নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে
Published: 25th, April 2025 GMT
নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর চলার পথে থাকা সংকটগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। এ লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বাধা দূর করতে নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। তাঁরা আরও বলেন, পরিবার থেকে বৈষম্য দূর করা ও রাজনীতিবিদদের জেন্ডার সংবেদনশীল হিসেবে গড়ে উঠতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা রোধে কনটেন্ট বিশ্লেষণের ওপর জোর দিতে হবে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। ‘দক্ষ সংগঠক গড়ে তুলি, সংগঠনকে সংহত করি’—এই স্লোগানের আলোকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। ‘বাংলাদেশের নারী আন্দোলন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ’, এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, তৃণমূল কর্মীদের ক্রমাগত কণ্ঠস্বর ধরে রাখার জন্য সংগঠনের কর্মতৎপরতা বেড়েছে। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীর চলার পথে থাকা সংকটগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে। সম্মিলিতভাবে নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্বেচ্ছাসেবার মনোভাবকে বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, জাতীয় ও বৈশ্বিক আন্দোলনের পরম্পরায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জন্ম। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চিন্তাচেতনার মধ্য দিয়েই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে। নারী-পুরুষের সমতার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমানে নারীর অবস্থার কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হলেও নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নে এখনো কিছু বিষয় মীমাংসিত নয়।
সমাজে প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো, প্রথা, আইন ও জীবনাচরণের কারণে এখনো নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, সম–অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথ মসৃণ নয় বলে মন্তব্য করেন সীমা মোসলেম। তিনি বলেন, পথে থাকা বিভিন্ন বাধা মোকাবিলায় নারী আন্দোলনকে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে কর্ম অধিবেশনে ‘নারী আন্দোলনের আগামী কর্মসূচি এবং চ্যালেঞ্জসমূহ’–এর ওপর ৬টি দলে ৫৫টি জেলা শাখার ২২৯ জন সংগঠক, তরুণী সংগঠক ও কর্মীদের অংশগ্রহণে দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় কাজ উপস্থাপন শেষে আলোচনা সভা হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ (কেয়া) বলেন, পরিবার থেকে আসা বাধা দূর করতে সমাজে নারী সংগঠকের ভূমিকা নিয়ে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক তানিয়া হক বলেন, পরিবার থেকে বৈষম্য দূর করার কাজ শুরু করতে হবে। রাজনীতিবিদদের জেন্ডার সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক প্রচারণা রোধে কনটেন্ট বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মতামত প্রকাশের প্রয়োজন আছে। প্রযুক্তিকে না ঠেকিয়ে ইতিবাচক ব্যবহার করতে হবে। নিজেদের সক্রিয় রাখতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হবে এবং প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুসারে তথ্যের ব্যবহার যথাযথভাবে করতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন স গঠন র দ র কর স গঠক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ।
আগামী ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট এই কর্মসূচিগুলো অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনে থাকছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিপ্লবী নাটক, গান, কবিতা, আলোচনা সভা ও বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। কর্মসূচির সূচনা হবে ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর ৫টায় প্রতীকী সাইকেল র্যালির মাধ্যমে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গণভবন পর্যন্ত যাবে।
আরো পড়ুন:
মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপকে চলছে বেরোবি
তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
সকাল ৯টায় টিএসসিতে থাকবে সাধারণ নাস্তার আয়োজন। এর পরপরই প্রদর্শিত হবে ‘জুলাই বিপ্লব’ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে বিপ্লবী গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে । সকাল ১০টা থেকে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মুখে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা শোনার আয়োজন থাকবে।
দুপুর ২টায় একটি মাইম পরিবেশনা ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা ও সাড়ে ৫টায় পরপর আরো দুটি নাটক প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে গণআন্দোলনে নিহতদের উত্তরাধিকার ও আত্মিক উপস্থিতিকে ঘিরে আলাপ-প্রতিআলাপের একটি রূপক পরিসর গড়ে উঠবে ।
৬ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতেই থাকবে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলোচনা সভা। সকাল ১০টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের ১ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন’ বিষয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলাম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পর্দা নামবে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির।
কর্মসূচির তৃতীয় দিন ৭ আগস্ট দিনব্যাপী চলবে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সেখানে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট নানা দলিল, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণজাগরণ ও ছাত্র প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। সেই ঘটনার স্মরণে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণের প্রয়াসে ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা আয়োজন করতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।”
তিনি বলেন, “এ আয়োজন হবে শিল্প, সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার এক সংমিশ্রণ। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সেই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।”
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী