পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ভারতকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে তাঁর দল যেমন একটি বিতর্কিত খাল প্রকল্প হতে দেয়নি, ঠিক একইভাবে পাকিস্তানের জনগণ সিন্ধু নদের ওপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন ও এর সমুচিত জবাব দেবেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার বিকেলে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয় দিল্লি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিলাওয়াল গতকাল শুক্রবার ওই হুঁশিয়ারি দেন।

সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তেরও নিন্দা জানান বিলাওয়াল ভুট্টো। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিন্ধু আমাদের ও এটি আমাদেরই থাকবে—এর ওপর দিয়ে হয় আমাদের পানি, নয় তাদের রক্ত বইবে।’

সুক্কুরে এক জনসমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বিলাওয়াল বলেন, তাঁদের শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের সফলতা হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার কাউন্সিল অব কমন ইন্টারেস্টের (সিসিআই) ঐকমত্য ছাড়া সিন্ধুতে কোনো খাল নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময় উপস্থিত জনতাকে অভিনন্দন জানান তিনি।

বিলাওয়াল জানান, পিপিপি ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজ (পিএমএল–এন) একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছে। এতে উভয় দলের নেতাদের স্বাক্ষর রয়েছে।

বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারতের অবৈধভাবে দখল করা জম্মু ও কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। নয়াদিল্লি এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। পাকিস্তান জোরালোভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়। পাকিস্তানই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।’

‘পাকিস্তান সরকারের এখন আনুষ্ঠানিক নীতি, সব প্রাদেশিক সরকারের পারস্পরিক সম্মতি ছাড়া কোনো নতুন খাল খনন করা হবে না’, বলেন পিপিপির চেয়ারম্যান। বিতর্কিত খাল নির্মাণ প্রকল্পের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করায় পিপিপির কর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

আরও পড়ুনপারমাণবিক অস্ত্রে এগিয়ে পাকিস্তান, সার্বিক সক্ষমতায় ভারত৩ ঘণ্টা আগে

বিলাওয়াল বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আমরা সিন্ধু রক্ষা করব। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের হুমকি থেকে সিন্ধু রক্ষা পেয়েছে। এটা আপনাদের বিজয়।’

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক বৈঠক ও সেখানে ঐকমত্যে পৌঁছানোর প্রসঙ্গ তুলে ধরে পিপিপির চেয়ারম্যান ইঙ্গিত দেন যে কেন্দ্রীয় সরকার ওই প্রকল্প সিসিআইয়ের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘আমরা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের (জনগণের) উদ্বেগের কথা শুনেছেন। এখন কাউন্সিলের বেশির ভাগ দল—পিএমএলএন ও পিপিপি সম্মত হয়েছে, আপনাদের সম্মতি ছাড়া সিন্ধুতে কোনো খাল নির্মাণ করা হবে না’, বলেন বিলাওয়াল।

আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কতটা গড়াতে পারে২৪ এপ্রিল ২০২৫

‘নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই মোদির এ উদ্যোগ’

সমাবেশে বিলাওয়াল ভুট্টো আরও বলেন, ‘সিন্ধু আরেকবার আক্রমণের শিকার—এখন ভারতের মাধ্যমে।’

বিলাওয়াল বলেন, ‘ভারতের অবৈধভাবে দখল করা জম্মু ও কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। নয়াদিল্লি এ জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে।’ তিনি গুরুত্বের সঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তান জোরালোভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানায়। পাকিস্তানই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।’

নিজের ব্যর্থতাগুলো ঢাকতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের ওই ঘটনায় অযথাই পাকিস্তানকে দায়ী করছেন অভিযোগ করে বিলাওয়াল বলেন, ওই ঘটনার পর ভারত একপক্ষীয়ভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করেছে।

বিলাওয়াল এই কঠিন সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও ভারতকে সমুচিত জবাব দেওয়া আহ্বান জানান। বলেন, ‘ভারত এখন সিন্ধুর ওপর শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছে। ভারত তার একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সিন্ধু নদকে রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম চলবে।’ এ ইস্যুতে পিপিপি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পাশে থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।আরও পড়ুনসীমান্তে গোলাগুলি, ফিরছেন ভিসা বাতিল হওয়া নাগরিকেরা ১৫ ঘণ্টা আগে

বিলাওয়াল বলেন, ‘সিন্ধুতে কোনো খাল নির্মাণ না করার জন্য পিপিপি যেমন শহর ও দেশজুড়ে কণ্ঠ সোচ্চার করে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজি করিয়েছে, ঠিক তেমনি আরেকবার সংগ্রাম করতে হবে। পাকিস্তানের জনগণ সাহসী—আমরা ভারতের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে দাঁড়াব এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সীমান্তে উপযুক্ত জবাব দেবে।’

‘ভারত এক দিনে সিন্ধু পানি চুক্তিকে আর স্বীকৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল—এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তো নয়ই, পাকিস্তানের জনগণের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়’, বলেন পিপিপির এই নেতা।

আরও পড়ুনভারত কি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ আটকে দিতে পারবে১৫ ঘণ্টা আগে

বিলাওয়াল এই কঠিন সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ও ভারতকে সমুচিত জবাব দেওয়া আহ্বান জানান। বলেন, ‘ভারত এখন সিন্ধুর ওপর শ্যেন দৃষ্টি দিয়েছে। ভারত তার একতরফা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সিন্ধু নদকে রক্ষায় আমাদের সংগ্রাম চলবে।’ এ ইস্যুতে পিপিপি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পাশে থাকবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

আরও পড়ুনভারতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তানের সিনেটে প্রস্তাব পাস২১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র য় আম দ র র ওপর ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: