আস্থা রাখতে হচ্ছে তাইজুল–হাসানদের ব্যাটিং সামর্থ্যেও
Published: 22nd, April 2025 GMT
রোদ–বৃষ্টির খেলার মধ্যে সিলেট টেস্টে তৃতীয় দিনে হতে পেরেছে শুধু ৪৪ ওভার। দিন শেষে ৬ উইকেট হাতে নিয়েও খুব একটা স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। লিডটা এখনো মাত্র ১১২ রানের। মেহেদী হাসান মিরাজের ৩৫০–৪০০ রানের চাওয়া থেকে যা অনেকটাই দূরে।
তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে রানের লক্ষ্যটা তাই নামিয়ে আনতে হচ্ছে। দিন শেষের সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা মুমিনুল হকও সে রকমই বলে গেছেন। তাঁর দৃষ্টিতে এখন ৩০০ রান করা গেলেও সেটা ‘খুব ভালো’।
জিম্বাবুয়েকে শেষ পর্যন্ত কত রানের লক্ষ্য দিতে চায় বাংলাদেশ—এমন প্রশ্নেই কথাটা বলেছেন মুমিনুল, ‘৩০০ হলে খুব ভালো। সেটা না হলে ২৭০ থেকে ২৮০–এর ওপরে। ৩০০ হলে আমরা ভালো জায়গায় থাকব।’
মুমিনুলের বিশ্বাস, ৩০০ করাটা সম্ভব। আজ দিন শেষে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ৬০ ও জাকের আলী অপরাজিত আছেন ২১ রানে। এরপরও যাঁরা আছেন, মুমিনুলের আস্থা আছে তাঁদের ওপরও, ‘শান্ত (নাজমুল হোসেন) জাকেরের পরে আমাদের টেলএন্ডে যারা রয়েছে, তাইজুল এরপর হাসান তারাও ব্যাটিং করতে পারে। এ জন্যই বিশ্বাসটা বেশি।’
মুমিনুলের এমন বক্তব্যে মনে হতেই পারে—টপ অর্ডারদের ব্যর্থতা কারণে বাংলাদেশ দলকে এখন টেলএন্ডারদের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। কিন্তু মুমিনুলের ব্যাখ্যা ভিন্ন, ‘এই অর্থে কথাটা বলছি যে টেলএন্ডাররাও ভালো ব্যাটিং করতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে টেলএন্ডারদের ওপরে নির্ভরশীল। তবে যখন খেলবেন, তখন টেলএন্ডারদের ওপরও নির্ভর করতে হবে। যখন ব্যাটিং করা দরকার, তারাও ব্যাটিং করতে পারে, এটা আমাদের প্লাস পয়েন্ট।’
তবে শুধু ব্যাটিং করতে জানলেই তো হবে না, পরিস্থিতি অনুযায়ী সেটা করে দেখাতে হবে। মুমিনুলের ভাষায় যা ‘ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং’। তিনি বলেছেন, ‘অনেক ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করতে হবে, কালকে সকালে খেলা হয়তো খুব কঠিন হয়ে আসবে। সে সময়ে ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিং করা লাগবে, একটা সময় খেলাটা একটু ছাড়বে। সে সময়ে আমরা খেলাটা ধরতে পারব। লম্বা সময় মনোযোগ দিয়ে ব্যাটিং করতে হবে।’
প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ দলের হাল ধরেছিলেন মুমিনুল। মাহমুদুলের সঙ্গে ৬০ রানের জুটি গড়েন, নাজমুলের সঙ্গে ৬৫ রানের। কিন্তু নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি, ৮৪ বলে ৪৭ রান করে আউট হয়ে গেছেন তিনি। মাহমুদুলও সেট হওয়ার পর ৬৫ বলে ৩৩ রান করে আউট হয়েছেন। দিন শেষে নিজেদের কাঁধেই দায়টা দিয়েছেন মুমিনুল।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডলারের সিংহাসন কি কেঁপে উঠছে
গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে ফেরার পর বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান মনে করিয়ে দিয়েছেন চার্লস পি কিন্ডলবার্গারের সেই কথা, ‘আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে বেশি ভাবলে মানুষ পাগল হয়ে যায়।’ এমন অস্থির সময়েই ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে ডলারের আধিপত্য নিয়ে দুটি বই—পল ব্লুস্টেইনের ‘কিং ডলার’ এবং কেনেথ রগফের ‘আওয়ার ডলার, ইয়োর প্রবলেম’।
দুটি বই-ই ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর প্রকাশিত। ব্লুস্টেইনের বইটি বেরিয়েছিল ট্রাম্পের বিশ্ব অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর আগে। রগফ ও আমি ১৯৮৩ সাল থেকে একসঙ্গে গবেষণা করেছি। ব্লুস্টেইন ছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট–এর সাংবাদিক।
