ফিলিস্তিনের গাজা। একে আপনি যেভাবেই ডাকুন না কেন–গণহত্যা কেন্দ্র, রক্ত ঝরানোর এক অনন্ত চক্র, যন্ত্রণা ও মৃত্যুকূপ, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বন্দিশিবির কিংবা ইসরায়েলের বড় অংশ একে যেভাবে দেখছে অর্থাৎ একে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষাও করতে পারেন। তেল আবিবের অ্যাশকেনাজি ইহুদিরা পশ্চিমা বুদ্বুদে বাস করে, সকালে ক্যাপুচিনোতে চুমুক দেয় আর তাদের যোগব্যায়ামের শিক্ষকের কথা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। অথচ অদূরেই ঘটছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা, যা স্রেব্রেনিৎসা বা রুয়ান্ডার পর বিশ্বে দেখা যায়নি। একটা বিষয় তারা কেউই যেন বুঝতে পারছে না–হামাস আত্মসমর্পণ করবে না। হয়তো ধারণা করা হয়েছিল, গাজা থেকে হামাসের নেতারা এক সময়ের ফাতাহর মতো অর্থ নিয়ে পালাবেন। কিন্তু ১৮ মাসের পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এবং দুই মাসের অনাহারের পরও তা না ঘটায় এটি স্পষ্ট–ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর শত্রুকে কতটা কম বোঝেন!
ইসরায়েলের সর্বশেষ ‘প্রস্তাব’ ছিল মূলত আত্মসমর্পণের আহ্বান। সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৪৫ দিনের জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহ এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি জানিয়েছিল ইসরায়েল। হামাসের জবাব ছিল: তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত, যদি বিনিময়ে কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং একটি দীর্ঘমেয়াদি হুদনা বা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। মানে তারা আর নতুন টানেল খনন করবে না, অস্ত্র উন্নত করবে না এবং গাজার শাসনব্যবস্থা অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীর কাছে হস্তান্তর করবে। হামাস শুরুতেই তারা যে দুটি শর্ত দিয়েছিল, সেগুলো থেকে একচুলও সরেনি: তারা নিরস্ত্র হবে না এবং তাদের দাবি, ইসরায়েলি বাহিনী গাজা থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে যাক এবং এই যুদ্ধের পুরোপুরি অবসান ঘটুক।
আত্মসমর্পণ করবে না হামাস
হামাস কেন আত্মসমর্পণ করবে না, তার অনেক কারণ রয়েছে। দিনরাত তারা এবং গাজার জনগণ যে দুর্দশা ভোগ করছে, তারপরও তারা পিছু হটছে না। মার্চে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে দেওয়ার পর দেড় হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। হামাসের প্রথম সারির নেতৃত্ব, বেসামরিক সরকার, পুলিশ বাহিনী এবং প্রায় সব হাসপাতাল শেষ হয়ে গেছে। রাফাহ শহর ধ্বংস করা হচ্ছে। তবুও নির্বাসনে যাওয়ার জন্য তাদের বিপুল অর্থ প্রস্তাব করলেও, তা প্রত্যাখ্যান করে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত হয়তো অনেক আগেই নির্বাসনে চলে যেতেন, যেমনটা তিনি করেছিলেন ১৯৮২ সালে পশ্চিম বৈরুতে পিএলও বাহিনী ঘেরাও হওয়ার পর। ফাতাহও এতক্ষণে বিদেশে পাড়ি জমাত। কিন্তু এই উদাহরণ হামাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেন?
প্রথমত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ব্যর্থতা এবং সহিংসতা দেশটিকে যেমন চিরতরে পাল্টে দিয়েছে, তেমনি গাজার ধ্বংসস্তূপ ফিলিস্তিনি সংগ্রামকেও ভিন্ন রূপ দিয়েছে। গাজা এখন সব ফিলিস্তিনির কাছে পবিত্র ভূমিতে পরিণত হয়েছে।
এই যুদ্ধে গাজার এমন কোনো পরিবার নেই, যাদের স্বজন শহীদ হয়নি বা যাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়নি। হামাস বা অন্য কোনো প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে এই জনগণ থেকে আলাদা করা সম্ভব নয়। সমষ্টিগত কষ্ট যত বাড়ছে ততই তাদের নিজেদের ভূমিতে টিকে থাকার ইচ্ছাশক্তিও বাড়ছে; যেমনটা নিরস্ত্র দক্ষিণ হেবরনের কৃষকরা প্রমাণ করে দিয়েছেন। আরও একটি বিষয়, ইসরায়েলের নির্দয় আচরণের কারণেই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রেরণা জন্মেছে। 
ইসরায়েলের ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য’
ইসরায়েল শুধু জমি বা নিয়ন্ত্রণই চায় না। তারা সব সময় আরও বেশি চায়। তাদের ধর্ম অঞ্চলের অন্য সব ধর্মের ওপর আধিপত্য বিস্তার না করা পর্যন্ত তারা থামে না। এমনকি ইস্টার সানডেতে খ্রিষ্টানরাও মুসলমানদের মতোই এই আচরণের শিকার হয়। তাদের বসতি স্থাপনের কাজ যুদ্ধের সময়ের তুলনায় শান্তির সময়েই আরও বাড়ে। যেমন অসলো চুক্তির পর তারা পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করে।  
বস্তুত ইসরায়েল কখনোই দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে বিশ্বাসী ছিল না, কারণ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং তাদের উত্তরসূরিদের মনে সব সময় শুধু একটি রাষ্ট্রের ধারণাই ছিল। ইতামার বেন গভির, বেজালেল স্মোত্রিচ এবং নেতানিয়াহু মিলে যা করছেন, তা হচ্ছে ‘চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করা’; অর্থাৎ ডেভিড বেন গুরিয়ন যে ফিলিস্তিনিদের ‘ইসরায়েলের ভূমি’ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন, সেটা সম্পন্ন করা।
আজ যদি হামাস আত্মসমর্পণ করে, গাজাও আত্মসমর্পণ করে, সেটি হবে পুরো ফিলিস্তিনি আন্দোলনের আত্মসমর্পণ। এটি এ কারণে নয় যে, সব ফিলিস্তিনি ধর্মপ্রাণ বা ফাতাহ অজনপ্রিয়। বরং এ কারণে যে, প্রতিরোধই এখন দখলদারিত্ব অবসানের একমাত্র পথ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল গাজা, পশ্চিম তীর, জেরুজালেম এবং নিজ দেশের ভেতরের সব ফিলিস্তিনির ওপর যে দুর্ভোগ চাপিয়ে দিয়েছে, তার ব্যাপকতা এমন যে এখন হামাসের ভাগ্যই ফিলিস্তিনের ভাগ্য হয়ে গেছে।
তবে হামাস থেকে ফাতাহ আলাদা এ কারণে যে, হামাস একটি ধর্মীয় সংগঠন। এই যুদ্ধের সূচনা তারা করেছিল আল-আকসা মসজিদে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের অনুপ্রবেশের প্রতিক্রিয়ায়। গাজার ফিলিস্তিনিরা যে নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হচ্ছে, সেটার অর্থ খোঁজার জন্য তারা নিজেদের ধর্মের দিকেই ফিরে যাচ্ছে।
কৌশলগত কারণ
হামাস যে লক্ষ্যে স্থির, এ সংগঠন যে দুর্নীতির বাইরে, তার পেছনের কারণ তাদের সম্মিলিত শৃঙ্খলা ও ইমান। বিষয়টি সবার ওপরই প্রভাব ফেলেছে।
রিফাত রাদওয়ান। ২৩ বছর বয়সী একজন প্যারামেডিক পেশাজীবী, যাঁর মৃত্যুর মুহূর্তের কথা তিনি রেকর্ড করেছেন। মৃত্যুর আগে আল্লাহর কাছে তিনি দোয়া করছিলেন যেন তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত না পড়ার জন্য ক্ষমা পান। তিনি হয়তো খুব ধার্মিক ছিলেন না এবং স্পষ্টতই হামাসের সদস্যও ছিলেন না, কিন্তু মৃত্যুর শেষ মুহূর্তে ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, তাঁর ধর্মীয় বিশ্বাস কতটা গভীর ছিল। যদি কখনও গাজার ফিলিস্তিনিদের সাহস ও আত্মত্যাগের কোনো প্রতীক খোঁজা হয়, রাদওয়ানই ছিলেন সেই প্রতীক। মৃত্যুশয্যাতেও তিনি ইমানের পরিচয় দিয়েছেন। গাজার ইমানও তদ্রূপ ধ্বংস হবে না। হামাস কেন আত্মসমর্পণ করবে না, তার আরও কিছু কৌশলগত কারণও রয়েছে। একটি সংগঠন হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ যাই হোক, যেমন তামিল টাইগার বা চেচেন বিদ্রোহীদের মতো অনেক বিদ্রোহী দল বড় সামরিক শক্তির দ্বারা নির্মূল হয়েছে আবার ইটিএর মতো দলও লক্ষ্য অর্জন না করেই নিঃশেষ হয়ে গেছে। তারপরও হামাস বিশ্বাস করে, তারা ইতোমধ্যে তাদের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করেছে। সেই লক্ষ্য ছিল–ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংগ্রামকে আবারও বিশ্বের মানবাধিকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বেড়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের ৫৩ শতাংশ ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক মত পোষণ করে, যা ৭ অক্টোবরের আগের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি।
জনমতও হামাসের পক্ষে, যেখানে হেরেছে ইসরায়েল। বিশেষ করে সেই সব দেশে, যেখানে হামাস নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত, মানুষকে বলা হয়েছে তারা যেন হামাসকে সন্ত্রাসী হিসেবে ভাবে। কিন্তু মানুষ ক্রমেই সেই ধারণা থেকে সরে আসছে। এমনকি যদিও তারা ৭ অক্টোবরের ঘটনাকে ভয়ংকর অপরাধ হিসেবেই দেখে।
যদি ইসরায়েল চায় এই যুদ্ধকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে শেষ করতে, তবে তারা নিশ্চিত থাকতে পারে–একই লক্ষ্য প্রতিটি ফিলিস্তিনির মনেও স্থায়ীভাবে গেঁথে গেছে। নেতানিয়াহু যতদিন এই ব্যর্থ অভিযানে গাজায় এগিয়ে যাবেন, ততদিন ইউরোপের বড় দেশগুলো বাধা হয়ে দাঁড়াবে। যেমন ফ্রান্স ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকে আরও এগিয়ে যাবে। v

ডেভিড হার্স্ট: মিডল ইস্ট আইয়ের প্রধান সম্পাদক; মিডল ইস্ট আই থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র এই য দ ধ লক ষ য প রস ত র জন য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

চীনের উত্থান ও ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাস্তবতা

মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ সম্ভাবনা ক্ষীণ; কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার ত্রিসংযোগস্থলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা জটিল করে তুলছে, ঠিক সেই সময়ে যখন চীন কৌশলগতভাবে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। 

চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামের রাজধানী আইজলে একটি চমকপ্রদ রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ঘেঁষা এই রাজ্যে মিয়ানমারভিত্তিক দুটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী একীভূত হওয়ার চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা। 
চিনল্যান্ড কাউন্সিল (সিসি) কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের চিন রাজ্যে সক্রিয় ছিল। ২০২১ সালে ইন্টেরিম চিন ন্যাশনাল কনসালটেটিভ কাউন্সিল (আইসিএনসিসি) গঠিত হয়। এটি গঠিত হয় মূলত সিসি-এর কিছু ভিন্নমতাবলম্বী অংশের উদ্যোগে। উভয় গোষ্ঠীই ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে– গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারী মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে– লড়াই করেছে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা গণমাধ্যমকে জানান, চিনের জনগণের সংগ্রামে সহায়তা করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য থেকেই তিনি এই একত্রীকরণে ভূমিকা রাখেন। একীভূত সংগঠনের নাম রাখা হয়– চিন ন্যাশনাল কাউন্সিল (সিএনসি)।
ভারতের মিজোরামে মিজো, পার্শ্ববর্তী মণিপুরের কুকি, মিয়ানমারের চিন ও তার আশপাশের রাজ্যের চিন জনগণ এবং বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের বম সম্প্রদায় একই জাতিগোষ্ঠীর অংশ, যাদের সম্মিলিতভাবে ‘জো জনগোষ্ঠী’ (মিজো-কুকি-চিন সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত নাম) বলা হয়। আন্তর্জাতিক ও প্রাদেশিক সীমারেখা দ্বারা বিভক্ত হলেও তাদের মধ্যে একটি গভীর জাতিগত বন্ধন বজায় আছে। তবে একটি ভারতীয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহীদের ঐক্য গড়ার পদক্ষেপ নেওয়া নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারত মিয়ানমার নিয়ে দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে এসেছে। ভারত জান্তা সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বজায় রাখতে সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে। এ ক্ষেত্রে দিল্লিতে গণতান্ত্রিক বিরোধী পক্ষের সদস্যদের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানোর ঘটনাও উল্লেখযোগ্য।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের মেইতেই ও নাগা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অংশ মণিপুর ও মিয়ানমারভিত্তিক কুকি-চিন বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে। এই কুকি-চিন বিদ্রোহীরা আক্রমণ চালাচ্ছে মিয়ানমারভিত্তিক মেইতেই ও নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর ওপর। মেইতেই ও নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো আবার জান্তা সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে চলছে।
