লালমনিরহাটে তিস্তা সড়ক সেতুর টোল প্লাজায় হামলা ও কর্মীদের মারধর করে ক্যাশবাক্স থেকে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে করা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজন হলেন সদর উপজেলার পশ্চিম গুড়িয়াদহ গ্রামের মো. আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৮) ও মোস্তফি এলাকার হাসানুল ইসলাম (৪০)।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবী বলেন, তিস্তা টোল প্লাজায় মারধরের ঘটনায় মামলার এজাহারনামীয় দুজন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে টোল প্লাজায় হামলা, ভাঙচুর ও ক্যাশবাক্স থেকে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে একটি মামলা করেন টোল আদায়ে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রানা কনস্ট্রাকশনের পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য ও রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি মো.

নাজমুল আলম। গত বুধবার রাতে টোল প্লাজায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে টোল প্লাজার পাঁচ কর্মী আহত হন।

মামলায় টোল না দেওয়া নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে মাহফুজার রহমান ওরফে রাজু (৪০) নামের স্থানীয় এক বিএনপি নেতার নেতৃত্বে ওই হামলা করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। অভিযুক্ত মাহফুজার রহমানের বাড়ি সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোস্তফি এলাকায়। তিনি গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

পাল্টা মামলায় আসামি ৮ জন

তিস্তা সড়ক সেতুর টোল প্লাজায় গত বুধবার রাতে মারধরের মামলার প্রধান আসামি মাহফুজার রহমান পাল্টা মামলা করেছেন। এতে হামলায় আহত টোল প্লাজার কর্মী সুরুজ্জামান, জুয়েল ইসলামসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে লালমনিরহাট সদর থানায় তিনি মামলাটি করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মাহফুজার রহমান লালমনিরহাট তিস্তা পার্কের পরিচালক। তিনি সেখানে যাতায়াতের জন্য মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। কিন্তু তাঁকে তিস্তা সেতু পার হতে হয় না।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, তিস্তা টোল প্লাজায় কর্মরত সুরুজ্জামান, জুয়েল ইসলামসহ মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা টোল চাওয়ার অজুহাতে মাঝেমধ্যেই তাঁর সঙ্গে অনৈতিক আচরণ করেন। গত বুধবার সন্ধ্যায় আলু বিক্রির ১৫ লাখ ১০ হাজার ৫৫০ টাকা ব্যাগে করে তিস্তা পার্কে যাওয়ার সময় টোল প্লাজায় কর্মরত আসামিরা তাঁর পথরোধ করেন। এ সময় তাঁর কাছে অন্যায়ভাবে টোল দাবি করা হয়। এ সময় তর্কবির্তকের একপর্যায়ে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। একপর্যায়ে টাকাভর্তি ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরনবী আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্য অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুনতিস্তা সেতুর টোল প্লাজায় বিএনপি নেতার নেতৃত্বে হামলা, আহত ৫, ১৪ লাখ টাকা ছিনতাই২৪ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত নেতা গ্রেপ্তার

সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে চাঁদা নেওয়ার ঘটনায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম ওরফে অপুকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে জানে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতাসহ আটক ৫২৬ জুলাই ২০২৫

মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম জড়িত।

গত ১৭ জুলাই গুলশানে আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদসহ কয়েকজন। তাঁরা শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সিদ্দিক আবু জাফর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেন। গত শনিবার রাতে চাঁদার বাকি টাকা আনতে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে রাজ্জাকসহ পাঁচজন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। বাকি চারজন হলেন ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজন। ঘটনাটিতে গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলার এজাহারে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনের বাইরে অপু নামের একজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক চার আসামিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আর প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আরেকজনকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন আদালত।

আরও পড়ুনপ্রথমে পুলিশ নিয়ে বাসায়, পরে হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেন বৈষম্যবিরোধী নেতারা ২৮ জুলাই ২০২৫

রাজ্জাক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও আবদুর রাজ্জাক উভয়কে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রাজ্জাকসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রাজ্জাক তাঁর বাড্ডার ভাড়া বাসায় (মেস বাসা) রাখেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা গতকাল বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুনচাঁদাবাজির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ জন ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ২ জন বহিষ্কার২৬ জুলাই ২০২৫

এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজ্জাকের একটি ভাড়া বাসা থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ৪টি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। এটি বাসাটি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় অবস্থিত বলে গতকাল জানায় গুলশান থানা–পুলিশ।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে।

আরও পড়ুনসমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি: আবদুর রাজ্জাকসহ চারজন সাত দিনের রিমান্ডে২৭ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