সূর্য উঠেছে পূর্ব দিগন্তে। রক্তিম আভায় সেজে উঠেছে প্রকৃতি। আর ঠিক তখনই যেন সোনালী রশ্মির আলিঙ্গনে জেগে উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রাঙ্গণ।

তবে সেই আলোয় স্নান করে দাঁড়িয়ে আছে শত শত সূর্যমুখী। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সূর্যমুখীগুলো যেন নিঃশব্দে গান গায় প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে। জীবনের আনন্দ ও আশার গল্প বলে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ পাশে, একাডেমিক ভবনের সামনে এবং আশপাশের খোলা জায়গাগুলোতে এ বছর সূর্যমুখীর বীজ বোনা হয়েছিল। আর সেগুলোই এই সময়ে এসে হলুদের এক অভূতপূর্ব রাজত্ব গড়ে তুলেছে।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবিতে ডিজিটাল ব্যাংকিং নিয়ে পূবালী ব্যাংকের ক্যাম্পেইন

নোবিপ্রবির সঙ্গে তুরস্কের নিগদে ওমর বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর

ফুলগুলো যেন প্রকৃতির তুলিতে আঁকা এক জীবন্ত ক্যানভাস, যেখান থেকে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে প্রতিটি পলকে। সূর্য যেমন আলো দেয়, সূর্যমুখী যেন সেই আলোকে ধারণ করে ফিরিয়ে দেয় শতগুণ রঙে, রূপে আর রোমাঞ্চে।

এ সূর্যমুখী শুধু দৃষ্টির খোরাক নয়, এটি যেন এক দর্শনের বাহক। সূর্য যেমন প্রতিদিন উঠে আসে, তার আলো ছড়িয়ে দেয় নির্বিচারে, তেমনি সূর্যমুখীও আমাদের শেখায় একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর আশাবাদের পাঠ। তার মাথা নিচু নয়, সে চেয়ে থাকে ওপরে—সূর্যের দিকে, আশার দিকে। শক্ত লিকলিকে শরীর, তবে সবুজ পাতায় মুখভরা উচ্ছ্বাস।

এই ফুল আমাদের মনে করিয়ে দেয়, জীবনে যত বাধাই আসুক, মাথা উঁচু করে সামনে তাকাতে হবে। কারণ আশার আলো ঠিকই উঠবে কোন এক প্রভাতে।

নোবিপ্রবিতে সূর্যমুখী শুধু ফুল নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক আলোকবর্তিকা। যা শিক্ষার্থীদের মনে জাগায় শিল্পবোধ, সৌন্দর্য্য পিপাসা আর প্রকৃতিপ্রীতি।

ক্লাসের ফাঁকে, পরীক্ষা শেষে, অথবা শুধুই হাঁটার সময় এই ফুলগুলো হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের একান্ত সাথী, নীরব শ্রোতা, আনন্দের উৎস, আর অন্তরের কবি হয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে সূর্যমুখীর সারি যেন সময়কে থমকে দেয়। হঠাৎ কেউ থেমে দাঁড়ায়, চোখ রাখে সেই সোনালী ফুলের গভীরতায়। আর হয়তো নিজের ভেতরের এক অজানা অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়। এ যেন এক নিরব বিপ্লব, যেখানে বন্দুক নেই, স্লোগান নেই, কিন্তু আছে রঙ, ঘ্রাণ, আর আলো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা বলেন, “হলুদের রাজত্বে দাঁড়িয়ে মনে হয় যেন স্বপ্নে আছি। এখানকার সৌন্দর্য দেখে মন আবিষ্ট হয়ে যায়। এই ফুল শুধু চোখের আরাম নয়, হৃদয়ের গভীরেও ছুঁয়ে যায়।” 

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান বলেন, “শৈশব থেকে ফুল ভালোবাসি। কিন্তু এত সূর্যমুখী একসঙ্গে আগে কখনো দেখিনি। মনে হয়, সূর্যটাই বুঝি মাটিতে নেমে এসেছে। সারি সারি হলুদ ফুল দেখে চোখে-মনে আনন্দের ঢেউ খেলে যায়।” 

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তু পাল বলেন, “প্রতিদিন ক্লাসে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে সূর্যমুখী ফুলগুলো। ক্লান্ত মন মুহূর্তেই হাসিতে ভরে যায়। এই ফুল যেন জীবনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। প্রকৃতি এখানেই যেন পাঠ দিচ্ছে জীবনের, সৌন্দর্যের।”

শুধু শিক্ষার্থী নয়, ক্যাম্পাসে আসা দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ এ দৃশ্যপটে। পরিবারসহ আসা রেজুয়ানা সুলতানা বলেন, “এ রকম অভিজ্ঞতা সত্যিই বিরল। আমার শিশুরা হাতে সূর্যমুখী ফুল নিয়ে দৌড়াচ্ছে, আর আমরা বড়রা মুগ্ধ হয়ে দেখছি। এ যেন নিছক ফুলের প্রদর্শনী নয়, এটি এক পরিপূর্ণ অনুভব।”

নোয়াখালী শহরের বাসিন্দা মাজেদ খন্দকার পরিবার নিয়ে সূর্যমুখী বাগানে এসেছিলেন। তিনি বলেন, “সূর্যমুখী ফুলের কথা শুনে পরিবার নিয়ে নোবিপ্রবিতে ঘুরতে এসেছি। সূর্যমুখী ফুলের এমন সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। পরিবারের সবাই অনেক খুশী।”

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ব প রব ত স ন দর য পর ব র এই ফ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