লালদুহোমার দলের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের জো জনগণের প্রতি সমর্থন প্রকাশের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে– ভারত কি জো জাতিগোষ্ঠীভুক্ত চিন বিদ্রোহীদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করছে, যে বিদ্রোহীরা বর্তমানে মিয়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে?
এপ্রিল মাসে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দেখা করেন। অভ্যুত্থানের পর তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। এ সাক্ষাৎ জান্তা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বার্তা দেয়। মিয়ানমারে চলমান অস্থিরতা ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর জন্য এক কূটনৈতিক সংকটে পরিণত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি : ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতপন্থি শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হওয়া এবং তাতে ভারতের কৌশলগত পরিবেশ আরও জটিল হয়ে ওঠা।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভারত স্পষ্টভাবে হাসিনাপন্থি অবস্থান নিয়েছে। তিনি ও তাঁর দলের শীর্ষ নেতারা এখন ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান মুহাম্মদ ইউনূস এখন চীনঘেঁষা নীতি নিয়েছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে তাঁর চার দিনের চীন সফরসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তা স্পষ্ট। ঢাকা থেকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউনূস সরকারের ওপর মার্কিন প্রভাবও বাড়ছে।
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতি সফল করতে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক জরুরি। কারণ এই নীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সংযোগ জোরদারে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি এটি সীমান্তবর্তী মিয়ানমার ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে। তবে বাংলাদেশের ভেতরে ইসলামপন্থি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর পুনঃসংগঠনের ইঙ্গিত আসামে ও পশ্চিমবঙ্গে উদ্বেগ তৈরি করছে।
সতর্ক কৌশলের প্রয়োজন
ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এক জটিল ভূকৌশলগত এলাকা। যেখানে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়াবলির সীমানা প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে মিশে যায়। দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার মিলনস্থলে অবস্থিত এই অঞ্চল। অঞ্চলটি জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময়, পরিবেশ ও ভূপ্রকৃতিগতভাবে সংবেদনশীল। রাজনৈতিকভাবেও জটিল। ফলে এখানে নিরাপত্তা, কৌশলগত ও মানবিক সমস্যা সব ঘনীভূত।
ভারতের পশ্চিম সীমান্তে মূল উদ্বেগ পাকিস্তান ও পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদ। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে খেলোয়াড় অনেক। তাদের স্বার্থও পরস্পরবিরোধী। বহু জাতিগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রের স্বার্থ-সংঘাতে এই অঞ্চল প্রায় স্থায়ীভাবে উত্তেজনাপূর্ণ। ভারতে সম্ভবত আর কোনো অঞ্চলেই অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সীমান্তবর্তী জাতিগোষ্ঠীর উপস্থিতি, তাদের জাতিগত আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় স্বার্থের মিশ্রণ এখানে জটিল আন্তঃসীমান্ত গতিশীলতা তৈরি করেছে। এই অঞ্চল সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠেছে, যার প্রভাব পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে এখানে একটিও ভুল সিদ্ধান্ত বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। পরে দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই অনিশ্চয়তার নতুন অধ্যায়। গণতন্ত্রপন্থিরা ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি) গঠন করে। এর সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)। এটি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। দেশটি জড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে ভারতের সীমান্তবর্তী অনেক অংশের নিয়ন্ত্রণ হারায়। মণিপুর ও মিজোরামের সীমানায় অবস্থিত চিন রাজ্যে সিএনএ, সিডিএফ ও কেএনএর মতো জো জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে জান্তা বাহিনী। এসব গোষ্ঠী পিডিএফের মিত্র হিসেবে নিজেদের জো জনগণের প্রতিনিধি বলে দাবি করে থাকে।
চিন রাজ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর এর প্রভাব পড়ে ভারতে। মিজোরাম ও মণিপুরে শরণার্থী প্রবাহ শুরু হয়। মিজোরামে, যেখানে জো-জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাদের উষ্ণভাবে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু মণিপুরে জো ও নাগা দুটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জনগোষ্ঠী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে, শরণার্থী আগমনের ফলে রাজ্য জনসংখ্যার ভারসাম্য হারাচ্ছে। মেইতেই সম্প্রদায় অনুপ্রবেশকারী বহিষ্কারের দাবি তোলায় জো জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের উত্তেজনা বাড়ে।
২০২৩ সালের মে মাসে মেইতেই ও জো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ভয়াবহ জাতিগত সংঘাত শুরু হয়। পরবর্তী দুই বছরে প্রায় ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এতে মেইতেই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর পুনরুত্থানের আশঙ্কা তৈরি হয়। এই গোষ্ঠীকে এক সময় ভারত দমন করেছিল।
ভারতের মিয়ানমার সীমান্তে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর বহুমুখী প্রভাব রয়েছে। অনুপ্রবেশ, মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলাচল ঠেকাতে ভারত ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’-এর পরিসর সীমিত করেছে। ‘প্রটেকটেড এরিয়া রেজিম’ পুনর্বহাল করেছে। সীমান্তে কাঁটাতার নির্মাণ শুরু করেছে। তবে এই পদক্ষেপগুলো জো ও নাগা জনগণের ঐতিহ্যবাহী আন্তঃসীমান্ত সম্পর্ক ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে। 
ইম্ফলভিত্তিক এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব সিদ্ধান্তে মেইতেইদের মধ্যে সীমান্ত নিরাপত্তা ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তন ঠেকানো নিয়ে আশ্বাস তৈরি হলেও, জো ও নাগা জনগণের অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে। তা ছাড়া সীমান্ত অঞ্চলের বহু মানুষ অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল।
বিদ্রোহীদের মোকাবিলা
২০২৫ সালের মে মাস নাগাদ পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। নাগা বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগালিমের (এনএসসিএন-আইএম) অন্যতম নেতা ইকাটো চিশি সিউ মিয়ানমারে চলে যান। যেখানে তিনি এইচ এস রামসান ও অ্যাবসালম রামান নেতৃত্বাধীন কট্টরপন্থি একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীতে যোগ দেন বলে জানা যায়। এই পদক্ষেপ নাগা শান্তি আলোচনাকে বিপদের মুখে ফেলে। একই সঙ্গে নাগা সশস্ত্র সংগ্রামের পুনরুত্থান নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়।
এনএসসিএন-আইএম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী– যা নাগাল্যান্ডকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এরা ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারের নাগাল্যান্ড সীমান্তবর্তী এলাকায় সক্রিয়। ভারত থেকে স্বাধীনতার দাবিতে গঠিত হলেও, তারা ১৯৯৭ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে। বর্তমানে তারা বৃহত্তর নাগাল্যান্ড দাবি করছে, যেখানে আসাম, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত। তবে ওই তিন রাজ্যই এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছে।


