ডাকসু নির্বাচন ৩ মাসের মধ্যে হলে গ্রহণযোগ্য হবে, মত বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর
Published: 26th, April 2025 GMT
আগামী তিন মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজন করলে সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে—এই মতামত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর। ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করলে সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য হবে।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত ‘পরামর্শক কমিটির’ করা এক জরিপে শিক্ষার্থীরা এ মতামত দিয়েছেন।
আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা১৫ জানুয়ারি ২০২৫ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল গত ২৩ মার্চ এ জরিপ শুরু করে। ৬ এপ্রিল পরামর্শক কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয় জরিপের ফলাফল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থী নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জরিপে অংশ নেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৩০৭ জন শিক্ষার্থী পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২৭৯ জন শিক্ষার্থী বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন আগামী ৬ মাসের মধ্যে হলে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে। এক বছরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৫ জন শিক্ষার্থী। আর ৬২ জন মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন এক বছরেরও পরে আয়োজন করলে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে।
জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। একদম অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন ৩১ জন।
আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ, মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন১৫ এপ্রিল ২০২৫শান্তিপূর্ণ আর নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দিয়েছেন ৯০৩ জন শিক্ষার্থী। ভোট নেওয়া এবং গণনা পুরোপুরি ডিজিটাল করার পক্ষে মত রয়েছে ৩০৯ জন শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পক্ষে ২৫৯ জন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পূর্বসম্মতি ও সংলাপের পক্ষে ২৪৫ জন শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন।
‘ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কোথায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে’—এমন প্রশ্নে আগে থেকে বাছাই করা কিছু একাডেমিক ভবনে (যেমন কার্জন হল, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন) ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬০ জন শিক্ষার্থী। হল আর একাডেমিক ভবন মিলিয়ে উভয় জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন ৩৯৪ জন শিক্ষার্থী। ৩০৫ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে।
আরও পড়ুনজুনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের১৬ এপ্রিল ২০২৫প্রার্থিতা দাখিলের দিন থেকে কমপক্ষে এক বছর বৈধ ছাত্রত্ব থাকবে—এমন যেকারও প্রার্থী হওয়ার পক্ষে ৭২৫ জন শিক্ষার্থীর মত রয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটা সিজিপিএ থাকা, বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ফৌজদারিসহ নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়ার বিধান রাখার কথাও জরিপে জানান শিক্ষার্থীরা।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় ছাত্র-শিক্ষক যৌথভাবে কমিশন নির্ধারণের কথা বলেছেন ১ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের পক্ষেও জরিপে মত এসেছে।
আরও পড়ুনডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে যেসব প্রস্তাব দিল ছাত্রদল১৫ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন শ ক ষ র থ মত দ য় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নারীদের নিয়ে বারে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আচরণ, আমিরাতের ক্ষোভে রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিচ্ছে ইসরায়েল
সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) এক পানশালায় ‘অমর্যাদাকর’ আচরণের জেরে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে হিব্রু সংবাদমাধ্যমের এক খবরে জানা গেছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ টেলিভিশনের প্রতিবেদনে গতকাল মঙ্গলবার বলা হয়েছে, আবুধাবি কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে তারা আর ওই রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এরপরই তেল আবিব সরকার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশটি থেকে রাষ্ট্রদূত ইয়োসি আব্রাহাম শেলিকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর আগে হিব্রু সংবাদমাধ্যম এন১২ বলেছে, শেলি কয়েকজন ইসরায়েলিকে নিয়ে আমিরাতের একটি বারে হাজির হন এবং এমন আচরণ করেন, যা আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ‘অগ্রহণযোগ্য ও মর্যাদাহানিকর’ বলে ইসরায়েলকে জানান। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গীদের মধ্যে নারীরাও ছিলেন।
২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত আব্রাহাম চুক্তির আওতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের তুমুল সমালোচনা চললেও আবুধাবি এখনো দেশটির ঘনিষ্ঠতম আরব মিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
গাজা যুদ্ধ শুরুর পর এখন পর্যন্ত ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে একমাত্র আরব দেশে সফর করতে পেরেছেন, তা হলো আরব আমিরাত। গত জানুয়ারিতে গাজায় এক সাময়িক যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সার আমিরাত সফর করেন।
শেলির বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ আমিরাতের নজিরবিহীন এক পদক্ষেপ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র এক কোটি জনসংখ্যার এ দেশের ৯০ শতাংশ মানুষই আমিরাতি নন। দেশটিতে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রমিক, ব্রিটিশ অভিবাসী, রুশ ধনকুবের ও অন্য প্রভাবশালীদের উপস্থিতি রয়েছে। আর দুবাই উপসাগরীয় অঞ্চলের নৈশকালীন বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
গত সপ্তাহে হিব্রু গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে আবুধাবিতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেড়াতে গিয়ে শেলি এমন ‘অমর্যাদাকর’ আচরণ করেন, যা ব্যক্তি পরিসরের সীমা অতিক্রম করে। এর আগে তিনি ব্রাজিলে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এবং সেখানে দুটি বিতর্কিত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
এক ঘটনায় শেলি ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারোর সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সেই ডিনারের ছবিতে দেখা যায়, টেবিলে একটি লবস্টার কালো মার্কার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ইহুদি খাদ্যবিধি অনুযায়ী ঝিনুক–জাতীয় খাবার নিষিদ্ধ।
২০২৩ সালে হারেৎজ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, এক ব্রাজিলীয় নারীর ভিসা–সংক্রান্ত আবেদনের জবাবে শেলি নিজে ই-মেইল ও ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, ইসরায়েলের ভিসা পেতে হলে ওই নারীকে তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে হবে। পরে ওই নারী বলেন, এক ভিডিও কলে তিনি দেখেন, শেলি বিছানায় অর্ধনগ্ন অবস্থায় শুয়ে আছেন।
‘আমি যখন ক্যামেরা চালু করলাম, দেখি তিনি বিছানায় শুয়ে ঘামছেন। বললেন, তিনি হাঁটাহাঁটি করে ফিরেছেন। খুবই অনুচিত ছিল ব্যাপারটা। আমি বলি, পরে কথা বললে হয় না? উনি বলেন, ‘‘না, এখনই বলি।’’ এরপর ব্যক্তিগতভাবে দেখা করার কথা বলেন ও ব্রাসিলিয়ায় রাতের খাবারের আমন্ত্রণ জানান। আমি ভীষণ চাপে ও অস্বস্তিতে পড়ে যাই’, বলেন ওই নারী।
পরে শেলিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মহাপরিচালক পদে নিযুক্ত করা হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তাঁকে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
তখন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘ইয়োসি ব্রাজিলে অত্যন্ত দক্ষ রাষ্ট্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি শুধু ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই নন, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন দায়িত্ব পালন করেছেন।’