অ্যাটেনশন ইকোনমি কী

হাতের মুঠোয় এখন অসীম তথ্য। সবাই চায় আপনার মনোযোগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে। তাই আপনি স্মার্টফোনে যা কিছু দেখেন, সবকিছুই এমনভাবে সাজানো, যা আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য। কেননা এখানে আপনি যা কিছু দেখছেন, লাইক বা মন্তব্য করছেন, যত প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনছেন, এর মাধ্যমে কেউ না কেউ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এখানে আপনার সময়, মনোযোগ হলো মূল্যবান সম্পদ।

আপনার মতো এ রকম কোটি কোটি মানুষের সময় আর মনোযোগের বিনিময়ে অনলাইনে চলছে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। আর এটিকেই বলা হচ্ছে অ্যাটেনশন ইকোনমি, যেখানে সবাই আপনার মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে ব্যস্ত। ঠিক এ কারণেই আপনি কিছুক্ষণ পরপর ফোন চেক না করে পারেন না।

একবিংশ শতকের এই ডিজিটাল যুগে আপনি যে স্ট্রিমিং সার্ভিস, রিলস, ভিডিও, অডিও বা বিজ্ঞাপন—যা-ই দেখেন বা শোনেন না কেন, এ সবই এমনভাবে ডিজাইন করা, যাতে এসব আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে আর তার মাধ্যমে অন্যরা ব্যবসা করেন।

আরও পড়ুনঘুমানোর সময় মুঠোফোন কোথায় রাখবেন০৩ মার্চ ২০২৩মনোযোগ অর্থনীতির মূল কথা

ইন্টারনেট অসীম তথ্য আর বিজ্ঞাপনে ভরপুর। কিন্তু আপনার সময় ও মনোযোগ সীমিত। তাই সবচেয়ে কম সময়ে আপনি যাতে সবচেয়ে বেশি তথ্য ও সেবা ভোগ করতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা চলছে তো চলছেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন সাইটের অ্যালগরিদম আপনার সর্বোচ্চ সময় মনোযোগ ধরে রাখতে সারাক্ষণ বিভিন্নভাবে কাজ করে চলেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এবং আপনার জন্য পারসোনালাইজড কনটেন্ট তৈরি করে সামনে এনে চলছে ‘সাইকোলজিক্যাল ম্যানিপুলেশন’। আপনি কোন ধরনের কনটেন্ট উপভোগ করেন, তা ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করে আপনাকে বেশি বেশি সে ধরনের কনটেন্টই দেখানো হচ্ছে। যাতে আপনার মনোযোগ পর্দা থেকে না সরে।

আরও পড়ুনমুঠোফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করেও যেভাবে ভালো থাকবেন২৯ মার্চ ২০২৩মনে রাখবেন

অপনার মনোযোগ ব্যবহার করে অন্যের ব্যবসা চলছে। অন্যরা জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে অর্থ উপার্জন করছেন। আপনার মনোযোগ, সময়, এমনকি আপনি নিজেও এভাবে নিজের অজান্তেই একসময় পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ অর্থ উপার্জন করলেও আপনার স্বাভাবিক পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবন থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্য—সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অনিয়ন্ত্রিত স্ক্রলিংয়ের শেষ কোথায় কে জানে! তাই আপনি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।

সূত্র: মিডিয়াম

আরও পড়ুনসকালে উঠেই মুঠোফোন দেখেন? জেনে নিন আপনার ব্যক্তিত্বের ধরন২৫ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আপন র স ব যবহ ই আপন র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