আগামী তিন মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজন করলে সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে—এই মতামত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর। ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে, এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করলে সর্বাধিক শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য হবে।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন সফলভাবে আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত ‘পরামর্শক কমিটির’ করা এক জরিপে শিক্ষার্থীরা এ মতামত দিয়েছেন।

আরও পড়ুনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা১৫ জানুয়ারি ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল গত ২৩ মার্চ এ জরিপ শুরু করে। ৬ এপ্রিল পরামর্শক কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয় জরিপের ফলাফল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৭৪৩ জন শিক্ষার্থী নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইলে ৮টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে জরিপে অংশ নেন।

জরিপে অংশগ্রহণকারী ১ হাজার ৩০৭ জন শিক্ষার্থী পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ২৭৯ জন শিক্ষার্থী বলেছেন, ডাকসু নির্বাচন আগামী ৬ মাসের মধ্যে হলে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে। এক বছরের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৯৫ জন শিক্ষার্থী। আর ৬২ জন মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন এক বছরেরও পরে আয়োজন করলে শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করছেন। একদম অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন ৩১ জন।

আরও পড়ুনডাকসু নির্বাচনের পথনকশা প্রকাশ, মে মাসের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন গঠন১৫ এপ্রিল ২০২৫

শান্তিপূর্ণ আর নিরপেক্ষ ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিশ্চিত করার বিষয়ে মত দিয়েছেন ৯০৩ জন শিক্ষার্থী। ভোট নেওয়া এবং গণনা পুরোপুরি ডিজিটাল করার পক্ষে মত রয়েছে ৩০৯ জন শিক্ষার্থীর। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পক্ষে ২৫৯ জন এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে পূর্বসম্মতি ও সংলাপের পক্ষে ২৪৫ জন শিক্ষার্থী মত দিয়েছেন।

‘ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কোথায় ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে’—এমন প্রশ্নে আগে থেকে বাছাই করা কিছু একাডেমিক ভবনে (যেমন কার্জন হল, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন) ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬০ জন শিক্ষার্থী। হল আর একাডেমিক ভবন মিলিয়ে উভয় জায়গায় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন ৩৯৪ জন শিক্ষার্থী। ৩০৫ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে।

আরও পড়ুনজুনের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের১৬ এপ্রিল ২০২৫

প্রার্থিতা দাখিলের দিন থেকে কমপক্ষে এক বছর বৈধ ছাত্রত্ব থাকবে—এমন যেকারও প্রার্থী হওয়ার পক্ষে ৭২৫ জন শিক্ষার্থীর মত রয়েছে। এ ছাড়া প্রার্থীতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম একটা সিজিপিএ থাকা, বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ফৌজদারিসহ নির্দিষ্ট কিছু অপরাধে অভিযুক্ত না হওয়ার বিধান রাখার কথাও জরিপে জানান শিক্ষার্থীরা।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় ছাত্র-শিক্ষক যৌথভাবে কমিশন নির্ধারণের কথা বলেছেন ১ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নির্ধারণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে কমিশন গঠনের পক্ষেও জরিপে মত এসেছে।

আরও পড়ুনডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনে যেসব প্রস্তাব দিল ছাত্রদল১৫ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জন শ ক ষ র থ মত দ য় ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী

প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূ‌সের স‌ঙ্গে বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমা‌নের বৈঠ‌ককে স্বাভা‌বিক বল‌লেও, দুইজ‌নের যৌথ বিবৃতি‌ নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে‌ছে জামায়া‌তে ইসলামী। 

শ‌নিবার জামায়া‌তের নির্বাহী প‌রিষ‌দের বৈঠ‌কের পর বিবৃ‌তি‌তে দল‌টি ব‌লে‌ছে, ‘যৌথ বিবৃ‌তি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’

দ‌লের আ‌মির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে বিবৃ‌তি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে। এ‌তে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের স‌ঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা‌কে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’

লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তি নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে জামায়াত ব‌লে‌ছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপ‌দেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ড‌ন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত ম‌নে ক‌রে। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন ক‌রে।’

‌লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তিতে মধ্য ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের সম্ভাবনার কথা বলা হ‌য়ে‌ছে। জামায়াত এ প্রস‌ঙ্গে বিবৃ‌তি‌তে ব‌লে‌ছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপ‌দেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’

জামায়াত ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের বি‌রোধী নয় বিবৃ‌তি‌তে স্পষ্ট করা হয়। এ‌তে বলা হ‌য়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আ‌মির দলীয় দৃ‌ষ্টিভঙ্গী তু‌লে ধ‌রে জা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন ২০২৬ সালের রসজা‌নের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’ 

বিবৃ‌তিতে বলা হ‌য়ে‌ছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ‌বিবৃ‌তি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা ক‌রে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য  নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠ‌কের দিন জামায়াত আনুষ্ঠা‌নিক প্রতি‌ক্রিয়া না জানা‌লেও দল‌টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছি‌লেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’

জামায়াত নেতারা শুক্রবার রা‌তেই সমকাল‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে কী আলোচনা হলো
  • প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে
  • একটি দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী
  • একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে: জামায়াত
  • লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কিত বক্তব্যে দ্বিমত প্রিন্সের