ব্যাংকের তহবিল নিজ বা অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে ব্যবস্থা
Published: 26th, April 2025 GMT
কোনো ব্যাংকের সুবিধাভোগী মালিক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের সম্পদ বা তহবিল নিজেদের স্বার্থে এবং প্রতারণামূলকভাবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহার করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই ব্যাংককে রেজল্যুশন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। রেজল্যুশনের মানে হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা।
এ–সংক্রান্ত অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে দুর্বল যেকোনো ব্যাংকে অস্থায়ী প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে। শুধু তা–ই নয়, ওই ব্যাংকের বিদ্যমান শেয়ারধারক বা নতুন শেয়ারধারকদের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি বাড়াতে এবং প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার, সম্পদ ও দায় তৃতীয় পক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারবে।
এসব বিষয় যুক্ত করে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। কিছুদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে অধ্যাদেশটি জারি হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
খসড়া অনুমোদনের তথ্য জানিয়ে ১৭ এপ্রিল এ বিষয়ে ব্রিফ করেছেন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, একটি শিল্পগোষ্ঠী কয়েকটি ব্যাংকের ওপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে অনেক টাকা দেশ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ আর না হয়, সে জন্যই ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যাংক ও করপোরেট খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি বাড়বে, আমানতকারীদের স্বার্থও সংরক্ষণ করা যাবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে, কোনো ব্যাংক আর কার্যকর নয় বা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই, দেউলিয়া হয়ে গেছে বা দেউলিয়া হওয়ার পথে রয়েছে এবং আমানতকারীদের পাওনা দিতে পারছে না বা না দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তখন সেটিকে ভালো করার স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এ অধ্যাদেশ পাসের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি পাস হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আস্থা আরও মজবুত হবে। আমরা মনে করি, আগে এটি চালু হোক। পরে চাইলে সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবে।সেলিম আর এফ হোসেন, চেয়ারম্যান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)।বর্তমানে দুর্বল কোনো ব্যাংকের পরিচালনা বা অবসায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে। অধ্যাদেশটি পাস হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি আলাদা বিভাগ গঠনের কথাও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে।
ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ও কার্যকর পরিচালনা অব্যাহত রাখতে এক বা একাধিক ব্রিজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ রাখা হয়েছে অধ্যাদেশে। পরে সেগুলোকে তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বোচ্চ দুই কার্যদিবসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো দুর্বল ব্যাংকের সব ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে। আর আংশিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমও স্থগিত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে তিন মাসের জন্য।
এ নিয়ে ব্যাংকের মালিকপক্ষের সমিতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রয়েছেন। কয়েক দিনের মধ্যে এ অধ্যাদেশের বিষয়ে বিএবির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন।
ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল নামে ৬ সদস্যের একটি আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা গঠনের কথাও বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। এ কাউন্সিল সংকট ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আপৎকালীন বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করবে। কাউন্সিলের প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। অধ্যাদেশের প্রথম খসড়ায় কাউন্সিলের পাঁচ সদস্যের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান, অর্থসচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনজন ডেপুটি গভর্নরকে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদিত অধ্যাদেশে একজন ডেপুটি গভর্নর কমিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটির অবসায়নে আদালতে আবেদন করবে। আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোনীত কাউকে অবসায়ক নিয়োগ দেবে। অবসায়ন আদেশ কার্যকর হওয়ার পর কোনো ব্যাংকের দায়ের ওপর সুদ বা অন্য কোনো মাশুল কার্যকর হবে না।
ব্যাংক স্বেচ্ছায় অবসায়নের প্রক্রিয়ায় যেতে পারবে বলেও খসড়ায় বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে না। লাইসেন্স প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে আমানত এবং দুই মাসের মধ্যে অন্যান্য দায় পরিশোধ করতে হবে।
যেসব ব্যক্তির কর্ম, নিষ্ক্রিয়তা ও সিদ্ধান্তের কারণে কোনো ব্যাংক ব্যর্থ হয় এবং ব্যাংকের ক্ষতি হয়, তাঁরা এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। অধ্যাদেশের আওতায় জারি হওয়া বিধিবিধান অমান্যকারীদের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। প্রাথমিক খসড়ায় তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এর বদলে যুক্ত করা হয়েছে প্রতিদিনের দেরির জন্য ৫ হাজার টাকা করে বাড়তি জরিমানা।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ অধ্যাদেশ পাসের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি পাস হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আস্থা আরও মজবুত হবে। আমরা মনে করি, আগে এটি চালু হোক। পরে চাইলে সরকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে পারবে।’
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি মিশন ৮ এপ্রিল ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশের খসড়া নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে। বিভাগটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বাস্তবতায় এটি করার যৌক্তিকতা কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বলা হয়, ব্যাংক খাত সংকট ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই থাকে তাহলে লাভ কী হবে। কয়েক বছরে দেশের ব্যাংক খাতে যে সুশাসনের ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে নিয়ন্ত্রণমুক্ত ও স্বাধীন কোনো কাউন্সিল গঠন করাই ভালো হবে। উপদেষ্টা পরিষদ অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনেই কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট ক র যকর অন ম দ খসড় য় হওয় র ধ করত
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কারের একাল-সেকাল
ওয়ান-ইলেভেনকালে জরুরি অবস্থার গর্ভে জন্ম নেওয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে ‘সংস্কারের জিগির’ তোলা হয়েছিল। সে সংস্কারের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে চিহ্নিত।
দল দুটির যেসব নেতা ওই তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তারা ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত হন। এক পর্যায়ে ‘সংস্কারপন্থি’ শব্দটিই রাজনৈতিক গালিতে পরিণত হয়।
সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। ২০০৭ সালের নিন্দিত ‘সংস্কার’ ২০২৪ সালে এসে নন্দিত ‘সংস্কার’ হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, লন্ডভন্ড নির্বাচন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আর যাতে কোনো দল সরকারে গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থার ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায় এবং এ জন্য পর্যাপ্ত সময় ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
ধারণা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানকে গণমুখী করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করতে বিধিবিধান পরিবর্তনের মধ্যেই সংস্কার কার্যক্রম সীমিত রাখবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অস্ত্রোপচার করে রাষ্ট্রের আকার-আকৃতি, চেহারা-সুরত পাল্টে দেওয়ার এক মহাযজ্ঞের সূচনা করেছে। গঠন করেছে ছোট-বড় ১১টি সংস্কার কমিশন: সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য খাত, শ্রম, নারীবিষয়ক, স্থানীয় সরকার এবং গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। আবার এসব বিষয়ে যাতে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য গঠন করা হয় ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।
সন্দেহ নেই, জাতীয় স্বার্থে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। সাধারণত প্রয়োজনের নিরিখে সে ঐক্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রয়োজনে। এবারও দেশকে আক্ষরিক অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে এমনিতেই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। সে জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার প্রয়োজন কেন হলো, বোধগম্য নয়।
গঠিত ১১টি কমিশনের বেশ কয়েকটি তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। সেসব প্রস্তাব নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবগুলোর কিছু বিষয়ে সবাই একমত হলেও অধিকাংশ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষত একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বা একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা না হওয়ার যে প্রস্তাব সংস্কার কমিশন করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর হাত-পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার শামিল। কেননা, একটি দল সরকারে গেলে সরকারপ্রধান, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান কে হবেন বা থাকবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দলের গঠনতান্ত্রিক বিষয়। রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিয়ন্ত্রিত। নতুন করে রাজনৈতিক বিধিবিধান গণতন্ত্র বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পেশ করেছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে কয়েকটি সংগঠন। ১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি প্রস্তাবনার একটিতে জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য মোট আসন ৬০০ করে ৩০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখার সুপারিশকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক মনে করছেন অনেকে। কেননা, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিলোপের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনই পরবর্তী সময়ে রূপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে।
এটা বলা অসমীচীন নয়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্তরে কোটা পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে প্রত্যাখ্যাত কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের সুপারিশ নারী কমিশন কেন করল, বোধগম্য নয়। তা ছাড়া এ ধরনের কোটা নারীদের জন্য অবমাননাকর নয় কি? জাতীয় সংসদে নারীদের কোটায় আবদ্ধ রাখার অর্থ তাদের অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করা। অথচ আমাদের দেশের নারীরা এখন রাষ্ট্র ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম।
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আমাদের গ্রামের মাথার বাস স্টপেজকে কেন্দ্র করে একটি ছোট্ট বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে আজিমের চায়ের দোকানে প্রায়ই আড্ডা জমে। ঢাকা থেকে গেলে আমিও অংশীজন হই। সেদিনও সে আড্ডায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিল। কবে সংস্কার শেষ হবে, কবে নির্বাচন হবে– তা নিয়ে একেকজন তাদের জ্ঞানগর্ভ অভিমত ব্যক্ত করছিলেন। এরই মধ্যে কলেজপড়ুয়া এক কিশোর ফোড়ন কেটে বলল, এর পর হয়তো সরকার ‘জাতিসংঘ সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বলবে, নির্বাচন ওই সংস্কারের পর। ছেলেটির কথায় হাসির ফোয়ারা ছুটল আসরে। কারও কারও কাপ থেকে ছলকে পড়ে গেল কিছুটা চা।
মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক