পঞ্চগড় জেলা শহরের একটি স্বর্ণালংকারের দোকানের তালা ভেঙে ৫০ ভরি সোনা চুরি হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর ৫টা ৫৪ মিনিট থেকে সকাল সোয়া ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী। এ ঘটনার পর জেলা শহরের সব জুয়েলার্স ও স্বর্ণালংকারের দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।

যে দোকান থেকে স্বর্ণ চুরির অভিযোগ উঠেছে, সেটির নাম গিনি হাউস জুয়েলার্স। মঙ্গলবার ওই দোকানের মালিক লব বণিকের মেয়ের বিয়েরও আয়োজন ছিল বলে জানা গেছে। মেয়ের বিয়ের আয়োজনের দিনে আর দোকানের থাকা সব স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লব বণিক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গিনি হাউস জুয়েলার্সের মালিক লব বণিকের মেয়ের গায়েহলুদ ছিল সোমবার। মঙ্গলবার দিনভর ছিল বিয়ের আয়োজন। মঙ্গলবার সকালে লব বণিকের ভাগনে নন্দ দত্ত দোকান খুলতে গিয়ে দেখতে পান দোকানের সব স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে গেছে। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি সংঘবদ্ধ চোরচক্র ভোরে দোকানের তালা ভেঙে প্রবেশ করে সব চুরি করে নিয়ে যায়। পরে বিষয়টি তাঁরা পঞ্চগড় সদর থানা–পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

গিনি হাউস জুয়েলার্সের মালিক লব বণিক বলেন, ‘আমার ৫০ ভরির মতো স্বর্ণালংকার ও স্বর্ণ নিয়ে গেছে চোরেরা, এর মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা হবে। আজকে বাড়িতে আমার মেয়ের বিয়ের দিন। বিয়ের আনন্দ আজকে বিষাদে পরিণত হয়েছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশের কাছে অনুরোধ আপনারা দোষীদের শনাক্ত করে আমার হারানো স্বর্ণ উদ্ধারের ব্যবস্থা করুন।’

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন পঞ্চগড় জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মধুসুধন বণিক (রনি) জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় ৫টা ৫৪ মিনিটের পর ১০ থেকে ১২ জনের একটি চোরচক্র দোকানের তালা কেটে প্রবেশ করে অন্তত ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। কয়েকজনের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। তবে মানুষগুলো অপরিচিত মনে হচ্ছে।

মধুসুধন বলেন, ‘এ ঘটনায় দোকানমালিকের পক্ষ থেকে থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে। একজন ব্যবসায়ীকে শেষ করে দেওয়া এমন চুরির ঘটনার প্রতিবাদে আমরা আজ সারা দিন সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ রেখেছি। আশা করছি, পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’

জুয়েলারি দোকান থেকে স্বর্ণালংকার চুরির খবর জানার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ হিল জামান। তিনি বলেন, চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করতে এবং মালামাল উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে। দোকানের মালিকপক্ষের লোকজন থানায় এসেছেন, এ ঘটনায় মামলা হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র এ ঘটন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