২০২৪ সালে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) এক আদালতে দাবি করে, এনএসসিএন-আইএমের মিয়ানমারভিত্তিক চীন-মিয়ানমার মডিউল নিষিদ্ধ মেইতেই বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কাংলেই ইয়াউল কানবা লুপ (কেওয়াইকেএল) এবং পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) সহায়তা করে ভারতে অনুপ্রবেশ করাতে। যেন তারা জো জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারে। কেওয়াইকেএল এবং পিএলএ মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকাভিত্তিক সাতটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম। গোষ্ঠীগুলো ভারত থেকে আলাদা হতে চায়। মিয়ানমার ও বাংলাদেশে তাদের ঘাঁটি রয়েছে। 
এনআইএর এই অভিযোগে নাগা ও মেইতেই উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। এনএসসিএন-আইএমের দাবি, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কুকিদের পক্ষ নিচ্ছে। এরপর ভারত সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কিছুটা উন্নত হয়। তবে সিউর পদক্ষেপ আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। অন্যদিকে যুদ্ধবিরতির বিরোধিতাকারী এনএসসিএন-কে (ইয়ুং অং) এখনও মিয়ানমারের নাগা স্বশাসিত অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে। এই অঞ্চল ভারতের নাগাল্যান্ড ও চীনের ইউনান প্রদেশের সীমান্তঘেঁষা।
মিয়ানমারের সাগাইং, চিন ও রাখাইন রাজ্যে ভারতের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যারা প্রায়ই মিয়ানমারের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করে। জো জনগোষ্ঠীর মধ্যে কুকি ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) চিন ও সাগাইংয়ে সক্রিয়। এরা জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কাচিন ইন্ডিপেনডেন্স আর্মিকে (কেআইএ) সহযোগিতা করে। কেআইএর সঙ্গে এনএসসিএনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। কেএনএ ও কেআইএ উভয়েরই রাখাইনভিত্তিক আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
জোমি রেভলিউশনারি আর্মি (জেডআরএ) চিন ও সাগাইং অঞ্চল থেকে পরিচালিত হয় এবং মিয়ানমারের চিন ন্যাশনাল আর্মির (সিএনএ) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। সিএনএর সঙ্গে ভারতের মিজোরাম রাজ্যের মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের (এমএনএফ) ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ২০২৩ সালে লালদুহোমার জোরাম পিপলস মুভমেন্টের (জেডপিএম) কাছে ক্ষমতা হারায় এমএনএফ। এমএনএফেরও আরাকান আর্মির সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক রয়েছে।
অন্যদিকে জোমি রেভলিউশনারি অর্গানাইজেশন (জেডআরও), যা চিন রাজ্যে সক্রিয়, তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সহযোগিতা করে। মণিপুরি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন পিএলএ সাগাইংয়ে সক্রিয় এবং জান্তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী উলফা-ইন্ডিপেন্ডেন্টেরও (উলফা-আই) মিয়ানমারে ঘাঁটি রয়েছে। তারা বিদ্রোহবিরোধী কর্মকাণ্ডে জান্তা সরকারকে সহযোগিতা করে বলে জানা যায়।
ইম্ফলভিত্তিক সাংবাদিক প্রদীপ ফানজৌবমের মতে, মিয়ানমারে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ভারতীয় বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। অথচ সরকারের অবস্থান এখনও দ্বিধাগ্রস্ত। ‘আমরা নতুন নতুন সমীকরণ ও পুনর্গঠনের খবর পাচ্ছি,’ বলেন তিনি। ‘সরকার কী অনুমোদন করবে আর কী করবে না– তা এখনই ঠিক করতে হবে। অথচ এখনও আমরা সেই পুরোনো কৌশলই দেখছি। এক গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে আরেক গোষ্ঠীকে দমন করার খেলা।’
একসময় ভারত ও মিয়ানমার যৌথ সামরিক অভিযান চালিয়ে এনএসসিএন-কে, উলফা-আই, পিএলএ, জেডআরএ এবং কেএনএর ঘাঁটি ধ্বংস করেছিল। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়ায় এ ধরনের যৌথ অভিযানের সুযোগ কম। পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতাও সীমান্তবর্তী বিদ্রোহীদের দমন করতে বাংলাদেশের সহযোগিতার সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করে তুলেছে।
