঙা ঘর’ ও ‘আদর’-এর পর প্রকাশ পাচ্ছে ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’। একনাগাড়ে দ্বৈত গান গেয়ে যাচ্ছেন, কারণ কী? 

শ্রোতাদের চাওয়া আর নিজের ভালো লাগা থেকেই দ্বৈত গান গাওয়া, এর বাইরে আলাদা কোনো কারণ নেই। কারণ, সব সময় ভাবনায় এটাই থাকে, যে কাজটি করছি, তা শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করবে কিনা। সেটি একক, না দ্বৈত গান– তা নিয়ে খুব একটা ভাবি না। তা ছাড়া রুবেল খন্দকারের সঙ্গে গাওয়া ‘ভাঙা ঘর’ ও অশোক সিংয়ের সঙ্গে গাওয়া ‘আদর’ গান দুটি যেমন ভিন্ন ধরনের, তেমনি বেলাল খানের সঙ্গে গাওয়া ‘তুমি ছাড়া নেই আলো’ অনেকটা আলাদা। আসল কথা হলো, যা কিছু করি, তার পেছনে শ্রোতার ভালো লাগা-মন্দ লাগার বিষয়টি প্রাধান্য পায়। 

দ্বৈত গানের সহশিল্পী হিসেবে নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার কারণ?

সহশিল্পীর কণ্ঠ ও গায়কি যদি শ্রোতার মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো হয়, তাহলে সে তরুণ, নাকি তারকা– তা নিয়ে ভাবার প্রয়োজন পড়ে না। এমন তো নয় যে, নতুন শিল্পীরা ভালো গাইতে পারে না। তা ছাড়া তারকা শিল্পী ছাড়া দ্বৈত গান গাইব না– এই কথাও কখনও বলিনি। তাই দ্বৈত গানে তারকাদের পাশাপাশি নতুনদের সহশিল্পী হিসেবে বেছে নিতে কখনও আপত্তি করিনি। 

প্রতিটি আয়োজনে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা কি ভার্সেটাইল শিল্পী প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য? 

হ্যাঁ, শুরু থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পরিচিতি গড়ে তুলতে চেয়েছি। এ কারণে কখনও টেকনো, কখনও হার্ডরক, আবার কখনও ফোক ফিউশনের মতো মেলোডি গান কণ্ঠে তুলেছি। গায়কির মধ্য দিয়ে নিজেকে বারবার ভাঙার চেষ্টা করছি। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী গান করতে ভালো লাগে। একই ধরনের কাজ বারবার করতে চাই না বলেই নানা ধরনের গান করছি। নিজেকে ভেঙে সব সময়ই নতুনভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা জারি রাখছি।

প্রযোজক হিসেবে নিজের চ্যানেলের জন্য নতুন কী আয়োজন করছেন? 

আয়োজন থেমে নেই। তবে কবে নতুন গান প্রকাশ করব– তা এখনই বলতে পারছি না। কারণ একটাই, অন্যান্য কাজের মতো গান তো ঘড়ি ধরে কিংবা সময় বেঁধে তৈরি করা যায় না। একেকটি গানের পেছনে অনেক সময় দিতে হয়। কোনো কোনো গানের কথা-সুর-সংগীতের কাটাছেঁড়া চলে দিনের পর দিন। এরপর যখন তা সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে হয়, তাখনই প্রকাশ করি। 

গান গাওয়ার পাশাপাশি মডেলিং বা অভিনয় করার ইচ্ছা আছে? 

সত্যি এটাই, গান নিয়েই আমার সব ভাবনা। তারপরও অনেকের অনুরোধে কয়েকটি পত্রিকার ফ্যাশন পাতার জন্য মডেল হিসেবে কাজ করেছি। তবে মডেল হব– এমন ইচ্ছা নিয়ে কাজ করিনি। অভিনয় নিয়েও কিছু ভাবি না। অন্য কোনো পরিচয়ে পরিচিত হতে চাই না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখতে চান ইয়ামাল
  • নির্মাতার ঘোষণার অপেক্ষায় চিত্রাঙ্গদা
  • শিশুর মাথা ঘামে কেন
  • কাঠফাটা রোদ্দুরে তপ্ত হাওয়া
  • গান নিয়েই আমার সব ভাবনা