এমআইটিতে পড়ার সময় আমরা শিখেছিলাম, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে সবকিছু একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই ডলারের আধিপত্য বোঝার জন্য বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক চিন্তায় পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হয়। রগফ ও ব্লুস্টেইনের বই এই বিষয়গুলো সহজ করে ব্যাখ্যা করেছে। ডলার ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা ও বাণিজ্যের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ডলারের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছিল।
সে সময় অধিকাংশ দেশ নিজেদের মুদ্রাকে ডলারের সহযোগী হিসেবে দাঁড় করায়। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দেয়, চাইলে প্রতি আউন্স সোনার বিনিময়ে তারা ৩৫ ডলার ফেরত দেবে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল অপেক্ষাকৃত স্বাধীন; তবে তাকে বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতার দিকেও খেয়াল রাখতে হতো।
১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধব্যয়, বাজেট–ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন তখন ডলারে স্বর্ণ বিনিময় বন্ধ করেন এবং আমদানি শুল্ক বসান। ট্রেজারি সেক্রেটারি জন কনলি তখন বলেছিলেন, ‘ডলার আমাদের মুদ্রা, কিন্তু এটা তোমাদের সমস্যা।’ এরপর বড় বড় দেশগুলো নিজেদের মুদ্রাকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করে। অনেকেই ভেবেছিলেন, ডলারের আধিপত্য কমবে, কিন্তু তা হয়নি।
বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।ডলার নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টিকে থেকেছে। ১৯৭০-এর দশকে আইএমএফ বিশেষ ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) চালু করলেও, ডলার বিকল্প হারায়নি। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পল ভলকারের কঠোর নীতিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে, আর্থিক বাজারের উদারীকরণ হয় এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ড বিশ্বের কাছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে জনপ্রিয় হয়।
বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ৮৮ শতাংশে এখনো ডলার বিজড়িত। তবে ডলারের শক্তির ভিত্তি (আইনের শাসন, মুক্তবাজার, মূল্য স্থিতিশীলতা) ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমেরিকার আর্থিক অব্যবস্থাপনা এত বেড়েছে যে কংগ্রেসের কাছ থেকে দায়িত্বশীল বাজেট প্রত্যাশা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ব্লুস্টেইন কিছুটা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু রগফ মনে করেন, ডলারের আধিপত্যের সময় ফুরিয়ে আসছে এবং পতনের মূল কারণ আমেরিকার নিজের ভেতর থেকেই আসছে।
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে, মিত্রদের আস্থা হারিয়েছে এবং দেশের ভেতর ফেডারেল রিজার্ভ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এতে ডলারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুনএকটি কাগজের নোট যেভাবে অস্ত্র হয়ে উঠল০২ এপ্রিল ২০২৫বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।
এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প যখন ‘মুক্তির দিন’ ঘোষণা করে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তখন মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যায়, আর ডলার পড়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন সম্পদের ওপর আস্থা কমে যায় এবং শেয়ারবাজারও বড় ধাক্কা খায়।
এই এপ্রিল মাস সত্যিই টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর মাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। যদি বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে হয়তো বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় ডলারের একক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে।
● মরিস অবস্ফেল্ড আইএমএফের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে)-এর অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত