নোবিপ্রবিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখী
Published: 23rd, April 2025 GMT
সূর্য উঠেছে পূর্ব দিগন্তে। রক্তিম আভায় সেজে উঠেছে প্রকৃতি। আর ঠিক তখনই যেন সোনালী রশ্মির আলিঙ্গনে জেগে উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রাঙ্গণ।
তবে সেই আলোয় স্নান করে দাঁড়িয়ে আছে শত শত সূর্যমুখী। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যমুখীগুলো যেন নিঃশব্দে গান গায় প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে। জীবনের আনন্দ ও আশার গল্প বলে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশে, একাডেমিক ভবনের সামনে এবং আশপাশের খোলা জায়গাগুলোতে এ বছর সূর্যমুখীর বীজ বোনা হয়েছিল। আর সেগুলোই এই সময়ে এসে হলুদের এক অভূতপূর্ব রাজত্ব গড়ে তুলেছে।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবিতে ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে পূবালী ব্যাংকের ক্যাম্পেইন
নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের নিগদে ওমর বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর
ফুলগুলো যেন প্রকৃতির তুলিতে আঁকা এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখান থেকে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে প্রতিটি পলকে। সূর্য যেমন আলো দেয়, সূর্যমুখী যেন সেই আলোকে ধারণ করে ফিরিয়ে দেয় শতগুণ রঙে, রূপে আর রোমাঞ্চে।
এ সূর্যমুখী শুধু দৃষ্টির খোরাক নয়, এটি যেন এক দর্শনের বাহক। সূর্য যেমন প্রতিদিন উঠে আসে, তার আলো ছড়িয়ে দেয় নির্বিচারে, তেমনি সূর্যমুখীও আমাদের শেখায় একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর আশাবাদের পাঠ। তার মাথা নিচু নয়, সে চেয়ে থাকে ওপরে—সূর্যের দিকে, আশার দিকে। শক্ত লিকলিকে শরীর, তবে সবুজ পাতায় মুখভরা উচ্ছ্বাস।
এই ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনে যত বাধাই আসুক, মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতে হবে। কারণ আশার আলো ঠিকই উঠবে কোন এক প্রভাতে।
নোবিপ্রবিতে সূর্যমুখী শুধু ফুল নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক আলোকবর্তিকা। যা শিক্ষার্থীদের মনে জাগায় শিল্পবোধ, সৌন্দর্য্য পিপাসা আর প্রকৃতিপ্রীতি।
ক্লাসের ফাঁকে, পরীক্ষা শেষে, অথবা শুধুই হাঁটার সময় এই ফুলগুলো হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের একান্ত সাথী, নীরব শ্রোতা, আনন্দের উৎস, আর অন্তরের কবি হয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে সূর্যমুখীর সারি যেন সময়কে থমকে দেয়। হঠাৎ কেউ থেমে দাঁড়ায়, চোখ রাখে সেই সোনালী ফুলের গভীরতায়। আর হয়তো নিজের ভেতরের এক অজানা অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়। এ যেন এক নিরব বিপ্লব, যেখানে বন্দুক নেই, স্লোগান নেই, কিন্তু আছে রঙ, ঘ্রাণ, আর আলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা বলেন, “হলুদের রাজত্বে দাঁড়িয়ে মনে হয় যেন স্বপ্নে আছি। এখানকার সৌন্দর্য দেখে মন আবিষ্ট হয়ে যায়। এই ফুল শুধু চোখের আরাম নয়, হৃদয়ের গভীরেও ছুঁয়ে যায়।”
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান বলেন, “শৈশব থেকে ফুল ভালোবাসি। কিন্তু এত সূর্যমুখী একসঙ্গে আগে কখনো দেখিনি। মনে হয়, সূর্যটাই বুঝি মাটিতে নেমে এসেছে। সারি সারি হলুদ ফুল দেখে চোখে-মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়।”
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তু পাল বলেন, “প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে সূর্যমুখী ফুলগুলো। ক্লান্ত মন মুহূর্তেই হাসিতে ভরে যায়। এই ফুল যেন জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। প্রকৃতি এখানেই যেন পাঠ দিচ্ছে জীবনের, সৌন্দর্যের।”
শুধু শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ এ দৃশ্যপটে। পরিবারসহ আসা রেজুয়ানা সুলতানা বলেন, “এ রকম অভিজ্ঞতা সত্যিই বিরল। আমার শিশুরা হাতে সূর্যমুখী ফুল নিয়ে দৌড়াচ্ছে, আর আমরা বড়রা মুগ্ধ হয়ে দেখছি। এ যেন নিছক ফুলের প্রদর্শনী নয়, এটি এক পরিপূর্ণ অনুভব।”
নোয়াখালী শহরের বাসিন্দা মাজেদ খন্দকার পরিবার নিয়ে সূর্যমুখী বাগানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “সূর্যমুখী ফুলের কথা শুনে পরিবার নিয়ে নোবিপ্রবিতে ঘুরতে এসেছি। সূর্যমুখী ফুলের এমন সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। পরিবারের সবাই অনেক খুশী।”
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব প রব ত স ন দর য পর ব র এই ফ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’