চীনা চ্যালেঞ্জ
ভারত-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা উষ্ণতা এলেও সীমান্ত পরিস্থিতি এখনও উত্তেজনাপূর্ণ। উভয় দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলএসি) পাশে সামরিক ও নাগরিক অবকাঠামো নির্মাণ করছে। চীন সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তসংলগ্ন অঞ্চলে ইয়ারলুং সাংপো নদীর ওপর ‘বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ’ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। ভারত আশঙ্কা করছে, এই বাঁধ ব্রহ্মপুত্র নদের পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতে পারে।
মিয়ানমার ও বাংলাদেশে কৌশলগত প্রভাব বিস্তারে চীনের পদক্ষেপগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। চীন বাংলাদেশে তিস্তা নদীর পানি ব্যবহারসহ নানা কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্পে জড়িত হতে চাইছে। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার চাইছে। মিয়ানমারে চীনের উপস্থিতি এতটাই বেড়েছে যে গণতন্ত্রপন্থিরা জান্তা সরকারকে ‘চীনা ক্রীড়নক’ বলেও আখ্যায়িত করছে। কিছুটা পশ্চিমা সমর্থনও পাচ্ছে তারা।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর (সিএমইসি) এখনও একটি মূল অগ্রাধিকার। কিয়াওকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দরসহ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে চীনের ভারত মহাসাগরে প্রবেশাধিকার আরও সহজ হচ্ছে। 
মিয়ানমার সরকার একটি আইন পাস করেছে– পাবলিক সিকিউরিটি সার্ভিসেস ল। এর মাধ্যমে মিয়ানমারে চীনা ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষায় চীনের নিরাপত্তা বাহিনী সক্রিয় হতে পারবে। এমনকি দেশটি চীনা নববর্ষকে জাতীয় ছুটি হিসেবেও স্বীকৃতি দিয়েছে।
সম্ভবত এরই প্রতিদানস্বরূপ চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ৯ মে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে মিয়ানমারের জান্তা নেতা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎ বোঝায়, চীন ও রাশিয়া তাদের পাশে রয়েছে। ভারতের এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, এই সাক্ষাৎ রাশিয়ারও চীনের সঙ্গে মিয়ানমার ইস্যুতে অবস্থান সাযুজ্যের ইঙ্গিত দেয়। চীন ও রাশিয়া দুটোই মিয়ানমার জান্তার অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ।
এর আগে চীন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেসি অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনসিএএ) শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের লাশিও শহরটি জান্তার কাছে হস্তান্তরের জন্য রাজি করায়। এই শহর চীনের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। চীন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে অনুরোধ করেছে, তারা যেন সিএমইসির রুটের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো থেকে দূরে থাকে। তবে জান্তা সরকারের প্রতি চীনের স্পষ্ট সমর্থন বিদ্রোহী ও গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর কাছে চীনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, মিয়ানমারের কিছু অংশে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে ক্রমশ। v

সৌজন্যে: আউটলুক ম্যাগাজিন, ১ জুন ইস্যু

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে জনগণের হিস্যা কোথায়
  • লন্ডন বৈঠকে অবিশ্বাস দূর, সরকারের সম্মানজনক প্রস্থানের পথ সুগম হবে: সাইফুল হক
  • বাজেটের ত্রুটি সংশোধনের আহ্বান
  • ড. ইউনূসকে দেশের কাজে যুক্ত রাখতে চায় বিএনপি
  • লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচনের মতো গুরুত্ব না পাওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক: এনসিপি
  • জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ইরানের প্রেসিডেন্ট
  • সহসাই রাজনীতির কালো মেঘ কেটে যাবে: ডা. জাহিদ  
  • চীনের উত্থান ও ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাস্তবতা
  • ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন মানবে না জনগণ’
  • ডিসেম্বরে নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করা সম্ভব: রুহিন হোসেন